ঢাকা ৩০ মাঘ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

মাছ-সবজির দামে স্বস্তি ফিরলেও বিপাকে চাষি

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩২ এএম
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৮ এএম
মাছ-সবজির দামে স্বস্তি ফিরলেও বিপাকে চাষি
মানিকগঞ্জ ভাটবাউর আড়তে সবজির বেচাকেনা হচ্ছে। খবরের কাগজ

মানিকগঞ্জের তরা মৎস্য আড়ত ও ভাটবাউর সবজির আড়তে সরবরাহ ভালো থাকায় মাছ ও শীতের সবজির দাম কমেছে। চাষের মাছের দাম কমে গেছে। তবে দেশীয় মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শীতের সবজির দামও ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এতে ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পেলেও কৃষক ও পাইকাররা লোকসান গুনছেন। জেলা কৃষি বিভাগ বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে, যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করতে না পারে।

গত মঙ্গলবার সকালে তরা মৎস্য আড়তে চাষের ও সামুদ্রিক মাছের দাম কমেছে। গত এক সপ্তাহে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। তেলাপিয়া, পাঙাশ, কাতল ও রুই মাছের দাম কমেছে। তবে দেশীয় মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তরা আড়তে ১৭০ টাকার তেলাপিয়া ১৬০ টাকায়, ১৬০ টাকার পাঙাশ ১৫০ টাকায়, ৫ কেজি কাতল ৪৫০ টাকায় ও রুই ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামুদ্রিক পাতা ৭৫ টাকা, চন্দনা ১১৫ টাকা, বাটা ১১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে ইলিশ ও দেশীয় মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় মাছের দাম ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি।

মৎস্য আড়তের ম্যানেজার সুমন জানান, সামুদ্রিক মাছের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। মাছ ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, দেশীয় মাছের সরবরাহ বেড়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা দেশীয় মাছের দিকে বেশি। এই কারণে চাষের মাছের দাম কমছে। আড়তে শতাধিক মাছের আড়তদার আছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন বাজার থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। খুচরা বিক্রেতা আলমাস আলী বলেন, তারা মাছ কিনে শহরের বাজারে বিক্রি করেন। দেশীয় মাছের চাহিদা বেশি হওয়ায় চাষের মাছ কম পরিমাণে কিনছেন। তবে দেশীয় মাছের দাম ভালোই থাকছে।
অন্যদিকে মানিকগঞ্জের ভাটবাউর সবজির আড়তে সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কমেছে। শীতের সবজির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। ফুলকপি, মুলা, শিম, পাতাকপি, মিষ্টিকুমড়া, নতুন আলু, বেগুন, গাজর, টমেটো, মরিচ, লেবু ও শসা এসব সবজির দাম কমে গেছে। সবজির দামের পতন ক্রেতাদের জন্য স্বস্তি হলেও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষকরা উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাজারে কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

স্থানীয় কৃষক বশির ইসলাম জানান, তিনি ছয় বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছেন। আগাম ফুলকপি ভালো দামে বিক্রি হলেও এখন উৎপাদন খরচও উঠাতে পারছেন না। একেকটি ফুলকপি উৎপাদন করতে ১২-১৫ টাকা লাগে। কিন্তু তা ৩ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে তিনি লোকসান গুনছেন।

পাইকার লাল মিয়া জানান, সরবরাহ বেশি হওয়ায় সবজির দাম কমেছে। গত সপ্তাহের চেয়ে দাম আরও কমেছে। তিনি বলেন, টমেটো ২২ টাকা কেজি কিনে ২৪ টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু আজ ২০ টাকায় ২ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছেন।

সবজির দাম কমায় খুচরা বিক্রেতারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আলমগীর নামের এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, ‘সবজি এখন অনেক সস্তা। তারা যত কমে কিনতে পারেন, তত কমে বিক্রি করেন। দাম কম থাকায় ক্রেতারা বেশি পরিমাণে বাজার করতে পারেন, ফলে তাদেরও লাভ হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মোরশেদ আল মাহমুদ বলেন, শীতের সবজির মৌসুম চলছে। আড়ত ও বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকায় সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে। তিনি জানান, মাছের আড়তে চাষের মাছের দাম কমছে। বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখা হচ্ছে। যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি না করতে পারে।

হাঁসের খামারে দিন বদল

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৮ এএম
হাঁসের খামারে দিন বদল
সুনামগঞ্জের হাওরে একটি হাঁসের খামার। বাসস

সুনামগঞ্জে দেশি হাঁসের খামার করে দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন তরুণরা। একসময় যাদের পরিবার কৃষিকাজ করে কোনোরকমে জীবন কাটাত। তারা এখন মাস শেষে লাখ টাকা উপার্জন করছেন। এই খামারে তাদের দিন বদল হয়েছে। খবর বাসসের।

সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের মনোয়ার হোসেন (৪২) প্রথম সফল হন হাঁসের খামার শুরু করে। তার দেখাদেখি এখন অনেক তরুণ হাঁসের খামারি হয়ে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন। 

মনোয়ারের পরিবারের ১৩ বিঘা কৃষিজমি ছিল। তাতে কোনোরকমে সংসার চলত। তিনি কৃষিকাজে বাবাকে সহায়তা করতেন, তবে বেকার ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি ৩৩ হাজার টাকা দিয়ে ১২৫টি হাঁসের বাচ্চা কিনে খামার শুরু করেন। পাঁচ মাস পর প্রথম ১০৯টি হাঁস ডিম দেওয়া শুরু করে। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মনোয়ারকে।

বর্তমানে তার খামারে এক হাজার হাঁস রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৭০০ হাঁস প্রতিদিন ডিম দেয়। প্রতিটি ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন ১১ হাজার ২৫০ টাকা আয় হয়। মাসে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা আয় হয়। খামারের খরচ, খাবার, ওষুধসহ মোট মাসিক খরচ ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তিনি চার কর্মীকে মাসিক বেতন দেন।

এই আয় থেকে তিনি কৃষিজমি কিনেছেন। তার বাবার ১৩ বিঘা জমির পাশাপাশি এখন তার কাছে ২৪ বিঘা জমি রয়েছে। ছোট ভাইয়েরাও এখন স্বাবলম্বী। এক ভাই গরু পালন করেন, অন্য ভাই কৃষিকাজে সম্পৃক্ত। মনোয়ারের পরিশ্রম এবং সফলতার ফলে তার পরিবার সুখী। 

তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। বড় ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দেবে, মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট ছেলে প্রথম শ্রেণিতে। হাঁসের খামারের আয়ে তিনি পরিবারের চিকিৎসা, খরচ ও ছেলেমেয়েদের শিক্ষা খরচ পূরণ করছেন। 

মনোয়ার বলেন, ‘এ বছরের এপ্রিলের শেষে হাঁসগুলো বিক্রি করব। তারপর মে মাসে নতুন বাচ্চা কিনব। পাঁচ-ছয় মাস পর তারা ডিম দেবে’। এভাবে হাঁসের খামারের আয় থেকে চলবেন। তিনি জানালেন, চট্টগ্রামের দুই-তিনটি কোম্পানি এপ্রিলের শেষের দিকে তার হাঁস কিনে নেবে। 

মনোয়ারের খামার দেখে তার চাচাতো ভাই ফয়সল আহমদও হাঁসের খামার শুরু করেন ২০১৫ সালে। প্রথমে তেমন লাভ না হলেও, মনোয়ারের পরামর্শে ফয়সল এখন সফল খামারি। তার খামারে সাড়ে ৪০০ হাঁস রয়েছে। ওই হাঁসগুলো ডিম দেয়। 

ফয়সল বলেন, ‘আমার বাবা পাওয়ার টিলার মেকানিক। এখন হাঁসের খামারের মাধ্যমে আমরা স্বাবলম্বী। বাবাকে আর কাজ করতে হয় না।’ 

হাওর অঞ্চলে হাঁসের খামার স্থাপন করা হয়েছে। মনোয়ার ও ফয়সল তাদের হাঁস হাওর থেকে নিয়ে খামারে 
এনে রাখেন। হাওরের মাছ ধরা শেষ হলে হাঁসের খামার সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। 

জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মনোয়ার হোসেন সফল ও অভিজ্ঞ হাঁসের খামারি। জেলায় প্রায় ২ হাজার ৮০০ হাঁসের খামার রয়েছে। যেখান থেকে বছরে ২৭ কোটি ৫৫ লাখ ১১ হাজার ডিম উৎপাদিত হয়।’

‘আমরা কৃষিবিপ্লব ঘটাতে পারব’

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪০ এএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
‘আমরা কৃষিবিপ্লব ঘটাতে পারব’
পেঁয়াজ খেত পরিচর্যা করছেন রায়হান আহমেদ। খবরের কাগজ

শ্রীমঙ্গলের খলিলপুর গ্রামে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে সফল হয়েছেন রায়হান আহমেদ। বাড়ির পাশের এক শতক জমিতে ৩০ গ্রাম বীজ ছিটিয়ে, প্রাকৃতিক সার ও সময়মতো পানি দিয়ে তিনি সফলতার মুখ দেখেছেন। পেঁয়াজগাছ বড় হয়ে উঠেছে, মাটির নিচে বড় বড় পেঁয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। 

রায়হান বলেন, ‘লালতীরের মাঠকর্মীরা এসে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের পরামর্শ দেন। আমি এক শতক জমি প্রস্তুত করে বীজ ছিটিয়ে দিয়েছিলাম। কিছুদিনের মধ্যে গাছের চারাগুলো উঠল। পরে ছত্রাকনাশকও প্রয়োগ করি। এখন পেঁয়াজ গাছগুলোতে বড় বড় পেঁয়াজ ফলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজের মতোই স্বাদ। এক শতক জমিতে চাষ করে সফল হওয়ায় এখন বড় জমি নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করার পরিকল্পনা আছে।’ কৃষি পরিবারের সদস্য হিসেবে রায়হান গর্বিত। তিনি বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পর লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষিতে জড়িয়ে পড়ি। সরকার ও কৃষি বিভাগের কাছে আমার আবেদন, কৃষকের পাশে দাঁড়ান। আমরা তরুণ চাষিরা কৃষিবিপ্লব ঘটাতে পারব।’

কৃষক জাহেল মিয়া বলেন, ‘রায়হান সফল হয়েছেন, আমরাও তার দেখাদেখি পেঁয়াজ চাষ করব।’ 

লালতীর সিড লিমিটেডের তাপস চক্রবর্তী বলেন, ‘সিলেটে আগে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়নি। আমরা রায়হানকে উদ্বুদ্ধ করি। বিজিএস ৪০৩ জাতের পেঁয়াজে ভালো ফলন হয়েছে। ৩০ গ্রাম বীজ দিয়ে এক শতকে চাষ করা যায়। ১৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের পেঁয়াজ হয়। কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।’ 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বলেন, ‘এখানে বৃষ্টি বেশি হয়, তাই গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ চ্যালেঞ্জ। তবে এবার খলিলপুরে ভালো ফলন হয়েছে। পেঁয়াজ চাষ লাভজনক। সরকারের পক্ষ থেকেও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, তবে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ করলে আমদানি কমে যাবে। রপ্তানি বাড়বে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন, আমদানিনির্ভরতা কমবে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।’

স্ট্রবেরি চাষে নজরুলের সাফল্য

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩১ এএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
স্ট্রবেরি চাষে নজরুলের সাফল্য
স্ট্রবেরি খেত পরিচর্যা করছেন নজরুল ইসলাম। খবরের কাগজ

২০১৪ সালে রাজশাহীতে এক কৃষককে দেখে স্ট্রবেরি আবাদে উদ্বুদ্ধ হন নজরুল ইসলাম। সেদিন থেকেই তিনি স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। প্রথমে দুই বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি আবাদ করলেও বর্তমানে চার বিঘা জমিতে আবাদ করছেন। তার সফলতা দেখে গ্রামের অন্য কৃষকরাও স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

স্ট্রবেরি একটি পুষ্টিকর, রসালো ও সুস্বাদু ফল। এ ফলের চাহিদা দেশ-বিদেশে প্রচুর। বিশেষ করে রাশিয়া, আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্ট্রবেরি চাষ হয়। বর্তমানে ঈশ্বরদীর ঈশ্বরদী ইউনিয়নে পলিথিন মালচিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্ট্রবেরি চাষ করছেন নজরুল ইসলাম। তিনি সফলতা অর্জন করেছেন এবং স্থানীয় কৃষি বিভাগও তাকে সহযোগিতা করেছে। 

২০১৪ সালে রাজশাহীতে গিয়ে নজরুল ইসলাম স্ট্রবেরি চাষের সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন। ধীরে ধীরে এ কাজে অভ্যস্ত হয়ে উঠেন। বর্তমানে তিনি নিজেই স্ট্রবেরি চারা উৎপন্ন করেন এবং এ কাজে লাভবান হচ্ছেন। 

নজরুল ইসলাম জানান, চার বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষে তার খরচ হয়েছে ৬ লাখ টাকা। যেখানে বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রম খরচ রয়েছে। বর্তমানে তিনি ১৮ হাজার স্ট্রবেরি চারা লাগিয়েছেন। আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল, উইন্টার ডন, থাইল্যান্ড ও বার-৩ জাতের স্ট্রবেরি তিনি চাষ করছেন। এসব জাত উচ্চ ফলনশীল এবং সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তিনি বলেন, ‘অক্টোবরে চারা লাগানো হয়। ডিসেম্বরের দিকে ফুল আসে। মার্চ মাসে ফল পাকে। এবারের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন আরও ভালো হতে পারে। প্রতি বিঘায় তিনি ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করতে পারেন। তার মোট আয় ১৮ থেকে ২১ লাখ টাকার মতো হতে পারে। লাভ হবে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

নজরুল ইসলাম আরও জানান, দুই-তিন বছর আগেও ঈশ্বরদীতে কোনো ব্যবসায়ী স্ট্রবেরি কিনতে আসতেন না। কিন্তু এখন ঢাকা, খুলনা, সিলেট, বগুড়া, কুষ্টিয়াসহ অন্যান্য শহর থেকে ব্যবসায়ীরা তার কাছে স্ট্রবেরি কিনতে আসছেন। 

ঈশ্বরদী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা মোতমাইন্না বলেন, ‘ঈশ্বরদী একটি ফল ও সবজি উৎপাদনকারী এলাকা। বর্তমানে নজরুল ইসলাম স্ট্রবেরি চাষে সফলতা পেয়েছেন। কৃষি বিভাগ তাকে সহায়তা দিয়েছে। তার সফলতা দেখে অন্য কৃষকরাও স্ট্রবেরি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।’

কুল চাষে খরচ কম লাভ বেশি

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২০ এএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
কুল চাষে খরচ কম লাভ বেশি
ছবি: সংগৃহীত

ধামরাইয়ের সূতিপাড়া ইউনিয়নের সিন্ধুলিয়া গ্রামে আবুল হোসেন কুল চাষ করে সফল হয়েছেন। ৬০ শতক জমিতে কুল চাষ করে তিনি অল্প খরচে ভালো লাভ পাচ্ছেন। প্রতি কেজি কুল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। আবুল হোসেনকে অনুসরণ করে অনেক যুবক কুল চাষ শুরু করেছেন। কুল চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। স্থানীয় বাজারে কুলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তা জানান, ধামরাইয়ে কুল চাষ লাভজনক।  

আবুল হোসেন বলেন, ‘যখন কুল চাষ শুরু করি, তখন চিন্তা ছিল, ফলন কেমন হবে? তবে এখন বুঝতে পারছি, এটি খুবই লাভজনক।’ তিনি কুলের আপেল জাত ও কাশ্মীরি জাতের গাছ লাগিয়েছেন। তবে বেশির ভাগই আপেল কুল গাছ। প্রতিটি গাছে প্রচুর কুল ধরেছে। তা দেখে তিনি অনেক খুশি। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন কিছু কুল বাজারে বিক্রি করছি, দামও ভালো পাচ্ছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ইউটিউব দেখে কুল চাষের অনেক কিছু শিখেছি। ৬০ শতক জমিতে কুল চাষ করতে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে। তবে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ হবে।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা রুস্তম আলী বলেন, ‘আমাদের গ্রামের অনেক শিক্ষিত যুবক কুল চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। তারাও কুল চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।’

কুল ব্যবসায়ী কালু মিয়া বলেন, ‘একটি কুল বাগান কিনে বছরে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় করা যায়। আবুল হোসেনের বাগান দেখে অন্যান্য গ্রামের অনেকেই কুল চাষ শুরু করেছেন। কুল চাষে খরচ কম এবং লাভ অনেক বেশি।’ 

ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কুল লাভজনক ফল। কুল চাষে খরচ কম এবং ফলন ভালো। এটি শীতের ফল হিসেবে বাজারে চাহিদা অনেক। ধামরাইর কৃষকরা সহজেই কুল ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পাঠাতে পারেন।’

গোলাপে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
গোলাপে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
গোলাপ ফুল চাষের পরিচর্যায় ব্যস্ত গদখালী এলাকার এক চাষি। খবরের কাগজ

আসন্ন বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীর গোলাপ চাষিরা স্বপ্ন বুনছেন। ইতোমধ্যে গোলাপ ফুলের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে দাম আরও বাড়বে বলে চাষিরা আশা করছেন। মাত্র তিন দিন আগেও যে গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৫ টাকায়। ওই গোলাপ এখন ৭-১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গদখালীর ফুলের মোকামে আসা হাঁড়িয়া গ্রামের কৃষক সোবাহান মোল্লা বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। আগে ফুলের তেমন দাম পাইনি। ৩ থেকে ৪ টাকায় প্রতি পিস ফুল বিক্রি করতে হয়েছে। এখন একটু দাম বেড়েছে। বাজারে প্রায় ১ হাজার ৫০০ পিস ফুল এনেছি। ৮ টাকা পিস ধরে গোলাপ বিক্রি করেছি। এবার অতিবৃষ্টির কারণে খুব বেশি লাভ হবে না। তবে সামনে দুই-এক দিন আরও দাম বাড়বে।’

আরেক চাষি জালাল উদ্দিন বলেন, ‘বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। যে গোলাপ ৩ থেকে ৫ পাঁচ টাকা দরে গত চার দিন আগে বিক্রি করেছি; ওই গোলাপ এখন ৭ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, অন্যান্য ফুলেরও দাম বেড়েছে। এখন জারবেরা প্রতি পিস বিক্রি করছি ১০ থেকে ১৫ টাকায় ও চন্দ্রমল্লিকা ৩ টাকায়। আশা করছি, আগামী চার দিন আরও ভালো দাম পাব।’

আকবর হোসেন নামে আরেক চাষি বলেন, ‘গোলাপের দাম মূলত সাইজ, রং ও সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে। প্রথম দিকে গোলাপের দাম বেশ কম পাচ্ছিলাম। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দাম বাড়ছে। খেতে যে ফুল রয়েছে, তা আগামীতে ১৫-১৬ টাকা দরে বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’ 

এদিকে গদখালীর টাওরা গ্রামের ফুলচাষি কামাল সরকার বলেন, ‘আমার কাছে যে চায়না গোলাপ রয়েছে, তার দাম প্রতি পিস ২৫ টাকা। দেখতে সুন্দর ও বেশ কয়েক দিন রাখা যায় বলেই এর দাম বেশি। ২৫ কাঠা জমিতে রয়েছে চায়না গোলাপ। আশা করছি, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এই গোলাপের দাম ৩০ টাকার বেশি পাব।’ 

উৎসবের বাজার ধরতে গোলাপের কলিতে ক্যাপ

বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে গোলাপ ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ। ফুল চাষিরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোলাপ ফুল বিক্রি করে বাড়তি টাকা রোজগার করেন। তবে মাঘেও শীত নেই। অনুভূত হচ্ছে গরম। এই গরমে ফুল সময়ের আগেই ফুটে যাচ্ছে। তাই দ্রুত ফুল কেটে ফেলতে হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফুলচাষিরা। এমন পরিস্থিতিতে ফুল চাষিরা তাদের ফুল সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করছেন ক্যাপ। যাতে আগাম ফুল ঝরে না পড়ে সেজন্য ফুলের কলি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপ পরিয়ে দিচ্ছেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই ফুল কাটা হবে। কিছু ফুল কাটা হবে বসন্তের দিন সকালে। আগাম ফুল কেটে রাখলে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এর চাহিদা যেমন থাকে না, তেমনি দামও পাওয়া যায় না। এজন্য যেন কলি না ফোটে এবং পাতা ঝরে না পড়ে সেজন্য তারা কলিতে ক্যাপ পরিয়ে দেন।

পানিসারা এলাকার নীলকণ্ঠ নগরের ফুলচাষি ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। ফুল ফুটেছে অনেক। তবে এখন ফুল কাটলে দাম বেশি পাব না। তাই ফুলের কলিতে ক্যাপ পরিয়ে রাখছি।

তিনি আরও বলেন, আগে আমরা রাবার দিয়ে কলি বেঁধে রাখতাম। এতে করে ফুলের পাতা নষ্ট হয়ে যেত। এ কারণে ক্যাপ পদ্ধতি ব্যবহার করছি। বিক্রি করার আগ পর্যন্ত কলিতে ক্যাপ পরানো থাকে। এতে ফুলের পাতা যেমন ঝরে পড়ে না, তেমনি ফুল নষ্টও হয় না। কয়েক বছর বছর ধরে তিনি ও এ এলাকার চাষিরা এভাবে ফুলের কলিতে ক্যাপ পরিয়ে রাখছেন বলে জানান।’

ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, চলতি মৌসুমে ফুলের উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আসন্ন বিশেষ দিবস ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং অন্তত শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির ব্যাপারে আশাবাদী তারা।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয় এবং এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। আসন্ন বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ব্যাপক ফুল বিক্রি হলে চাষিদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।