দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। নশিপুর সাত মাইল, ফুলবাড়ী, বীরগঞ্জ, বিরামপুর ও খানসামা এলাকায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা ও টমেটোর চাষে মনোযোগ দিয়েছেন তারা। যদিও টানা বর্ষণে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে কৃষকরা লাভের সম্ভাবনায় আশাবাদী। বর্তমানে বাজারে সবজির দাম ভালো পাওয়ায় তারা খুশি। এ বছর ৫০০ হেক্টর জমিতে আগাম শীতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কাকডাকা ভোর থেকে কোদাল, নিড়ানি, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে জমিতে হাল-চাষ, চারা রোপণ, খেতে পানি দেওয়া ও আগাছা পরিষ্কারসহ নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তারা শুধু নিজেদের চাহিদা পূরণ করছেন না, বরং বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষেও মনোযোগ দিচ্ছেন। শীতের শুরুতে কৃষকরা রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠান, যার ফলে তারা লাভবান হচ্ছেন।
এখন মাঠগুলো সবুজে ভরে উঠেছে। বিস্তৃত মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, মুলা, করলা, পটোল, পালং ও লাল শাকসহ নানা রকম শীতকালীন সবজির চারা। এসব সবজি শীত নামার আগেই বাজারে আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা খুশি। তবে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে জেলার বিভিন্ন স্থানে কিছু সবজি চাষ ব্যাহত হয়েছে। এতে কিছু কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং তাদের অনেকের চারা নষ্ট হয়ে গেছে, তাই তারা আবার চারা রোপণ করছেন।
দিনাজপুর নশিপুর সাতমাইল এলাকার চাষী এখলেচুর রহমান জানান, দিনাজপুরে কয়েক দিন টানা বর্ষণের কারণে মুলার আবাদ নষ্ট হয়েছে। সেই জমিতে পুনরায় চাষ করে আবার মুলার শাখা চাষ করছি। এ ছাড়া আমি ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শসা ও টমেটো চাষ করছি। প্রতিদিন জমির পরিচর্যা করছি। আশা করছি আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে আগাম জাতের ফুলকপি বাজারজাত করতে পারব।
একই এলাকার চাষী মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমি ২৫ শতক জমিতে ফুলকপির চাষ করেছি। প্রতিটি ফুলকপি গাছের অবস্থা ভালো আছে। প্রতিদিন কোদাল দিয়ে গাছের গোড়ায় মাটি দিচ্ছি। পানি সেচের প্রয়োজন হচ্ছে না, কারণ জমিতে রস রয়েছে। ইতোমধ্যে আমার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ১ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করা যাবে।’
দিনাজপুরে কৃষি কর্মকর্তারা জানান, কৃষকরা তাদের শ্রম ও যত্নের মাধ্যমে আগাম শীতকালীন সবজির চাষ করে নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাচ্ছেন ও কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। কৃষকদের এই কঠোর পরিশ্রম তাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়তা করবে আশা করা যায়।
দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, ‘দিনাজপুর সদরের ঘুঘুডাঙ্গা, কাশিপুর, মহব্বতপুর, নশিপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় বেশি লাভের আশায় আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করা হচ্ছে। এখন এই উপজেলায় যে সবজি চাষ হচ্ছে তা রবি মৌসুম শুরুর আগেই করা হয়। এই সবজি চাষে ফলনও ভালো হয়। সাধারণত কার্তিক মাসে শীতকালীন সবজির চাষ শুরু হয়। এ বছর ৫ শত হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এর বিপরীতে ৭ শত হেক্টর জমিতে আগাম জাতের সবজির চাষ হচ্ছে। এতে করে চাষীরা অধিক লাভবান হচ্ছেন।’