ঢাকা ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

লক্ষ্মীপুরে ৫০০ কোটি টাকার সুপারির বাজার, দাম পেয়ে খুশি চাষিরা

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৭ এএম
আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪০ এএম
লক্ষ্মীপুরে ৫০০ কোটি টাকার সুপারির বাজার, দাম পেয়ে খুশি চাষিরা
লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনিতে সুপারি কেনাবেচা হচ্ছে। ছবি: খবরের কাগজ

লক্ষ্মীপুরে এখন সুপারির ভরা মৌসুম। জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে পাকা সুপারির জমজমাট বেচাকেনা চলছে। বাজারগুলোতে ভিড় করছেন ব্যবসায়ীরা। এবার সুপারির দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। এতে ন্যায্য দাম পেয়ে  খুশি  স্থানীয় চাষিরা। চলতি বছর সুপারি বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তথ্যটি জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে পাকা সুপারি কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে মজুত করছেন। তারা বেশির ভাগ সুপারি পানিতে ভিজিয়ে রাখছেন। কারণ মৌসুম শেষে পানসেবীদের কাছে ভেজা সুপারির কদর বেড়ে যায়।

এসব উৎপাদিত সুপারির একটি বড় অংশ পান খাওয়ায় ব্যবহার হলেও আর একটি অংশ দেশের বিভিন্ন ওষুধ ও কেমিক্যাল কারখানায় ব্যবহার হয়। বাজারে প্রতি পোন (৮০টি সুপারিতে এক পোন) সুপারি ১৪০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরে বন্যায় ধান, সবজি ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম অর্থসংকটে ভুগছিল। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সুপারি দারুণভাবে ভূমিকা রাখছে। সুপারি বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয় চাষিরা। গত বছরের তুলনায় সুপারির দাম প্রতি পোনে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি পাওয়ায় খুশি চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুরে চলতি বছর ৬ হাজার  ৩৬০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর সুপারি বাগানে আড়াই থেকে ৩ টন শুকনো সুপারি উৎপাদন হবে। এর বাজারমূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে।

জেলার সদর ও রায়পুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুপারি চাষ হয়। প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও পাশের জমিতে কমবেশি সুপারি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার, রসুলগঞ্জ, রায়পুর, হায়দেরগঞ্জ, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারি, দত্তপাড়া ও দিঘলি বাজারে সবচেয়ে বেশি সুপারি কেনাবেচা হয়। সদর উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামের সুপারির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চৌধুরী মিয়া বলেন, ‘এবার সুপারির ফলন অন্য বছরের তুলনায় কম হলেও দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা খুশি। এবার ব্যবসা গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো হচ্ছে।’

মান্দারি বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া জানান, তিনি চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের কাছে ট্রাকে করে পাঠিয়ে থাকেন। এবার বিভিন্ন জেলায় সুপারির চাহিদা বেশি এবং দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। 

সদর উপজেলার দাউদপুর গ্রামের সুপারি চাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, বন্যায় তার চাষ করা আউশ-আমন ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। পোলট্রি ফার্ম পানিতে তলিয়ে লাখ টাকার মুরগি মারা গেছে। এতে তিনি চরম অর্থসংকটে পড়েন। বর্তমানে সুপারি বিক্রি করে তিনি পরিবারের অর্থসংকট দূর করতে সক্ষম হয়েছেন।

মনোহরপুর গ্রামের বাবুল জানান, দিনমজুরি করে চারজনের সংসার চালান। বন্যার কারণে তিনি পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে জীবনযাপন করেছেন। বর্তমানে তার বাড়ির আঙিনায় গাছে অনেক সুপারি ধরেছে। ওই সুপারি বিক্রি করে অনেক টাকা আয় হচ্ছে। এতে পরিবার অর্থসংকট দূর হয়েছে।

সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘সুপারি একটি লাভজনক চাষ। একবার সুপারি গাছ লাগানোর পর ৪০ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সুপারি গাছে খুব বেশি সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। পতিত ও উচ্চজমিতে সুপারি চাষ হয়। সুপারি গাছ পানিসহিষ্ণু হওয়ায় এবারের বন্যায় সুপারি বাগানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। লক্ষ্মীপুরে মৌসুমে অনেক বেকার যুবক সুপারির ব্যবসা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রাম থেকে সুপারি কিনে বাজারে বিক্রি করলে প্রতি পোন সুপারি বিক্রি করে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়।

 তিনি আরও বলেন, ভিয়েতনামসহ বিদেশি উন্নত জাতের সুপারি চাষ করা সম্ভব হলে উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বন্ধ ৩০০ খামার

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ এএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২ এএম
সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বন্ধ ৩০০ খামার
খবরের কাগজ ফাইল ছবি

ঠাকুরগাঁওয়ে পোলট্রি খামারিরা সংকটে রয়েছেন। মুরগির বাচ্চা ও ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলার ৯৫৫টি খামারের মধ্যে ৩০০টি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৮০০ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। সিন্ডিকেট এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিং সিস্টেমকে দায়ী করে খামারিরা সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। পরিস্থিতির সমাধান না হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তারা।

খামারিরা জানান, কয়েক মাসের মধ্যে মুরগির বাচ্চার দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েক মাস আগে যেখানে একটি বাচ্চার দাম ছিল ২০-২৫ টাকা, সেখানে বর্তমানে তার দাম ৬২-৬৮ টাকা। এর পাশাপাশি ফিড বা খাদ্যের দামও আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। এতে খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও, তারা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। 

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন, জেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, মুরগির বাচ্চার দাম অনিয়মিতভাবে ওঠানামা করছে। একদিন একটি দাম, পরদিন আরেকটি দাম। এর পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে। ফিডের দামও গত এক বছরে ১ হাজার টাকা বেড়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘মুরগি বিক্রির সময় দুপুর ২-৩টা পর্যন্ত আমাদের দাম জানানো হয় না। দাম কোথা থেকে নির্ধারিত হচ্ছে, তা আমরা কেউ জানি না। ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করছি এবং আমাদের দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলনে নামব।’

পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাবের হোসেন জানান, ‘মাত্র দুই মাস আগে বাচ্চার দাম ছিল ২০-২২ টাকা, যা এখন ৬০-৬৫ টাকায় পৌঁছেছে। প্রতিটি বাচ্চার জন্য কোম্পানিগুলো ৪০ টাকা বেশি নিচ্ছে। এতে ৩০০টি খামার বন্ধ হয়ে গেছে এবং ৮০০ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, ক্ষতিপূরণ এবং সহজশর্তে ঋণ দিয়ে খামারিদের পুনরায় কাজ শুরু করতে সহায়তা করা হোক।’

এ ছাড়া খামারি আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের অনেকেরই ২ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়েছে। বাড়ি বিক্রি করে ধারদেনা শোধ করতে হচ্ছে। আমরা ডিলারদের কাছে পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়েছি। সরকারের কাছে অনুরোধ, প্রান্তিক খামারিদের পাশে দাঁড়ানো হোক।’

এই সংকটের সমাধানের জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের পোলট্রি খামারিরা সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাব থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে তারা চৌরাস্তার মোড়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বন্ধ করা, সিন্ডিকেট ভেঙে সুষ্ঠু বাজার প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা এবং প্রান্তিক খামারিদের জন্য প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. ইজহার আহমেদ খান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছি। যদি ন্যায্যমূল্যে বাচ্চা ও খাদ্য বিক্রি না করা হয় বা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খামারিদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট ডিলারদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘খামারিদের দাবি যথার্থ এবং সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। যদি তা না হয়, তা হলে পোলট্রি খাত আরও গভীর সংকটে পড়বে।’

দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক উৎস পোলট্রি খাত। এতে শতাধিক খামারি এবং লক্ষাধিক শ্রমিক যুক্ত রয়েছেন। খামারিরা বলছেন, বিদ্যুতের বাণিজ্যিক রেট বাদ দিয়ে সেচপাম্পের রেট চালু করা হলে উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব। একইভাবে একটি বিক্রয়মূল্য নিয়ন্ত্রণ সেবা চালু করলে খামারিরা ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন।

২০০ কোটি টাকার ড্রাগন বিক্রির আশা

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
২০০ কোটি টাকার ড্রাগন বিক্রির আশা
মহেশপুরের একটি বাজারে ড্রাগন ফল বেচাকেনা হচ্ছে।ছবি: খবরের কাগজ

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ড্রাগন ফলের চাষ। বর্তমানে ৩১৬ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। চলতি বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হওয়ার আশা করছেন চাষিরা। বেলেমাঠ বাজারে প্রতিদিন ২-৩ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হয়। এটি স্থানীয় কৃষকদের জন্য একটি বড় আর্থিক সুযোগ তৈরি করেছে। কৃষকরা লাভজনক এই চাষে আগ্রহী হয়ে মাঠে মাঠে ড্রাগন ফলের বাগান গড়ছেন।

মহেশপুরে বেলেমাঠ বাজারে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এই বাজারে ড্রাগন ফল বিক্রির মাধ্যমে চাষিরা ভালো মুনাফা অর্জন করছেন। এই এলাকার ড্রাগন চাষে সারা দেশে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। চলতি মৌসুমে ড্রাগনচাষিরা প্রায় ২০০ কোটি টাকার ড্রাগন ফল বিক্রির আশা করছেন। মহেশপুরে ড্রাগন চাষের ব্যাপক বিস্তারের কারণ হিসেবে বিশেষত লাভের দিকে নজর দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। অন্যান্য ফলের তুলনায় ড্রাগন ফল চাষে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা ধান, পাট ও অন্যান্য ফসলের পরিবর্তে এখন ড্রাগনচাষে বেশি ঝুঁকছেন। 

এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় মোট ৩১৬ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের চাষ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, এ বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার ড্রাগন ফল উৎপাদিত হবে। 

মহেশপুরের ড্রাগন চাষের ইতিহাস খুবই নতুন। ২০১৬ সালের দিকে মহেশপুরের আজমপুর এলাকায় কয়েকজন কৃষক শখ করে ড্রাগনের চাষ শুরু করেন। তাদের সফলতা দেখে অন্য কৃষকরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে শুরু করেন। এর পর থেকেই উপজেলার প্রতিটি গ্রামে ড্রাগন চাষের সম্প্রসারণ ঘটে এবং বর্তমানে এখানকার প্রধান ফল হিসেবে ড্রাগন ফলের চাষ হয়ে উঠেছে। 

ড্রাগনচাষি হামিদুল ইসলাম জানান, তিনি ২০১৭ সাল থেকে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। প্রথমে তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে ড্রাগনের বাগান করেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি তার বাগানটির পরিধি বাড়িয়ে ৭ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন। তার বাগান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফলের উৎপাদনও বেড়েছে। গৌরীনাথপুর গ্রামের চাষি মফিজুর রহমান জানান, তিনি দুই বছর আগে ড্রাগনের চাষ শুরু করেন এবং বর্তমানে ১৫ বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করছেন। তবে এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়া এবং গরমের কারণে ফলের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। 

নাজির উদ্দীন নামে কৃষ্ণপুর গ্রামের এক স্কুলশিক্ষক ও ড্রাগনচাষি জানান, প্রথম বছরে ১ বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করতে ১ থেকে ১ দশমিক ৫ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রথম বছরেই উৎপাদন খরচ উঠে যায় এবং লাভ হওয়া শুরু হয়। তবে এই চাষের জন্য জমি, পরিচর্যা এবং সময়ের ব্যাপারে যথেষ্ট মনোযোগ প্রয়োজন। মহেশপুরের বেলেমাঠ, বাথানগাছি, গৌরীনাথপুর, আজমপুর, বিদ্যাধরপুর, মালাধরপুর, বলিভদ্রপুর, রামচন্দ্রপুর, কাশিপুর, নওদাগ্রাম, জুকা, শংকরহুদা, কালুহুদা গ্রামের মাঠগুলোতে এখন শুধুই ড্রাগন ফলের বাগান। 

বেলেমাঠ ড্রাগন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, এই বাজারে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হয়। ড্রাগনচাষীরা তাদের উৎপাদিত ফল সহজে এখানে বিক্রি করতে পারেন এবং কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এই বাজারে এসে ড্রাগন কিনে নিয়ে যান, যা মহেশপুরের ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা প্রমাণ করে। 

বেলেমাঠ ড্রাগন বাজার কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন জানিয়েছেন, এই বাজারটি নতুন হলেও এর গুরুত্ব খুব দ্রুত বেড়ে গেছে। বেলেমাঠ বাজারে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ড্রাগন ফলের কেনাবেচা চলে। এখানকার বাজারে ড্রাগনচাষিরা তাদের উৎপাদিত ফল বিক্রি করতে আসেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন সুলতানা জানিয়েছেন, মহেশপুর উপজেলার ড্রাগন চাষের খোঁজখবর নেওয়ার পর তারা আশা করছেন, এ বছর ফলন ভালো হলে ড্রাগনচাষিরা প্রায় ২০০ কোটি টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করবেন।

ভোলায় নতুন জাতের ধান চাষে ভালো ফলন

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৯ এএম
ভোলায় নতুন জাতের ধান চাষে ভালো ফলন
ধানখেত পরিচর্যা করছেন একজন কৃষক। ছবি: খবরের কাগজ

ভোলার লালমোহন উপজেলায় প্রথমবারের মতো উচ্চফলনশীল ব্রি ধান-১০৩ চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। কৃষি অফিসের সহায়তায় তারা বিনামূল্যে বীজ, সার ও কীটনাশক পেয়েছেন। ৪০০ শতাংশ জমিতে এই ধান চাষ করেছেন। আগামী ১০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে। কৃষি অফিসের সহায়তায়, এই জাতের ধান চাষে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। খবর বাসসের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পার্টনার প্রকল্পের আওতায় এই ধান চাষ শুরু হয়েছে। উপজেলার কালমা ইউনিয়নের চরছকিনা এবং পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার মোট ছয়জন কৃষক ব্রি ধান-১০৩ চাষ করেছেন। তাদের মধ্যে কালমা ইউনিয়নের কৃষকরা আগামী ১০ দিনের মধ্যে ধান কাটতে শুরু করবেন, আর পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কৃষকরা একটু দেরিতে আবাদ করায় ২০-২৫ দিনের মধ্যে ধান কাটার প্রস্তুতি নেবেন।

এবার মোট ৪০০ শতাংশ জমিতে ব্রি ধান-১০৩ আবাদ করা হয়েছে। এসব ধান বাজারে বীজ হিসেবে বিক্রি করা হবে। কৃষকরা বাজারে প্রতি কেজি বীজ পাইকারি ৫০-৬০ টাকা এবং খুচরা ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।

উপজেলার কালমা ইউনিয়নের চরছকিনা এলাকার কৃষক মো. বাবুল, মো. সেলিম এবং শেখ সাদি জানান, তারা চলতি আমনের মৌসুমে ২০০ শতাংশ জমিতে ব্রি ধান-১০৩ চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে তাদের বিনামূল্যে ধানের বীজ, সার, কীটনাশক ও বীজ সংরক্ষণের জন্য ড্রাম দেওয়া হয়েছে। 
তারা জানান, এই জমিতে ধানের চাষে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, যার মধ্যে জমির চাষাবাদ, শ্রমিক, বালাইনাশক এবং অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত। তবে তাদের আশা, সবকিছু ঠিক থাকলে তারা ২০০ শতাংশ জমি থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার ধানের বীজ বিক্রি করতে পারবেন। 

এদিকে, লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার কৃষক মো. নান্নু, মোস্তফা কামাল ও কাকলি রানিও ব্রি ধান-১০৩ চাষ করেছেন। তাদের জমির পরিমাণও ২০০ শতাংশ। তবে অতিবৃষ্টির কারণে তাদের এলাকায় ধান আবাদ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তারা আশা করছেন, আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে তাদের ক্ষেত থেকে ধান কাটার জন্য প্রস্তুত হবে। তাদেরও আশা, এই ধান থেকে তারা বাজারে প্রায় দেড় লাখ টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবেন। 

লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু হাসনাইন জানান, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। তাই উচ্চফলনশীল ফসলের আবাদ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এই কারণে ব্রি ধান-১০৩ জাতের আবাদ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চলতি বছরে এই প্রকল্পে লালমোহন উপজেলার দুটি ব্লকের মোট ৬ জন কৃষককে বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক এবং বীজ সংরক্ষণের জন্য ড্রাম দেওয়া হয়েছে। এই প্রথম চাষিরা ব্রি ধান-১০৩ চাষে সফলতা পেয়েছেন এবং তারা এবার এই ধান থেকে বীজ সংগ্রহ করে পরবর্তীকালে তাদের এলাকায় আরও বেশি পরিমাণে এ ধানের আবাদ করবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশাবাদী, এ বছর ধান চাষের মাধ্যমে কৃষকরা ভালো ফলন পাবেন। যদি আবহাওয়া অনুকূল থাকে, তাহলে অন্য চাষিরা এ বছর ভালো ফলন পাবেন। তিনি আরও বলেন, কৃষকদের ক্ষতি না হতে সাহায্য করতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। এর ফলে কৃষকরা যেকোনো সমস্যায় দ্রুত সমাধান পেতে পারেন।

ব্রি ধান-১০৩ জাতটি একটি উচ্চফলনশীল জাত, যা কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই ধান দ্রুত পাকে এবং এতে রোগবালাই কম হওয়ার সুবিধা রয়েছে। এই জাতের ধান চাষে কৃষকরা কম খরচে বেশি লাভের আশা করছেন। বিশেষ করে, কৃষকদের যেহেতু কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার এবং কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে, তাই তাদের ব্যয় কম হচ্ছে এবং লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

 

তরমুজ চাষে দুই বন্ধুর সাফল্য

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৪ এএম
তরমুজ চাষে দুই বন্ধুর সাফল্য
সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলায় তরমুজ খেতে পরিচর্যা করছেন দুই বন্ধু।ছবি: খবরের কাগজ

অসময়ে ‘স্মার্টবয়-২’ বিদেশি তরমুজ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার শালুয়াভিটা গ্রামে দুই বন্ধু সেলিম রেজা ও ইউসুফ আলী। তারা এক বিঘা জমি অন্যের কাছে লিজ নিয়ে আধুনিক মালচিং মাচা পদ্ধতিতে অ্যাগ্রো-১ কোম্পানির স্মার্টবয়-২ জাতের বারোমাসি তরমুজ চাষ করেছেন। বৃষ্টিপাতে কিছুটা ক্ষতি হলেও তাদের তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ২ হাজারেরও বেশি তরমুজ তারা বিক্রির উপযোগী করেছেন। 
সেলিম ও ইউসুফ আশা করছেন, কিছু দিনের মধ্যে তরমুজ তুলে বাজারে বিক্রি করবেন। তারা ধারণা করছেন, এখান থেকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন। কৃষক দুই বন্ধুর সাফল্য দেখে এলাকার অন্য কৃষকও ধানের পরিবর্তে এখন এ জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কৃষক দুই বন্ধু সেলিম ও ইউসুফ বগুড়ায় বেড়াতে গিয়ে সেখানকার কৃষকদের স্মার্টবয়-২ জাতের তরমুজ চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন। পরে তারা বাড়িতে ফিরে ইউটিউবে এই তরমুজ চাষ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানেন। এর পর তারা উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নেন এবং কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় ২৫ হাজার টাকায় এক বিঘা জমি বার্ষিক লিজ নিয়ে আধুনিক মালচিং মাচা পদ্ধতিতে অ্যাগ্রো-১ কোম্পানির স্মার্টবয়-২ জাতের তরমুজ চাষ শুরু করেন।

প্রথম দিকে টানা বৃষ্টিপাতে তরমুজের গাছ নিয়ে তারা চরম বিপাকে পড়েন। তবে আবহাওয়া ভালো হলে, তাদের জমিতে চারা গাছ বড় হতে থাকে। ধীরে ধীরে গাছ বড় হলে পুরো জমিতে বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। বর্তমানে মাচার নিচে সারি সারি ঝুলে আছে শত শত তরমুজ। তরমুজগুলো বড় হওয়ার জন্য নেট দিয়ে মাচার সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যেই তাদের তরমুজ বাজারে বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন স্থানীয় কৃষকসহ দূর-দূরান্তের পাইকাররা জমিতে এসে তরমুজগুলো দেখছেন। তাদের পরামর্শ নিয়ে অনেকেই নিজেদের জমিতে এই তরমুজ চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন।

সেলিম রেজা বলেন, ‘আগে ধানসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করতাম। কিন্তু তেমন লাভ হতো না। পরে ভাবলাম, কিছু ভিন্ন কাজ করতে হবে। অন্য জেলার কৃষকদের তরমুজ চাষ দেখে আমি উদ্বুদ্ধ হলাম। এর পর কৃষি অফিসের পরামর্শে অন্যের জমি লিজ নিয়ে দুই বন্ধু তরমুজের বীজ বপন শুরু করলাম। তরমুজের গাছগুলো ভালোই হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার তরমুজ নেট দিয়ে মাচার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে এবং জমিতে আরও দেড় হাজার তরমুজ বড় হচ্ছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন ৩ থেকে ৪ কেজির মতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পাইকাররা এসে তরমুজের দাম ৩ লাখ টাকার ওপরে বলেছেন। আমরা নিজেরাই জমি থেকে তরমুজ তুলে বাজারে বিক্রি করব। বর্তমানে বাজারে এই তরমুজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ওই হিসাবে পুরো জমির তরমুজ ৬ লাখ টাকার বেশি দামে বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’

কৃষক ইউসুফ আলী বলেন, ‘জৈব ও কম্পোস্ট সার জমিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে বাড়তি কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়নি। পুরো চাষাবাদে আমাদের ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। খরচ বাদে আমাদের প্রায় ৫ লাখ টাকা লাভ হতে পারে। তরমুজের পাশাপাশি আমরা ৫ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো, বেগুন ও আলু চাষ শুরু করেছি।’

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘কৃষি অধিদপ্তরের মূলনীতি হলো আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির প্রচলন করা। ইতোমধ্যে কৃষকদের ভালো ফলনের জন্য বিভিন্ন প্রজেক্টের আওতায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন জাতের ফসলের বিষয়ে জানানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ এলাকার দুই উদ্যোক্তা এক বিঘা জমিতে অ্যাগ্রো-১ কোম্পানির স্মার্টবয়-২ জাতের বারোমাসি তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। প্রথম বছরেই তারা সফলতা পেয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে তাদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’ 

 

দেশের সেরা ১০ চা বাগান

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ এএম
আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ এএম
দেশের সেরা ১০ চা বাগান
বাগানে চায়ের পাতা তুলছেন শ্রমিকরা।ছবি: খবরের কাগজ

বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিবি) নিলামে বিক্রি হওয়া চায়ের গুণগত মানের ভিত্তিতে সেরা ৩০টি চা বাগান নির্বাচন করে। এর মধ্যে এবার সেরা ১০ চা বাগানের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে হবিগঞ্জের আমতলী চা বাগান। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মধুপুর ও তৃতীয় স্থানে রত্না চা বাগান। এই তালিকায় চট্টগ্রামের চা বাগানও স্থান পেয়েছে। চায়ের গুণগত মান বজায় রাখায় ওই বাগানগুলোর চা নিলামে সর্বোচ্চ দাম উঠেছে। 

আমতলী চা বাগানের এক কেজি চায়ের দাম নিলামে উঠেছে ৩০৫ দশমিক ২৭ টাকা। আগের বছরগুলোয় এই বাগানটি টপ টেন তালিকায় ছিল না। কিন্তু এবার প্রথম স্থান দখল করেছে। দ্বিতীয় স্থানটি আবারও পেয়েছে হবিগঞ্জের মধুপুর চা বাগান। মধুপুর চা বাগানের চায়ের দাম এবারে উঠেছে ২৯৭ দশমিক ৫৫ টাকা। এটি গত বছরের মতো দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে। তৃতীয় স্থান দখল করেছে মৌলভীবাজার জেলার রত্না চা বাগান। রত্না চা বাগানটি কৈয়াছড়ার ডলু চা বাগানকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। এখানে চায়ের দাম উঠেছে ২৯১ দশমিক ৮৯ টাকা। চতুর্থ স্থানে রয়েছে শ্রীমঙ্গলের কেদারপুর চা বাগান। এর চায়ের মূল্য ২৮৮ দশমিক ৩৫ টাকা। পঞ্চম স্থানে রয়েছে উত্তরবাগ ও ইন্ডিয়ান চা বাগান, যেখানে চায়ের দাম উঠেছে ২৫৯ দশমিক ১০ টাকা। ষষ্ঠ স্থানে চট্টগ্রামের কৈয়াছড়া ডলু চা বাগান রয়েছে। এর চায়ের দাম ২৫৫ দশমিক ৩৮ টাকা। সপ্তম অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রামের রাঙ্গাপানি চা বাগান। এর চায়ের দাম ২৪৬ দশমিক ৭৮ টাকা। অষ্টম স্থানটি দখল করেছে মৌলভীবাজারের ক্লিভডন চা বাগান, যেখানে চায়ের মূল্য ২৪৬ দশমিক ৭১ টাকা। নবম স্থানে রয়েছে এমরিল চা বাগান, যেখানে চায়ের দাম উঠেছে ২৪০ দশমিক ৬৯ টাকা। দশম স্থানে চট্টগ্রামের ইলাহি নুর চা বাগান। এর চায়ের মূল্য ২৩৯ দশমিক ৬০ টাকা।

সেরা ৩০ চা বাগানের মধ্যে চট্টগ্রামের বারমাসিয়া চা বাগান ২৩৪ দশমিক ৩৬ টাকা প্রতি কেজি চায়ের মূল্য পেয়ে ১৪তম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী চা বাগান ২২৯ দশমিক ২ টাকা প্রতি কেজি চায়ের মূল্য পেয়ে ১৯তম স্থানে রয়েছে। চট্টগ্রামের নেপচুন চা বাগান ২২৪ দশমিক ৮৩ টাকায় ২১তম স্থান এবং জেরিন চা বাগান ২২৫ দশমিক ৬৯ টাকায় ২০তম স্থানে অবস্থান করছে। নিউ চেমনবাগ চা বাগান ২২১ দশমিক ৪০ টাকা প্রতি কেজি চায়ের দাম পেয়ে ৩০ তম স্থানে রয়েছে।

চা উৎপাদনের জন্য আবহাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চট্টগ্রামের কৈয়াছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টি কম হওয়া কিংবা অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে চায়ের উৎপাদন ও গুণগত মানে প্রভাব পড়ে। তবে আমাদের কোনো চেষ্টা কম নয়, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ভালো চা উৎপাদন করতে।’

এ ছাড়া রাঙ্গাপানি চা বাগানের ব্যবস্থাপক উৎপল বড়ুয়া বলেন, ‘আমতলী চা বাগান নতুনভাবে সেরার তালিকায় এসেছে। যার কারণে আমাদের অবস্থান কিছুটা নিচে চলে গেছে। তবে, আমরা ভবিষ্যতে আরও উন্নতির জন্য চেষ্টা করছি।’

মধুপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক এমজি মর্তুজা জানান, ‘আমরা দীর্ঘ সময় ধরে টপ টেনের মধ্যে রয়েছি এবং চায়ের গুণমান ঠিক রেখে পাতা উত্তোলন করার কারণে এই অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছি।’ এবার প্রথম স্থানে উঠে আসা আমতলী চা বাগানের 
ব্যবস্থাপক কাজী মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের চা বাগান মূলত প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। আমরা চায়ের পাতার এক দুটি কুঁড়ি সংগ্রহ করি। এটি আমাদের চায়ের মানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০০৬ সালে আমতলী চা বাগান টপ টেনের মধ্যে ছিল। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে সে অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। বর্তমানে আমরা আবারও শীর্ষে পৌঁছেছি এবং ভবিষ্যতে এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।’

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, ‘চায়ের গুণমান ঠিক রাখতে মালিক কর্তৃপক্ষকে নজর রাখতে হবে। অনেক সময় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চায়ের মান কমে যেতে পারে। তবে সঠিক সময় এবং উপযুক্ত পাতা উত্তোলন নিশ্চিত করতে হবে যাতে ভালো মানের চা উৎপাদন হয়।’