পাবনার ঈশ্বরদীতে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে শীতকালীন সবজি আবাদের চারা রোপণ শুরু করা যাচ্ছে না। সেপ্টেম্বর মাসে ৪৯২ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যার ফলে মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ২৫০ হেক্টরের অধিক জমির আগাম শিম নষ্ট হয়েছে। এতে কৃষকরা লোকসানের মুখে রয়েছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া সবজির উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষক।
চলতি বছরের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রচণ্ড গরম পড়লেও ঈশ্বরদীতে বৃষ্টির তেমন দেখা মেলেনি। তবে সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে বৃষ্টিপাত ছিল। ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে ঈশ্বরদীতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৯২ দশমিক ৫ মিলিমিটার।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, অক্টোবর মাস। এখন পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ায় তারা সবজির আবাদ শুরু করতে পারছেন না। কারণ, অনেক মাঠে পানি জমে আছে। পানি না থাকলেও খেত অতিরিক্ত নরম হয়ে গেছে, যা সবজির চারা রোপণের জন্য উপযোগী নয়। এ কারণে শীত মৌসুমের সবজির আবাদ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
এদিকে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতকালীন সবজির বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। মুলাডুলি ইউনিয়নের বাঘহাছলা, শেখপাড়া, গোয়ালবাথান ও মুলাডুলি মধ্যপাড়া এলাকার ২৫০ হেক্টর জমির শিম নষ্ট হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলা ও পৌর এলাকার ৬ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১৪ টন। তবে মাঠের এ অবস্থার কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, ঈশ্বরদী উপজেলা শাকসবজি আবাদের ক্ষেত্রে দেশের অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে ব্যাপকভাবে শিম, ঢেঁড়স, মুলা, গাজর, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ধনিয়াপাতা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, বরবটি, পেঁপে, ঝিঙা ইত্যাদির আবাদ হয়। উপজেলার ছলিমপুর, মুলাডুলি, লক্ষ্মীকুণ্ডা, সাহাপুর ও পাকশী ইউনিয়নে শাকসবজির আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। অক্টোবরে শুরু হয় রবি মৌসুম। শাকসবজি আবাদের জন্য এখন চাষিদের ব্যস্ত থাকার সময়। কিন্তু খেত উপযোগী না হওয়ায় তারা সবজির চারা রোপণ করতে পারছেন না।
পৌর এলাকার ইস্তা গ্রামের কৃষক ইমরান হোসেন তার চার বিঘা জমিতে ধান, মসুর, খেসারির পাশাপাশি প্রতিবছর সবজির চাষ করে থাকেন। এবার সবজি আবাদের জন্য বীজতলায় চারা তৈরির ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে ওই বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। জমিও সবজির চারা রোপণের জন্য উপযোগী হয়নি। তিনি জানান, সময় হয়ে এলেও খেতে সবজির চারা রোপণ করতে পারছেন না। বৃষ্টি হওয়ার কারণে খেতের মাটি এখনো কাদার মতো নরম হয়ে আছে। মাটি উপযোগী হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।
উপজেলার ছলিমপুরের জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক আব্দুল বারী (কপি বারী) বলেন, ‘এবার বৃষ্টিতে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সবজি চাষ করে সুনাম অর্জন করেছেন এবং জাতীয় পদকও পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ সময় ভালো ফুলকপি, পাতাকপি হতো। কিন্তু এবার অতিরিক্ত বন্যার কারণে তার ১২ বিঘা খেতের অবস্থা ভালো না। ফুলকপি হলেও তা ছোট আকারে হচ্ছে। দেখতেও ফ্যাকাশে দেখায়।’
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ‘ঈশ্বরদীতে প্রচুর শাকসবজি উৎপন্ন হয়। এবার ৬ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১৪ টন। তবে অতিবৃষ্টির কারণে সবজির খেত এখনো উপযোগী হয়ে ওঠেনি। ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না তা এখনো বলা যাচ্ছে না।’