ঢাকা ১ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
English

ঝিনাইদহে ফুলচাষিদের ব্যাপক প্রস্তুতি

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৯ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০২ এএম
ঝিনাইদহে ফুলচাষিদের ব্যাপক প্রস্তুতি
ছবি: খবরের কাগজ

বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঝিনাইদহের ফুলচাষিরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। ফুলের চাষ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। চাষিদের আশা, এসব দিবস ঘিরে অন্তত শতকোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। এরই মধ্যে মাঠে শোভা পাচ্ছে রংবেরঙের ফুল। 

ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে জারবেরা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, লিলিয়াম, টিউলিপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসিসহ বিভিন্ন ফুলের জাত। এবারের মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে ফুলের উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক বেশি। চাষিরা এখন ফুলের পরিচর্যায় মনোযোগী, যাতে ফুলগুলো ভালোবাসা দিবস, বসন্ত উৎসব ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাজারে বিক্রির উপযোগী থাকে।

ফুলচাষি টিপু সুলতান বলেন, ‘ভালোবাসা দিবসে রজনীগন্ধা ও গোলাপ, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গাঁদা ফুল বেশি বিক্রি হয়। ফুলের মান ধরে রাখতে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার করছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফুলের উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে। দামও দিন দিন বাড়ছে।’ 

ফুলচাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর দুই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ৮ লাখ টাকা। আশা করছি, ৩০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারব।’ আর রেজাউল ইসলাম তার দেড় বিঘা জমিতে লাল, সাদা, কমলা, হলুদ এবং গোলাপি রঙের গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভালোবাসা দিবসের জন্য এই রঙের ফুলের কদর বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে।’ ঝিনাইদহের ফুলচাষিরা বিশ্বাস করছেন, এবারের ফুলের মৌসুম তাদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।

ঝিনাইদহ জেলা ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘সারা বছর ফুল বিক্রি কম হলেও এই তিন উৎসবের সময় ব্যবসা ভালো হয়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। এসব উৎসবের মাধ্যমে আমরা অন্তত শতকোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারব।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঝিনাইদহের ফুলচাষিরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফুলের চাহিদা মেটাচ্ছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় এই বছর ফুলের উৎপাদন বেশি হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের তুলনায় এবার বেশি টাকা আয় করবেন চাষিরা।’

টমেটোর ভালো ফলন পাচ্ছেন কৃষক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১১:৪২ এএম
টমেটোর ভালো ফলন পাচ্ছেন কৃষক
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় টমেটোখেত পরিচর্যা করছেন এক কৃষক। বাসস

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় কৃষকরা এখন টমেটো চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন। এতে খরচ কিছুটা বেশি হলেও লাভ হচ্ছে বেশি।

উল্লাপাড়া উপজেলার আলিয়ারপুর গ্রামের কৃষক নেজাব আলী মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। তিনি মানব মুক্তি সংস্থা (এমএমএস) থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর নিজ বাড়ির পাশে মাত্র ২৫ শতক জমিতে টমেটো চাষ শুরু করেন। অক্টোবরের শেষে চারা রোপণ করেন। বর্তমানে তার গাছে প্রচুর টমেটো ধরেছে।

নেজাব আলী জানান, ইতোমধ্যে তিনি ৮ মণ টমেটো বিক্রি করেছেন। তার মোট খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। বাজারে টমেটোর দাম কিছুটা কম থাকায় লাভের পরিমাণ কম হবে। তারপরও তিনি আশা করছেন, ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হবে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করলে জমির আর্দ্রতা ধরে রাখা যায়। এটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, রোগজীবাণু প্রতিরোধ করে ও অতিরিক্ত পানি রোধ করে। এ ছাড়া আগাছা হয় না। এতে সারের কার্যকারিতা বাড়ে।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি বলেন, ‘এ অঞ্চলের কৃষিতে বৈচিত্র্য আসছে। টমেটো চাষ করে নেজাব আলীর মতো অনেক কৃষক সফলতা পাচ্ছেন। স্থানীয় চাষিদের মধ্যে টমেটো চাষের আগ্রহ বাড়ছে।’ 

তিনি জানান, এ বছর উল্লাপাড়ায় মোট ৫১ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করলে জমিতে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি আর্দ্রতা সংরক্ষিত হয়। এতে ফলনও বাড়ে।

কৃষক নেজাব আলী বলেন, ‘মালচিং পদ্ধতি আমার জন্য লাভজনক হয়েছে। আমার সাফল্য দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন।’ স্থানীয় কৃষকরা এখন এ পদ্ধতিতে চাষের পরিকল্পনা করছেন।

মালচিং পদ্ধতিতে চাষ পদ্ধতি সহজ হলেও সঠিক পরিচর্যা দরকার। জমি তৈরি করে সার মিশিয়ে বেড প্রস্তুত করতে হয়। এরপর বেডের ওপর মালচিং পলিথিন বিছিয়ে দিতে হয়। পলিথিনের নিচে পানি যাতে না যায়, সে জন্য চারপাশে মাটিচাপা দিতে হয়। প্রতিটি চারা ১৮ ইঞ্চি দূরত্বে লাগাতে হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টমেটো পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। এ ছাড়া এতে আছে ভিটামিন সি, কেএ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লাইকোপিন। যেটা নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। সূত্র: বাসস

হালি পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাবনা ছয় লাখ টন

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫, ১১:৪০ এএম
হালি পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাবনা ছয় লাখ টন
খবরের কাগজ ফাইল

পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের অন্যতম প্রধান জেলা ফরিদপুর। এর মধ্যে সালথা, বোয়ালমারী ও নগরকান্দা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি হালি পেঁয়াজের চাষ হয়। বিশেষ করে সালথাকে বলা হয় পেঁয়াজের রাজধানী।

ফরিদপুর কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবার জেলায় প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টন হালি পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু সালথায় উৎপাদিত হবে দুই লাখ টন। বোয়ালমারীতে সাড়ে ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা পেঁয়াজ থেকে পাওয়া যাবে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৫ টন পেঁয়াজ।

বর্তমানে চাষিরা তাদের খেত পরিচর্যার শেষ পর্যায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কয়েকদিন পরই শুরু হবে পেঁয়াজ উত্তোলনের কাজ। এজন্য পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য বাঁশের বানা তৈরিতে এখন ব্যস্ত কারিগররা।

সালথার পেঁয়াজ চাষি আবু মোল্লা, ওবায়দুর, ফরিদ মোল্লা ও পলাশ মণ্ডল জানান, গত বছর ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় এবার আবাদ বেড়েছে। তবে মুড়িকাটা পেঁয়াজের বাজারদর আশানুরূপ নয়। তারা বলছেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে যে খরচ হয়েছে, তাতে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ২ হাজার টাকা না হলে লাভ হবে না। বিশেষ করে বর্গাচাষিদের লোকসানের শঙ্কা রয়েছে। চাষিরা বাজারে ন্যায্যমূল্যের দাবি জানিয়েছেন।
সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপ বিশ্বাস জানান, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। ১২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। যেটি গত বছরের তুলনায় বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জেলার পেঁয়াজ চাষিদের আশা, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হলে তাদের কষ্ট সার্থক হবে। মাঠে ভালো ফলন হওয়ায় এবার আশার আলো দেখছেন তারা। তবে বাজারদর সঠিক না হলে লাভের মুখ দেখবেন না অনেক চাষি।

ফরিদপুর কৃষি বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘জেলাজুড়ে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফরিদপুরের পেঁয়াজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা পূরণেও ভূমিকা রাখবে।’

ফলের পোকা দমনে বাকৃবির প্রযুক্তি উদ্ভাবন

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১১:২৯ এএম
ফলের পোকা দমনে বাকৃবির প্রযুক্তি উদ্ভাবন
ফলের মাছি-পোকা দমন করতে ফাঁদ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এক নারী। বাসস

ফলের মাছি-পোকা সারা বিশ্বের হর্টিকালচার শিল্পের জন্য একটি বড় বাধা। অনেক দেশ একে ‘কোয়ারেন্টাইন পেস্ট’ হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে সংক্রমিত ফল রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বাংলাদেশের আমসহ বিভিন্ন ফল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশে সমস্যার সম্মুখীন হয়।

এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর খান উদ্ভাবন করেছেন ‘ফ্রুট ফ্লাই ট্র্যাপ’। এটি একটি নতুন ও কার্যকর প্রযুক্তি।

বিভিন্ন দেশে মাছি পোকা দমনে নানান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় ‘মাসট্র্যাপিং পদ্ধতি’ প্রচলিত। এতে পুরুষ মাছি-পোকা আকৃষ্ট করে ধ্বংস করা হয়। ফলে স্ত্রী পোকার প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশে সাধারণত লিউর ও সাবান-পানির সংমিশ্রণে তৈরি ট্র্যাপ ব্যবহৃত হয়। তবে এসব পদ্ধতির কার্যকারিতা বজায় রাখা কঠিন।

ড. মঞ্জুর খানের উদ্ভাবিত ট্র্যাপে কীটনাশক বা পানি ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। লিউরের আকর্ষণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছি-পোকা সহজেই এতে প্রবেশ করে। কিন্তু বিশেষ নকশার কারণে একবার প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। ফলে ট্র্যাপের ভেতরে আটকা পড়ে মারা যায়।

গবেষকের মতে, ‘ফ্রুট ফ্লাই ট্র্যাপ’ কৃষকদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এটি কম খরচে উৎপাদন করা সম্ভব। কীটনাশকের ব্যবহার কমবে, ব্যয়ও হ্রাস পাবে। পাশাপাশি ফলের গুণগত মান বজায় থাকবে এবং পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই ট্র্যাপ কুমড়া, লাউ, করলা, তরমুজ, বাঙ্গি, আম, পেয়ারা ও ড্রাগন ফলের খেতেও কার্যকর।
একটি ট্র্যাপ তৈরিতে আনুমানিক ৫০ টাকা খরচ হতে পারে। এটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী। কৃষকরা একবার কিনলে অন্তত পাঁচ বছর ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু লিউর পরিবর্তন করলেই চলবে।

এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা ২০২০ সালে নিশ্চিত করা হয়। ২০২৩ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সম্মেলনে এটি উপস্থাপিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা এ উদ্ভাবনের প্রশংসা করেন। গবেষকরা মনে করেন, এর পেটেন্ট নিশ্চিত করা গেলে এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব হবে।

অধ্যাপক ড. মঞ্জুর খান ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে এ গবেষণা শুরু করেন। বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অর্থায়নে নিরাপদ আম উৎপাদনে এ ট্র্যাপের কার্যকারিতা নিয়ে আরও গবেষণা চলছে।

সবজির মধ্যে বাঁধাকপি, ব্রোকলি, গাজর এবং ফুলকপি জনপ্রিয় ও পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ ও তার নেতৃত্বে একদল গবেষক রঙিন সবজির নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন। এতে স্যাভয় ক্যাবেজ, বেগুনি ব্রোকলি, লাল বাঁধাকপি, বেগুনি ফুলকপি, রঙিন গাজর ও বিভিন্ন রঙের জুকিনি রয়েছে। এতে রঙিন সবজি রপ্তানির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সূত্র: বাসস

কেঁচো সার উৎপাদনে স্বাবলম্বী শাহজাহান

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:৫২ এএম
আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৬ এএম
কেঁচো সার উৎপাদনে স্বাবলম্বী শাহজাহান
নিজ খামারে জৈব সার উৎপাদন করছেন উদ্যোক্তা শাহজাহান। খবরের কাগজ

লক্ষ্মীপুরে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন  মো. শাহজাহান নামের এক যুবক। তার উদ্যোগ জেলার কৃষি খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শাহজাহানের উৎপাদিত কেঁচো সার ব্যবহার করে এখন বিষমুক্ত ফসল ও সবজি উৎপাদন করছেন এলাকার কৃষকরা। তার উদ্যোগ কৃষি ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী হয়েছে। বিশেষ করে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে মাটির গুণাগুণ ঠিক রাখতে সাহায্য করছে।

শাহজাহান সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম ছিল নজিব উল্লাহ। একসময় শাহজাহান ব্রিকফিল্ডে মাঝির কাজ করতেন। কিন্তু জীবনে কিছু ভিন্ন করতে চাইলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। প্রথমে দুটি রিং ব্যবহার করে শুরু করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার উৎপাদিত সারের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এর ফলে কৃষকরা তার উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্টের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

বাজারে চাহিদা বাড়লে শাহজাহান ‘বেইজিং ভার্মি কম্পোস্ট ট্রেডার্স’ নামে একটি খামার প্রতিষ্ঠা করেন। এ খামারে তিনি ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্থের ১১টি পৃথক হাউজ তৈরি করেন। প্রতিটি হাউজে ১২-১৪ কেজি গোবর ও ৫ কেজি কেঁচো দিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ১ টন কেঁচো সার উৎপাদন হচ্ছে। সব মিলিয়ে তার খামার থেকে মাসে ১২ টন কেঁচো সার উৎপাদিত হয়। যেটা তিনি প্রতি কেজি ১৫ টাকায় কৃষকের কাছে বিক্রি করেন।

কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কেঁচো সার ব্যবহার করে সবজি খেতের উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে আমাদের এলাকায় সবজি চাষ বেশি হয়। কেঁচো সার সবজির জন্য বেশ উপকারী। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে পারার কারণে খরচও কমে গেছে। এতে ফলনও ভালো হচ্ছে।’ কৃষক ওসমানও বলেন, ‘কেঁচো সার ব্যবহার করে খেতের ফলন ভালো হয়েছে। এটি মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখে।’

শাহজাহান বলেন, ‘কৃষকরা যাতে নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে পারেন, ওই লক্ষ্যেই কাজ করছি। প্রতি মাসে আমার খামারে উৎপাদিত দেড় লাখ টাকার কেঁচো সার বিক্রি করি। এতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো নিট আয় হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে প্রায় ২০০ কেজি কেঁচো রয়েছে। যেটা আমি বিক্রি করছি। বর্তমানে বেশ কয়েকজন নতুন উদ্যোক্তা আমার কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেছেন। ২৫ জন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান ইমাম বলেন, ‘নিয়মিত শাহজাহানের ভার্মি কম্পোস্ট খামার পরিদর্শন করি। কৃষকদের জন্য দিকনির্দেশনা দিই। কেঁচো সার মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায়। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে জমিতে কম খরচে বেশি ফসল উৎপাদন সম্ভব। আমরা কৃষকদের কেঁচো সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে কেঁচো সারের চাহিদা বেড়েছে। নতুন উদ্যোক্তারা এই খাতে আসছেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। এটি ঝুঁকি ও পরিশ্রম কমিয়ে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করতে পারে।’

নার্সারি ব্যবসায় চলে সংসার

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৪ এএম
নার্সারি ব্যবসায় চলে সংসার
নার্সারিতে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন ইমন মিয়া। খবরের কাগজ

ফুলের সৌন্দর্য আর ফলের তাজা রঙ মানুষের মন ভালো করে দেয়। তবে এসব বিক্রি করেই সংসার চালান মো. ইমন মিয়া। অভাবের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে নার্সারি ব্যবসাকে জীবনের সঙ্গী করেছেন তিনি। দাউদকান্দি পৌরসভার শহীদ রিফাত শিশু পার্কের সামনে ১০ থেকে ১২ বছর ধরে চারা বিক্রি করছেন ইমন।

ইমন জন্মসূত্রে দাউদকান্দি পৌরসভার উত্তর গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা। তবে ছোটবেলা কেটেছে মতলব উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামের মামার বাড়িতে। সেখানকার বাগানবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেন। কিন্তু বাবার অসুস্থতা এবং সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।

ইমন জানান, ‘বাবা অসুস্থ হওয়ায় সংসারের হাল ধরতে হয় আমাকে। আমাদের পৈতৃক ব্যবসা ছিল নার্সারি। বাড়িতে বিভিন্ন চারা তৈরি করে সপ্তাহে দুই দিন অটোরিকশায় করে বাজারে এনে বিক্রি করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার চারা বাজারে নিয়ে আসি। এতে মাসে গড়ে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় হয়। খরচ বাদে লাভ থাকে ২৫-৩০ হাজার টাকা। এই টাকায় আমাদের সংসার ভালোভাবেই চলে।’

চারা বিক্রির পাশাপাশি ইমন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। তবে ব্যবসার দায়িত্ব তিনি ছাড়তে পারেননি। নার্সারি ব্যবসা ও চাকরি দুই মিলিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি।

ইমনের বাবা মো. মিজান মিয়া বলেন, ‘আমি অসুস্থ হওয়ার পর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু আমার ছেলে পরিশ্রম করে সংসারটি সচ্ছল করেছে। এখন আর কোনো অভাব নেই। কিছু সঞ্চয়ও হয়েছে।’

গাজীপুর গ্রামের শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ইমন খুব ভালো ছেলে। একসময় অনেক কষ্টে ছিল তার পরিবার। কিন্তু নিজের চেষ্টায় সে এখন স্বাবলম্বী। তবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি, এটা দুঃখের বিষয়। আমি তাকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। ব্যবসার পাশাপাশি পড়াশোনা করলে সে আরও ভালো করতে পারবে।’

উপজেলা উপ-কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘ইমন একজন সফল নার্সারি ব্যবসায়ী। তার কাছে প্রচুর ফল, ফুল ও ঔষধিগাছের চারা পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে পরামর্শ নিতে আসে। কৃষি অফিস থেকে তাকে সহায়তা করি এবং ভবিষ্যতেও করব।’

ইমনের কাছ থেকে চারা কিনতে আসা ডাক্তার সাইফুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘ফুল ও ফলগাছ বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ায়। ইমনের কাছ থেকে চারা কিনছি কারণ ওর চারাগুলো ভালো এবং দামও কম।’

পরিশ্রম আর মেধা থাকলে জীবনে সফল হওয়া যায়। ইমন তার বাস্তব উদাহরণ। সংসারের দায়িত্ব নিতে পড়াশোনা ছেড়েছেন। তবে স্বপ্ন দেখেন আরও বড় কিছু করার। হয়তো একদিন তিনি পড়াশোনা শেষ করেও স্বপ্ন পূরণ করবেন।