নীলফামারীর সৈয়দপুরে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যার ফলে দিনমজুর ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। সবজি বাজারে দাম ৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
দিনমজুর মশিউর কাজ করেন বিল্ডিংয়ে ঢালাইয়ের। দিন শেষে তার মজুরি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। সৈয়দপুর পৌর সবজি বাজারে এসে দাম শুনে তিনি বারবার টাকা গুনছেন। কিন্তু হিসাব মিলাতে পারছেন না। মুখে তার চিন্তার ভাঁজ। জিজ্ঞাসা করতে মশিউর বলেন, ‘আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। বেগুন ৭০ টাকা কেজি, আগে এত দাম শুনি নাই। নুন (লবণ) দিয়ে ভাত খাবেন, তারও কেজি ৪০ টাকা। বাজারে সবকিছুর দাম নাগালের বাইরে।’
শহরের মুন্সীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. ফাহিম পেশায় বাদাম বিক্রেতা। তিনি দৈনিক ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় করেন। কোনো কোনো দিন এর কমবেশিও আয় হয়। কিন্তু সবজি বাজারে গিয়ে আর হিসাব মেলাতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘যেভাবে শাকসবজির দাম বেড়েছে, তাতে এই আয়ে কোনোভাবে সংসার চলে না। বেঁচে থাকাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।’
সৈয়দপুরে সব ধরনের কাঁচা শাকসবজির দাম যেন সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। এতে সাধারণ মানুষ কেনাকাটায় হিমশিম খাচ্ছেন। শহরের পৌর বাজারসহ বিভিন্ন সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। কোনো সবজিই ৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। গত এক মাসের ব্যবধানে সব শাকসবজিতে গড়ে ২০-৩০ টাকা করে বেড়েছে।
সবজি বিক্রেতা মাসুদুর রহমান জানান, আলু ছোট-বড় আকার ভেদে ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাস খানেক আগে ছিল ৩৫-৪০ টাকা। সবচেয়ে বেশি কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে, প্রতি কেজি ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কেজি প্রতি আদা ৩০০-৩২০ টাকা, রসুন ২২০ থেকে ২৪০, পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০, টমেটো ২০০, ঢ্যাঁড়শ ৬০, বরবটি ৭৫-৮০, পটোল ৬০, নেনুয়া ৫০-৫৫, করলা ৬০-৭০, চিচিঙ্গা ৫০-৬০, বেগুন ৫৫-৬০, শসা ৬০-৬৫, কচু ৬০, লাউ প্রতি পিস ৪৫-৫৫ টাকা ও বাঁধাকপি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা আরমান হোসেন বলেন, ‘মাসখানেক আগে ৫০০ টাকা দিয়ে মোটামুটি বাজার করা যেত। কিন্তু সবজির দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে চাহিদার অর্ধেক নিয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে।’ স্কুলশিক্ষিকা জেসমিন আরও বলেন, ‘বাজারে সব সবজির দামই বেশি। ৭০ টাকা কেজিতে পটোল কিনেছি।
যে বাজেটে সংসার চলানোর কথা, তা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।’ নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয় তো বাড়ছে না। দ্রব্যমূল্যের এই লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। দিন এনে দিন খাওয়া এসব মানুষেরা আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলাতে পারছেন না। যার ফলে তাদের দুবেলা খেয়েপরে বেঁচে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
বাজারে আসা ক্রেতা মইনুল ইসলাম বলেন, ‘মধ্যবিত্তরা বাজার করতে এসে হিমশিম খাচ্ছে। সব জিনিসের দাম বেশি, বাজারব্যবস্থা দেখার মতো কেউ নেই।’ খুচরা বিক্রেতা আব্দুল আলিম বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে।’
দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ‘বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটি’ গঠন করা হলেও বাজার মনিটরিংয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।