পটুয়াখালীর কৃষকরা আমন ধানের বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত থাকলেও টানা বর্ষায় ৩৫০ হেক্টর জমির বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। দুই মাস টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বীজে পচন ধরে। কৃষকরা নতুন করে বীজ কিনে ও উঁচু জমিতে চাষ করছেন। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চলতি মৌসুমে আবারও টানা বর্ষার আশঙ্কায় তাদের ক্ষতির পরিমাণ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত বীজ সংগ্রহ করে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলছে।
কৃষকরা বলছেন, এ রকম বৃষ্টি তারা কখনো দেখেননি। যেসব বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছিল, সেগুলোও পচে শেষ হয়ে গেছে। তাই নতুন করে আবার উঁচু স্থানে বীজ করে এবং চড়া দামে বীজ কিনে খেতে বপন করতে হচ্ছে অনেক কৃষককে। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। চলতি মৌসুমে আবারও টানা বর্ষা হলে রোপা আমন চাষে আরও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। ফলে এ বছর চাষের খরচ ওঠানোই কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক হানিফ হাওলাদার বলেন, ‘যে সময়ে পানির দরকার, সে সময়ে পানি পাই না। আবার এখন যে পানি উঠে আছে, তাতে কোনো রকমে বীজতলা তৈরি করছি। যদি বেশি বৃষ্টি হয়, তাহলে বপন করা বীজ পচে গেলে আমরা কৃষকরা মাঠে মারা যাব।’
অপর কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘কোলায় এখনো যে পানি আছে, তাতে বীজ রোপণ করা যায়। তবে যদি আবার বৃষ্টি হয়, তাহলে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে।’
চলতি মৌসুমে লাগাতার বৃষ্টিপাতের কারণে আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে ৫ কোটি ১৯ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়তি বীজতলা রয়েছে, তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে কৃষকদের এ ঘাটতি পূরণ করা হবে। সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার আশা করছেন কর্মকর্তারা।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পটুয়াখালীতে পরিসংখ্যানমতে একটানা ১ মাস ১১ দিন ভারী বৃষ্টি হয়েছে। আবার ১৪-১৫ দিন আগে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। যার ফলে কৃষকের যখন আমন লাগানোর কথা ছিল, ওই সঠিক সময়ে মাঠে নামতে পারেননি। তবে আগামী ১০ দিন যদি কৃষকরা মাঠে পুরোদমে কাজ করেন এবং যারা বাড়তি বীজ নিয়ে সহায়তা করেন, তাহলে তাদের যে ঘাটতি হয়েছে তা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’
চলতি মৌসুমে পটুয়াখালী জেলায় ১ লাখ ৯০ হাজার ১১৯ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে, তার মধ্যে ৩৫০ হেক্টর জমির বীজতলায় পচন ধরে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ৫ কোটি ১৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।