ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ড্রাগন ফলের চাষ। বর্তমানে ৩১৬ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। চলতি বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হওয়ার আশা করছেন চাষিরা। বেলেমাঠ বাজারে প্রতিদিন ২-৩ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হয়। এটি স্থানীয় কৃষকদের জন্য একটি বড় আর্থিক সুযোগ তৈরি করেছে। কৃষকরা লাভজনক এই চাষে আগ্রহী হয়ে মাঠে মাঠে ড্রাগন ফলের বাগান গড়ছেন।
মহেশপুরে বেলেমাঠ বাজারে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এই বাজারে ড্রাগন ফল বিক্রির মাধ্যমে চাষিরা ভালো মুনাফা অর্জন করছেন। এই এলাকার ড্রাগন চাষে সারা দেশে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। চলতি মৌসুমে ড্রাগনচাষিরা প্রায় ২০০ কোটি টাকার ড্রাগন ফল বিক্রির আশা করছেন। মহেশপুরে ড্রাগন চাষের ব্যাপক বিস্তারের কারণ হিসেবে বিশেষত লাভের দিকে নজর দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। অন্যান্য ফলের তুলনায় ড্রাগন ফল চাষে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা ধান, পাট ও অন্যান্য ফসলের পরিবর্তে এখন ড্রাগনচাষে বেশি ঝুঁকছেন।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় মোট ৩১৬ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের চাষ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, এ বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার ড্রাগন ফল উৎপাদিত হবে।
মহেশপুরের ড্রাগন চাষের ইতিহাস খুবই নতুন। ২০১৬ সালের দিকে মহেশপুরের আজমপুর এলাকায় কয়েকজন কৃষক শখ করে ড্রাগনের চাষ শুরু করেন। তাদের সফলতা দেখে অন্য কৃষকরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে শুরু করেন। এর পর থেকেই উপজেলার প্রতিটি গ্রামে ড্রাগন চাষের সম্প্রসারণ ঘটে এবং বর্তমানে এখানকার প্রধান ফল হিসেবে ড্রাগন ফলের চাষ হয়ে উঠেছে।
ড্রাগনচাষি হামিদুল ইসলাম জানান, তিনি ২০১৭ সাল থেকে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। প্রথমে তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে ড্রাগনের বাগান করেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি তার বাগানটির পরিধি বাড়িয়ে ৭ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন। তার বাগান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফলের উৎপাদনও বেড়েছে। গৌরীনাথপুর গ্রামের চাষি মফিজুর রহমান জানান, তিনি দুই বছর আগে ড্রাগনের চাষ শুরু করেন এবং বর্তমানে ১৫ বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করছেন। তবে এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়া এবং গরমের কারণে ফলের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে।
নাজির উদ্দীন নামে কৃষ্ণপুর গ্রামের এক স্কুলশিক্ষক ও ড্রাগনচাষি জানান, প্রথম বছরে ১ বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করতে ১ থেকে ১ দশমিক ৫ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রথম বছরেই উৎপাদন খরচ উঠে যায় এবং লাভ হওয়া শুরু হয়। তবে এই চাষের জন্য জমি, পরিচর্যা এবং সময়ের ব্যাপারে যথেষ্ট মনোযোগ প্রয়োজন। মহেশপুরের বেলেমাঠ, বাথানগাছি, গৌরীনাথপুর, আজমপুর, বিদ্যাধরপুর, মালাধরপুর, বলিভদ্রপুর, রামচন্দ্রপুর, কাশিপুর, নওদাগ্রাম, জুকা, শংকরহুদা, কালুহুদা গ্রামের মাঠগুলোতে এখন শুধুই ড্রাগন ফলের বাগান।
বেলেমাঠ ড্রাগন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, এই বাজারে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হয়। ড্রাগনচাষীরা তাদের উৎপাদিত ফল সহজে এখানে বিক্রি করতে পারেন এবং কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এই বাজারে এসে ড্রাগন কিনে নিয়ে যান, যা মহেশপুরের ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা প্রমাণ করে।
বেলেমাঠ ড্রাগন বাজার কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন জানিয়েছেন, এই বাজারটি নতুন হলেও এর গুরুত্ব খুব দ্রুত বেড়ে গেছে। বেলেমাঠ বাজারে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ড্রাগন ফলের কেনাবেচা চলে। এখানকার বাজারে ড্রাগনচাষিরা তাদের উৎপাদিত ফল বিক্রি করতে আসেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন সুলতানা জানিয়েছেন, মহেশপুর উপজেলার ড্রাগন চাষের খোঁজখবর নেওয়ার পর তারা আশা করছেন, এ বছর ফলন ভালো হলে ড্রাগনচাষিরা প্রায় ২০০ কোটি টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করবেন।