ঢাকা ২৭ মাঘ ১৪৩১, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ মাঘ ১৪৩১

জাতিসত্তা-ধর্মনিরপেক্ষতার সাম্প্রতিক ‘কৌশলী প্রস্তাবনায়’ উদ্বেগ রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম
জাতিসত্তা-ধর্মনিরপেক্ষতার সাম্প্রতিক ‘কৌশলী প্রস্তাবনায়’ উদ্বেগ রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের
ছবি: খবরের কাগজ

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশে সামাজিক-সাংস্কৃতিক খাতে প্রভাবশালী মহলের নেতিবাচক প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীরা। জাতীয় সংগীত পরিবর্তন, জাতিসত্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে ‘অনভিপ্রেত কৌশলী প্রস্তাবনায়’ তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন। 

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের ৪৩তম বার্ষিক অধিবেশনের শেষ দিনের সমাপনী অনুষ্ঠানে ‘সম্মেলন ঘোষণা’য় এসব কথা বলা হয়। ঘোষণাটি পাঠ করেন শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা। 

এর আগে সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের ৪৩তম বার্ষিক অধিবেশনের সমাপনী দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। বুলবুল ইসলামের নেতৃত্বে সারা দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিরা শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। সকাল ১০টায় ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মফিদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সম্মেলনে আর্থিক প্রতিবেদন পেশ করেন কোষাধ্যক্ষ নাসেহুন আমীন। প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বুলবুল ইসলাম ও লাইসা আহমদ লিসা। সারা দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিরা বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন। 

পরে বিকেলে সমাপনী অধিবেশনে মফিদুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক, একুশে পদকে ভূষিত খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী (রনবী)। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জহিরুল হক খান। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন লাইসা আহমদ লিসা। রবীন্দ্রপদক ও গুণী সম্মাননা প্রদান করা হয় বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ারকে। প্রয়াত শিল্পীর পক্ষ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন সারোয়ার ই আলম। শুরুতেই জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সব হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান লাইসা আহমদ লিসা। 

পরে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতির সামাজিক-সাংস্কৃতিক অভিঘাত সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়। তবে উল্লিখিত নেতিবাচক প্রবণতাগুলো প্রভাবশালী মহলের দ্বারা পরিপুষ্ট হওয়ার বিভিন্ন ইঙ্গিত লক্ষ করে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর লালন, রবীন্দ্রনাথ, জয়নুল এবং মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভাঙচুর অশনিসংকেত বহন করে। এই শঙ্কার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত জাতীয় সংগীত পরিবর্তন, জাতিসত্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ে অনভিপ্রেত কৌশলী প্রস্তাবনা।’ 
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আবহমান বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার নির্বিঘ্ন পথযাত্রা নিশ্চিত করতে আহ্বান আসে সম্মেলন ঘোষণায়। লাইসা আহমদ বলেন, ‘জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ বিশ্বাস করে, প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, ইতিহাস-ঐতিহ্য, বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-আয়োজন তার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে, আপন সংস্কৃতি হয়ে ওঠে জাতি পরিচয়ের প্রধান নির্ধারক। জাতীয় সংস্কৃতি স্বাভাবিক গতিতে চলমান থাকে, বহিস্থ উপাদান গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়।’ 

সহিষ্ণু সমাজ গঠনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনকর্ম অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন লাইসা। তিনি বলেন, ‘আজ যখন স্বদেশে মতাদর্শগত কারণে বিভাজিত সমাজের সাংঘর্ষিক রূপ পরিলক্ষিত হয়, বিশ্বায়নের যুগে জাতীয় সংস্কৃতির সুরক্ষা জটিল হয়ে পড়ে, ফিলিস্তিনে শিশুহত্যা চলে, তখন রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্ম আমাদের বিশ্বশান্তি এবং দেশে সহিষ্ণু উদার মানবিক সমাজ গড়তে অনুপ্রাণিত করে।’

পরে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন খন্দকার খায়রুজ্জামান কাইয়ুম, মনসুরা বেগম, মেজবাহুল আলম, সুমা রায়, প্রকৃতি রায় সাঁঝ, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, তাজমিনুর রহমান, রানা সিনহা, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সিরাজুস সালেকীন, শম্পা আচার্য, বুলবুল ইসলাম, এ টি এম জাহাঙ্গীর, লাইসা আহমদ লিসা, তানিয়া মান্নান, বিথী পাণ্ডে, ঝুমা খন্দকার, পূরবী দে সেমন্তী, মৃদুল চক্রবর্তী, নুরজাহান বেগম শ্যামলীনা, মহাদেব ঘোষ, দিবাকর বিশ্বাস, শিমু দে, ইলোরা আহমেদ শুক্লা, আজিজুর রহমান তুহিন, শামা জয়নাব। লোকসংগীত পরিবেশন করেন চন্দনা মজুমদার, শ্রীকৃষ্ণ গোপাল এবং সাগর বাউল। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন সিলেটের ‘নৃত্যশৈলী’। 

এ ছাড়া একক নৃত্য পরিবেশন করেন অমিত চৌধুরী, সুইটি দাশ, তাথৈ।

মেহেদী/ 

শিল্পী নাজমুন নাহার রহমানের ‘ক্যানভাসে বিমূর্ত নারী মন’ একক প্রদর্শনী

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৯ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৫ পিএম
শিল্পী নাজমুন নাহার রহমানের ‘ক্যানভাসে বিমূর্ত নারী মন’ একক প্রদর্শনী
শিল্পী নাজমুন নাহার রহমান অ্যাক্রেলিক ও মনোপ্রিন্টের ক্যানভাসে চিত্রিত করেছেন শহুরে নারীর মন৷ ছবি: খবরের কাগজ

শিল্পী নাজমুন নাহার রহমান অ্যাক্রেলিক ও মনোপ্রিন্টের ক্যানভাসে চিত্রিত করেছেন শহুরে নারীর মন৷ নগরনাব্যের নতুন অধ্যায়ে কাঠামোবদ্ধ নগর জীবনে একজন নারী তার প্রকৃতিকে আবিস্কার করেন। প্রকৃতির সঙ্গে নারীর অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র ধরা দেয় আলোছায়ার বিচিত্র খেয়ালে৷ কখনো সুরেলা পাখি, কখনো শহরতলি ছুঁয়ে যাওয়া ছোট্ট নদী কিংবা শহর শেষে খোলা প্রান্তর; শহুরে নারী বিমুগ্ধ হন প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গে৷

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে শুরু হয়েছে তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী 'প্রবাহমান দৃষ্টিভঙ্গি।' 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার খবরের কাগজকে বলেন, এ প্রদর্শনীর আয়োজন নিয়ে গত দুই বছর থেকে ভাবছিলাম৷ এর আগে ভারত, জাপান, ফ্রান্স, নেপাল, যুক্তরাষ্ট্রে দলীয় প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলাম৷ এবার ভাবলাম, একক প্রদর্শনী করা যাক৷

'প্রবাহমান দৃষ্টিভঙ্গি' প্রদর্শনী নিয়ে শিল্পী বলেন, আমার বেড়ে উঠার সবটুকু এই শহরে৷ গ্রামের খুব স্মৃতি নেই৷ এ শহরে এত দিন ধরে আছি৷ এখানেই আমার মাতৃত্বের শুরু৷ তাই এ শহরে আমার দেখা জীবনটাকে রঙিন ক্যানভাসে চিত্রিত করতে চেষ্টা করেছি৷

নাজমুন নাহার ২০টি ছবি অ্যাক্রেলিকের ক্যানভাসে ও চারটি ছবি মনোপ্রিন্টের ক্যানভাসে এঁকেছেন৷ কিউবিজম ও ইমপ্রেশেনিলিজম- এ দুই ফর্মে তিনি এঁকেছেন 'উইমেন উইথ চিলড্রেন', 'উইমেন উইথ ফ্লাওয়ার', 'ফ্রিডম অব উইমেন', 'লকড ড্রিমস', বিহাইন্ড দ্য মাইন্ডস',  'লাভ ফর আরবানস' ছবিগুলো৷

নাজমুন নাহার বলেন, উনিশ শতকের শুরু থেকে মডার্ন আর্টের শুরু৷ তখন চিত্রকলায় আধুনিকতা ফুটিয়ে তুলতে শিল্পীরা কিউবিজমের চর্চা শুরু করেন৷ সমসাময়িক ঘটনাবলী ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে তখন এ ফর্মের আশ্রয় নিয়েছি আমি৷

নাজমুন নাহারের এই প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক আলভী ও শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক৷

শিল্প সমালোচক জাহিদ মুস্তাফা বলেন, লোকনকশার নানা জ্যামিতিক গড়নের প্রতি নাজমুন নাহারের ঝোঁক লক্ষ্য করা গেছে। চিত্রপটে রং প্রয়োগেও লোকশিল্পীর পছন্দসই বর্ণলেপনেই তার অধিক আস্থা। এ প্রদর্শনীর কাজগুলো লোকজ অঙ্কনরীতিতে তিনি এঁকেছেন নারী অবয়ব, মা ও শিশুর ফর্ম, পাখ-পাখালি, মাছ, কুলসহ ফুলগাছ প্রভৃতি। আদিযুগের শিল্পরূপের সঙ্গে তার কাজের অন্তমিলও পাওয়া যায়। দৃশ্যমান শিল্পের সঙ্গে বসবাসের মধ্য দিয়ে একপ্রকার আত্মকথন তার কোনো কোনো কাজে প্রতিভাত হয়েছে। আবার প্রকৃতির ছন্দকে তিনি নকশার বুননে তুলে এনেছেন বর্ণিল রূপে। এক্ষেত্রে তার নকশাপ্রধান কাজগুলো সিন্দময় রৈখিক ও পরিচ্ছন্ন।

আগামী বুধবার পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত  উন্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনী৷

জয়ন্ত সাহা/এমএ 

দেব-দেবীর বন্দনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ছায়ানটের নৃত্য উৎসব

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম
দেব-দেবীর বন্দনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ছায়ানটের নৃত্য উৎসব
ছবি: খবরের কাগজ

রাজধানী ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত দুই দিনের নৃত্য উৎসবের সমাপনী আসর ছিল আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। এ দিন ভরতনাট্যম, কত্থক ও মণিপুরি নৃত্যের মধ্য দিয়ে হিন্দু পুরাণের দেব-দেবীদের মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়। শাস্ত্রীয় নৃত্যের এমনই এক মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা কেটেছে শনিবার। 

এর আগে ভরতনাট্যম, কত্থক, মণিপুরি, ওড়িশি নৃত্যের প্রথিতযশা শিল্পীদের অংশগ্রহণে গতকাল শুক্রবার ছায়ানট মিলনায়তনে শুরু হয় এই নৃত্য উৎসব।

শুরুতে মণিপুরি নৃত্যে তেওড়া তালে ‘গণেশ বন্দনা’ পরিবেশন করেন শিল্পী সুইটি দাস চৌধুরী। মণিপুরি নৃত্যে সামিনা হোসেন প্রেমা পরিবেশন করেন শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রতি ভক্তের অচলা ভক্তি। শুক ও সারি নামে দুই তোতা পাখির বাগ্যুদ্ধে মহাভারতের দুই চরিত্রের রূপ ও মাহাত্ম্য বর্ণিত হয় এই নৃত্য প্রযোজনায়। 

এ ছাড়া তানচাপ, মেনকূপ ও তিনতালে মণিপুরি নৃত্যে ‘দশাবতার’ পরিবেশন করেন সিলেটের একাডেমি ফর মণিপুরি কালচার অ্যান্ড আর্টসের শিল্পীরা। এ নৃত্য প্রযোজনায় ভগবান শ্রীবিষ্ণুর মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়। 

সূর্য দেবতার মাহাত্ম্য বর্ণনায় ভরতনাট্যম ‘সূর্য কৌতূভাম’ পরিবেশন করেন অমিত চৌধুরী। রাগ বৃন্দাবনী ও তাল আদিতে নির্মিত এ নৃত্যে শিল্পী সূর্য দেবতার নানা ভূমিকা ফুটিয়ে তোলেন। তাল রূপক ও রাগ সাভেরীতে নৃত্য দল সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের শিল্পীরা পরিবেশন করেন ভরতনাট্যম ‘জাতিস্বরম’। 

নৃত্য পরিচালনা করেন আনিসুল ইসলাম হিরু। পরে অমিত চৌধুরীর দল ‘কায়াশ্রম’-এর শিল্পীরাও ভরতনাট্যমে সম্মেলক পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে ওঠেন। 

আদি শঙ্করাচার্যের কাব্যিক স্তোত্র ‘রাজরাজেশ্বরী অষ্টকম’ পরিবেশন করেন বৃষ্টি ব্যাপারী। ‘দেবী স্তুতি’ শিরোনামের এ নৃত্য প্রযোজনায় দেবী কালী, পার্বতী ও সরস্বতীর ঐশ্বরিক গুণাবলি বর্ণনা করেন শিল্পী। রাগ রাগমালিকা ও তাল আদিতে নির্মিত ছিল এ নৃত্য। এ প্রযোজনায় মানবজীবনের অন্তর্নিহিত দ্বিধা ও সংকট দূর করতে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের কথাও বলা হয়। 

তা ছাড়া তাল ত্রিতালে মো. মাসুম হুসাইন শুদ্ধ কত্থক, নৃত্যের নানা আঙ্গিক-চলন, ঠাট, উঠান, আমাদ, পরন আমাদ, লড়ি উপস্থাপনায় মুগ্ধ করেন দর্শকদের। 

জয়ন্ত সাহা/মাহফুজ

 

 

ছায়ানটের নৃত্য উৎসব শুরু

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৬ পিএম
ছায়ানটের নৃত্য উৎসব শুরু
ভরতনাট্যম, কত্থক, মণিপুরি, ওড়িশি নৃত্যের প্রথিতযশা শিল্পীদের অংশগ্রহণে নৃত্য উৎসবে নৃত্য করেছেন শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভরতনাট্যম, কত্থক, মণিপুরি, ওড়িশি নৃত্যের প্রথিতযশা শিল্পীদের অংশগ্রহণে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ছায়ানট মিলনায়তনে শুরু হয়েছে দুই দিনের নৃত্য উৎসব। উৎসবের প্রথম দিন সাজানো হয়েছিল একক ও সম্মেলক পরিবেশনায়।

নৃত্য উৎসবের প্রথম দিনের প্রথম পর্বে মঞ্চে আসেন মণিপুরি নৃত্যশিল্পীরা। শুরুতে ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মেলকভাবে পরিবেশন করেন মণিপুরি নৃত্য ‘রাধানর্তন’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান তামান্না রহমান পরিবেশন করেন ‘রাধারূপ বর্ণন’। ফারহানা আহমেদ পরিবেশন করেন ‘লাস্য তাণ্ডব’। ছায়ানটের শিক্ষক সুদেষ্ণা স্বয়ংপ্রভা তাথৈ পরিবেশন করেন ‘ননী চুরি’। 

ভরতনাট্যমে নওগাঁ থেকে আসা শিল্পী লাবীবা আলম রায়তা পরিবেশন করেন ‘কীর্তানাম’, প্রান্তিক দেব পরিবেশন করেন ‘রুদ্র তাণ্ডব’। 

জুয়েইরিয়াহ মৌলি পরিবেশন করেন ‘দেবী স্তুতি’। পরে ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মেলকভাবে পরিবেশন করেন ‘তিল্লানা’। ওড়িশি নৃত্যে আফিয়া ইবনাত হালিম পরিবেশন করেন ‘অভিনয়’। নৃত্যদল নৃত্যছন্দ পরিবেশন করে ‘হংসধ্বনিপল্লবী’।  নৃত্যাঞ্চল পরিবেশন করে ‘তারানা’। পরে কত্থকে এস এম হাসান ইশতিয়াক ইমরান তাল ধামারে পরিবেশন করেন ‘ছন্দ প্রসঙ্গ’। মুনমুন আহমেদ তাল ধামারে পরিবেশন করেন ‘শিব বন্দনা’। হাসান ইশতিয়াক ইমরানের কাথাকিয়া দ্য সেন্টার অব আর্টস-এর শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘তারানা’। 

শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ছায়ানট মিলনায়তনে শুরু হবে নৃত্য উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব। এদিন মণিপুরি নৃত্য পরিবেশন করবেন সুইটি দাশ, সামিনা হোসেন প্রেমা ও সিলেটের একাডেমি ফর মণিপুরি কালচার অ্যান্ড আর্টস। ভরতনাট্যম পরিবেশন করবেন অমিত চৌধুরী ও তার দল কায়াশ্রম; দলীয় পরিবেশনায় থাকবে আনিসুল ইসলাম হিরুর দল সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার। ভরতনাট্যমে একক পরিবেশনায় থাকবেন বৃষ্টি বেপারী। 

শনিবার সন্ধ্যায় ওড়িশি নৃত্য পরিবেশন করেন চট্টগ্রামে প্রমা অবন্তী ও ঢাকার মো. জসিম উদ্দীন। কত্থক পরিবেশনায় থাকবেন মাসুম হুসাইন; রেওয়াজ পারফরমারস স্কুল; কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়; সুদেষ্ণা সাহা ও সমৃদ্ধা শামস ঐন্দ্রী।

উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন শুরু

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০১ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩২ পিএম
উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন শুরু
ছবি: খবরের কাগজ

শত ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে সমতার মন্ত্রে লড়াই অব্যাহত রাখার প্রত্যয় নিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুরু হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ৩টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেনের ঘনিষ্ঠ সহচর, প্রবীণ কৃষক নেতা লীনা চক্রবর্তী।

তিন দিনব্যাপী উদীচীর এবারের জাতীয় সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘আমরা তো লড়ছি সমতার মন্ত্রে, থামব না কখনোই শত ষড়যন্ত্রে’। উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী আয়োজনের শুরুতে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সম্মেলনের উদ্বোধক লীনা চক্রবর্তী। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। এরপর নেতারা ও অতিথিরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাক-ঢোল-কাঁশি বাদনের সঙ্গে আনন্দে উদ্বেলিত হন সারা দেশ থেকে আসা উদীচীর হাজারও শিল্পী-কর্মী। এরপর একটি বর্ণিল শোভাযাত্রা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে ফিরে আসে।

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন লীনা চক্রবর্তী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাফিউর রাব্বি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।

আলোচনার পর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের শিল্পীদের উদ্বোধনী পরিবেশনা গীতি-নাট্যালেখ্য ‘প্রতারিত চিরকাল’ দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। গীতি-নাট্যালেখ্যটি গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম।

এবারের জাতীয় সম্মেলনের ‘সম্মেলন সংগীত’ পরিবেশন করেন শাওন কুমার রায়। প্রথম দিনের পরিবেশনায় আরও ছিল বিভিন্ন বিভাগ থেকে উদীচীর সেরা জেলাগুলোর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ দিন সমবেত গণসংগীত পরিবেশন করে উদীচী মাদারীপুর ও চট্টগ্রাম জেলা সংসদ। গীতিআলেখ্য পরিবেশন করে উদীচী নারায়ণগঞ্জ জেলা সংসদ। উদীচী দিনাজপুর জেলা সংসদের শিল্পীরা পরিবেশন করেন নৃত্যনাট্য ‘নকশীকাঁথার মাঠ’। ছিল সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের দলীয় পরিবেশনা। এ ছাড়া একক সংগীত পরিবেশন করেন মায়েশা সুলতানা ঊর্বি এবং একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন সুপ্রভা সেবতী। 

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনি আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে শুরু হবে সম্মেলনের সাংগঠনিক বা কাউন্সিল অধিবেশন। দিনব্যাপী নানা সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার পর সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। 

আগামী শনিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে সম্মেলনের তৃতীয় ও সমাপনী দিনের কার্যক্রম। সারা দিন নানা সাংগঠনিক পর্ব শেষে পরবর্তী দুই বছরের জন্য নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন।

মাহফুজ

 

কলকাতা বইমেলায় উদার আকাশ প্রকাশনীর ৯ গ্রন্থ প্রকাশিত

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম
কলকাতা বইমেলায় উদার আকাশ প্রকাশনীর ৯ গ্রন্থ প্রকাশিত
কলকাতা বইমেলায় উদার আকাশ প্রকাশনীর গ্রন্থ প্রকাশনা অনুষ্ঠান

৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় উদার আকাশ প্রকাশনীর ৯টি গ্রন্থ বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এই গ্রন্থগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়।

এর মধ্যে ‘মোস্তাক হোসেন : জীবন ও ঐতিহ্য’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও সাহিত্যিক উজ্জ্বল সিনহা। 

বুধবার বইমেলার নারায়ণ সান্যাল সভাঘরে কবি সুবোধ সরকার, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. গৌতম পাল, সাবেক মন্ত্রী ও কলামিস্ট পূর্ণেন্দু বসু, সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রাবন্ধিক ড. মইনুল হাসান, কাজী মুহাম্মদ ইয়াসীন, রফিকুল ইসলাম, সুধাংশুশেখর দে প্রমুখের উপস্থিতিতে বইগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়। 

এ দিন সন্ধ্যায় ছায়ানটের (কলকাতা) সভাপতি সোম‍ঋতা মল্লিক ও তার সংস্থার শিল্পীরা কাজী নজরুল ইসলামের দেশাত্মবোধক সংগীতের মধ্য দিয়ে বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন।

অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতা ‘প্রশ্ন’ ও ‘দুষ্টু’ আবৃত্তি করেন রাইসা নুর। 

যেসব গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়, সেগুলো হলো কলামিস্ট ও অধ্যাপক ড. অর্ণব সাহার প্রবন্ধ সংকলন ‘রাজনৈতিক কলাম: কর্তৃত্ববাদ বনাম আজকের ভারত’, সামশুল আলমের গল্প সংকলন ‘রূপের বাতি’, আলমগীর রাহমানের কাব্যগ্রন্থ ‘ফেক প্রোফাইলের বাগান বাড়ি’, বৃন্দাবন দাসের কাব্যগ্রন্থ ‘সত্যি সত্যি’, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আফসার আলির প্রবন্ধ সংকলন ‘আমার সমাজ’, অধ্যাপক ড. সা’আদুল ইসলামের প্রবন্ধ সংকলন ‘জাতির বিবেক অন্নদাশঙ্কর’৷

এ দিন ‘উদার আকাশ আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা বিশেষ সংখ্যা’ উদ্বোধন করেন কবি সুবোধ সরকার ও অধ্যাপক ড. গৌতম পাল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন লেখক-সম্পাদক-প্রকাশক ও গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে, সমাজকর্মী কাজী মুহাম্মদ ইয়াসীন, ছায়ানটের কর্ণধার সোমঋতা মল্লিক, অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, রফিকুল ইসলাম, ডা. মো. আবেদ আলি, আকরাম খান, আলাউদ্দিন খান, সামিমা মল্লিক, আসিফ ইকবাল, সীমন্ত বসু, উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ফারুক আহমেদ, পত্রিকার সহ-সম্পাদক মৌসুমী বিশ্বাস ও রাইসা নুর।

এ দিন আল-আমিন মেমোরিয়াল মাইনরিটি কলেজের অধ্যক্ষ ড. নুরুল হককে সম্মাননা দেওয়া হয়। উপস্থিত বিশিষ্টজনরা উদার আকাশ প্রকাশনীর প্রশংসা করেন। প্রকাশক ফারুক আহমেদের বইমুখী কাজকর্মে সন্তোষ প্রকাশ করে সবাইকে বই কেনা ও বই পড়ার আহ্বান জানান।

সম্প্রতি উদার আকাশ প্রকাশনের গ্রন্থগুলোর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বইমেলায় হাতে-গোনা তরুণ প্রকাশকদের মধ্যে বর্তমানে অন্যতম হয়ে উঠেছেন ফারুক আহমেদ। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত উদার আকাশ পত্রিকাটিও সাহিত্যজগতে বিপুল সাড়া ফেলেছে। প্রকাশন থেকে প্রকাশিত সব গ্রন্থ পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার ৫৯৫ নম্বর স্টলে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কবি সুবোধ সরকার, অধ্যাপক ড. গৌতম পাল, লেখক পূর্ণেন্দু বসু, অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, সমাজকর্মী কাজী মুহাম্মদ ইয়াসীন, সুধাংশুশেখর দে প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রকাশক ফারুক আহমেদ ও অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. মইনুল হাসান।

সালমান/