সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অসংখ্য ফসলি জমিতে বালু ও পলি মাটির স্তূপে ঢেকে গেছে। ওই জমিগুলো চাষাবাদের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় আছেন।
জানা গেছে, বন্যায় পতনঊষার, মুন্সিবাজার, আদমপুর, আলীনগর ও শমসেরনগর এলাকায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর আমন, ১০০ হেক্টর আউশ ফসল ও এক হাজার হেক্টর সবজি খেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে উপজেলার ছয় হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
পতনঊষার এলাকার ভূমিহীন কৃষক জয়নুল মিয়া বলেন, ‘জমি বর্গা নিয়ে চাষ করি। ঘর ভেসে গেছে ও ধানখেত বালুতে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ত্রাণের জন্য অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার কিছুই করার নেই।’
দক্ষিণ গোলেরহাওড়ের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘৬০ শতক জমিতে আমনের চাষ করেছিলাম। কয়েক দিন আগে ফসলের মাঠে সবুজের ঢেউ আমাকে আনন্দ দিয়েছিল। কিন্তু এখন সব এলোমেলো হয়ে গেছে।’ তিনি জানান, এবারের বন্যা ফসলের মাঠ পানিতে নষ্ট হওয়ায় বাতাসে উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষকদের নবান্নের স্বপ্ন এবার ভয়াবহভাবে ভেঙে গেছে। মধ্য ভাদ্রের এই সময়টায় কৃষকরা নতুন ধানের আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু প্রকৃতির বিরূপ আচরণ তাদের জীবনকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে।
কোনাগাঁও গ্রামের কৃষক মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমার জমিতে এক ফসলি চাষ হয়। পানির কারণে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঘরের মানুষের খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করতে গেলে রাতে চোখে ঘুম আসে না।’ কৃষক কাদের মিয়া বলেন, ‘যদি সরকার বিনা পয়সায় বীজ ও সার দেয়, তাহলে আমরা আবার চাষের চেষ্টা করব।’
স্থানীয় কৃষকরা জানান, আমনের চারা রোপণের পর থেকেই বন্যা শুরু হয়। বালু ও পলি মাটির স্তূপে জমির ফসল ঢেকে গেছে। এতে জমিগুলো চাষাবাদের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পানি কমলেও নতুন চাষের সময় নেই। সার, বীজ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ অর্থ খরচ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া কৃষকদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। কৃষকরা আশা করেন, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, যাতে তারা পুনরায় তাদের জমিতে চাষাবাদ করতে পারেন ও নিজেদের জীবনযাত্রা পুনর্বহাল করতে সক্ষম হন।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় জানান, বন্যায় উপজেলার সাড়ে ছয় হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের তালিকা করা হয়েছে। কৃষকদের মাঝে দ্রুত সময়ে আমনের ৭৫ ও বিনা-১৭ জাতের বীজ সরবরাহ করা হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপপরিচালক মো. শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, আশঙ্কা করা হচ্ছে, বন্যায় জেলায় ৪৯ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমির ধান ও ফসল নষ্ট হয়েছে। তবে ফসলের প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি। কৃষকদের বিভিন্ন জাতের বীজ সরবরাহ করা হবে। এতে কিছুটা হলেও কৃষক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।