ময়মনসিংহে বিভিন্ন জমিতে চাষ করা বিনাধান-১৭ ও ১১-এর অধিকাংশই খেতে ধান চিটা হয়ে গেছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, সার ও কীটনাশক কমবেশি হওয়ার কারণে ধানে চিটা হয়েছে। এ জন্য কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) থেকে ৩৩ শতাংশ জমির জন্য ৫ কেজি করে বিনাধান-১৭ ও ১১ কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজন বিনামূল্যে সার পেলেও অনেকে তা পাননি। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড ও সদরের চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ১৪১ জন কৃষক এই বিনাধান-১১ ও ১৭ চাষ করেছেন। বিনামূল্যে বীজ ও সার পাওয়ার পরও কৃষকরা প্রতি কাঠায় অন্তত ৪ হাজার টাকা খরচ করেছেন। এর মধ্যে অনেকেই ধারদেনা করে ধান চাষ করেন। কিন্তু অধিকাংশ কৃষক ধানে চিটা হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন। তারা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহের মধ্যপাড়া এলাকার কৃষকরা ধান কাটার পর চিটা থেকে ধান আলাদা করতে ব্যস্ত। তাদের মুখে চিন্তার ভাঁজ। কৃষক বাবুল মিয়া তিন কাঠা জমিতে বিনা ধান রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর বিনাধান-১৭ চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার ধান চিটা হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জমিতে নিজের শ্রম ছাড়া কীটনাশক, সেচভাড়া, শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এগুলো ধারদেনা করে ধান চাষে খরচ করেছি। এখন টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’
বর্গাচাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বিনাধান-১৭সহ দশ কেজি বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল। এসব ধান ১২ কাঠা জমিতে চাষ করেছি। আমার একটি গাভী বিক্রি করে ওই ধান চাষ করি। কিন্তু ধানের ফলন ভালো হয়নি। অধিকাংশ ধানে চিটা হয়ে গেছে। প্রতি কাঠায় ধান এক থেকে দেড় মণ ফলন হয়েছে। এতে আমার লোকসান হয়ে গেছে।’
কৃষক মেজু উদ্দিন সাড়ে চার কাঠা জমিতে বিনা-১১ চাষ করেছেন। তিনি জানান, প্রতি কাঠায় ফলন পেয়েছেন এক মণ। কৃষক আব্দুল কাদির, রিপন মিয়া ও আতিকুল ইসলাম জানান, বিনাধান-১৭ প্রতি কাঠায় সর্বোচ্চ এক মণ ও বিনাধান-১১ প্রতিকাঠায় সর্বোচ্চ দেড় মণ হয়েছে। বাকি সব ধান চিটা হয়ে গেছে। উন্নতজাত হিসেবে কর্মকর্তারা বিনামূল্যে বীজ দিয়ে চাষ করতে বলেছেন। কৃষকরা সরল মনে চাষ করেন। কিন্তু আমরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, কিন্তু এখনো তা দেওয়া হয়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু বলেন, ‘ময়মনসিংহের ১৪১ জন কৃষকের ধান চিটা হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’ তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।’
সহযোগী গবেষক, উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামছুন্নাহার বেগম বলেন, ‘বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে ১ হাজার ৮০ কেজি বিনাধান-১৭ এবং ২২৯ কেজি বিনাধান-১১ জাতের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। ৩৩ শতাংশ জমির জন্য একেকজন কৃষক পেয়েছেন ৫ কেজি বীজ। সব এলাকায় ফলন ভালো হলেও শুধুমাত্র ময়মনসিংহের ১৪১ জন কৃষকের ধান চিটা হয়ে গেছে। অথচ গত বছরও বাম্পার ফলনে খুশি ছিলেন কৃষকরা।’
তিনি বলেন, ‘চিটা হওয়ার সঠিক কারণ উদ্ঘাটন করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি ওই কমিটির সভাপতি। তবে আমাদের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জমি পরিদর্শন করেন। তারা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে চিটা হয়েছে। এ ছাড়া সার ও কীটনাশক কম-বেশি দেওয়ার পাশাপাশি যথাযথভাবে যত্ন না নেওয়ার কারণে ধানে চিটা হয়েছে।’