
মানিকগঞ্জের তরা মৎস্য আড়ত ও ভাটবাউর সবজির আড়তে সরবরাহ ভালো থাকায় মাছ ও শীতের সবজির দাম কমেছে। চাষের মাছের দাম কমে গেছে। তবে দেশীয় মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শীতের সবজির দামও ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এতে ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পেলেও কৃষক ও পাইকাররা লোকসান গুনছেন। জেলা কৃষি বিভাগ বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে, যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করতে না পারে।
গত মঙ্গলবার সকালে তরা মৎস্য আড়তে চাষের ও সামুদ্রিক মাছের দাম কমেছে। গত এক সপ্তাহে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। তেলাপিয়া, পাঙাশ, কাতল ও রুই মাছের দাম কমেছে। তবে দেশীয় মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তরা আড়তে ১৭০ টাকার তেলাপিয়া ১৬০ টাকায়, ১৬০ টাকার পাঙাশ ১৫০ টাকায়, ৫ কেজি কাতল ৪৫০ টাকায় ও রুই ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামুদ্রিক পাতা ৭৫ টাকা, চন্দনা ১১৫ টাকা, বাটা ১১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে ইলিশ ও দেশীয় মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় মাছের দাম ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি।
মৎস্য আড়তের ম্যানেজার সুমন জানান, সামুদ্রিক মাছের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। মাছ ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, দেশীয় মাছের সরবরাহ বেড়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা দেশীয় মাছের দিকে বেশি। এই কারণে চাষের মাছের দাম কমছে। আড়তে শতাধিক মাছের আড়তদার আছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন বাজার থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। খুচরা বিক্রেতা আলমাস আলী বলেন, তারা মাছ কিনে শহরের বাজারে বিক্রি করেন। দেশীয় মাছের চাহিদা বেশি হওয়ায় চাষের মাছ কম পরিমাণে কিনছেন। তবে দেশীয় মাছের দাম ভালোই থাকছে।
অন্যদিকে মানিকগঞ্জের ভাটবাউর সবজির আড়তে সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কমেছে। শীতের সবজির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। ফুলকপি, মুলা, শিম, পাতাকপি, মিষ্টিকুমড়া, নতুন আলু, বেগুন, গাজর, টমেটো, মরিচ, লেবু ও শসা এসব সবজির দাম কমে গেছে। সবজির দামের পতন ক্রেতাদের জন্য স্বস্তি হলেও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষকরা উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাজারে কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক বশির ইসলাম জানান, তিনি ছয় বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছেন। আগাম ফুলকপি ভালো দামে বিক্রি হলেও এখন উৎপাদন খরচও উঠাতে পারছেন না। একেকটি ফুলকপি উৎপাদন করতে ১২-১৫ টাকা লাগে। কিন্তু তা ৩ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে তিনি লোকসান গুনছেন।
পাইকার লাল মিয়া জানান, সরবরাহ বেশি হওয়ায় সবজির দাম কমেছে। গত সপ্তাহের চেয়ে দাম আরও কমেছে। তিনি বলেন, টমেটো ২২ টাকা কেজি কিনে ২৪ টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু আজ ২০ টাকায় ২ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছেন।
সবজির দাম কমায় খুচরা বিক্রেতারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আলমগীর নামের এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, ‘সবজি এখন অনেক সস্তা। তারা যত কমে কিনতে পারেন, তত কমে বিক্রি করেন। দাম কম থাকায় ক্রেতারা বেশি পরিমাণে বাজার করতে পারেন, ফলে তাদেরও লাভ হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মোরশেদ আল মাহমুদ বলেন, শীতের সবজির মৌসুম চলছে। আড়ত ও বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকায় সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে। তিনি জানান, মাছের আড়তে চাষের মাছের দাম কমছে। বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখা হচ্ছে। যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি না করতে পারে।