
মেহেরপুরে দিন দিন কমছে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা। চর্চার অভাব, অর্থনৈতিক দৈন্যের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের অনাগ্রহকেই এর জন্য দায়ী করছেন সংস্কৃতিপ্রেমীরা। আগের তুলনায় মঞ্চ অনুষ্ঠানের পরিমাণ কমে যাওয়ায় শিল্পীরাও সময় কাটাচ্ছেন ঘরে বসে। জাতিকে বাঁচাতে সংস্কৃতি চর্চা বাড়ানোর দাবি সংশ্লিষ্টদের।
একসময় গান-বাজনা, নাটক, যাত্রা কিংবা সাহিত্যচর্চা ছিল জেলার প্রতিটি প্রান্তে। নানা সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিভা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতেন কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা। কিন্তু প্রতিনিয়তই কমছে সংস্কৃতিচর্চা। নেই আগের মতো প্রতিযোগিতাও। এমন অবস্থায় অঙ্কুরেই হারিয়ে যাচ্ছেন অনেক শিল্পী। সঠিক মূল্যায়নের অভাব, আর্থিক দৈন্য এবং ক্যারিয়ার সৃষ্টি না হওয়াকেই দুষছেন তারা। শিল্পীরা বলছেন, এসব কারণে তৈরি হচ্ছে না নতুন শিল্পী।
সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি তাদের। পরবর্তী প্রজন্মকে সংস্কৃতি চর্চায় আগ্রহী করতে অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
জেলা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার মূল দায়িত্ব জেলা শিল্পকলা একাডেমির। প্রতিষ্ঠানটিকে শিল্পকলা চর্চায় পদক্ষেপ নিতে তেমন একটা দেখা যায় না। অভিযোগ রয়েছে, সংস্কৃতি চর্চার চেয়ে কমিটির নেতারা রাজনীতি নিয়েই বেশি আগ্রহী থাকেন। তবে জেলা প্রশাসন দাবি করছে, শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। ২০২১ সালের তথ্যমতে, মেহেরপুর জেলায় ৬১টি সাংস্কৃতিক সংগঠন কাজ করছে।
এ বিষয়ে কবি মেহের আমজাদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্যে আগে নানা আয়োজন লক্ষ করা যেত। কিন্তু এখন সে চর্চা নেই বললেই চলে। সংস্কৃতি চর্চা না বাড়াতে পারলে জাতি ধ্বংসের দিকে যাবে।’
জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যান্ড শিল্পী আফসারুল হক সুমন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগের চেয়ে শিল্পীদের মূল্যায়ন কমেছে। সরকারিভাবে নানা উদ্যোগও তেমন একটা চোখে পড়ে না। শিল্পীদের অর্থনৈতিক দৈন্য বেড়েছে। ফলে অনেকেই এখন শিল্পচর্চা থেকে বিরত থাকছেন।’
অভিভাবক ফজলুল হক মন্টু খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার সন্তানকে সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে সংযুক্ত করতে চাই। কিন্তু বারবার পিছিয়ে যাচ্ছি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বেহাল দশা দেখে আমরাও আগ্রহী হচ্ছি না। সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে সংগঠক, শিল্পকলা এবং সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
সংস্কৃতির সংগঠকরা বলছেন, নতুন করে সংগঠক তৈরি না হওয়ার ফলে অনেক সংগঠনই খেই হারিয়েছে চলার পথে। মেহেরপুরে শতাধিক সংগঠনের স্থানে এখন হাতে গোনা দু-চারটি সংগঠন কাজ করছে। এসব অনুষ্ঠান আয়োজনে সরকারকে অর্থনৈতিক বরাদ্দ দেওয়া উচিত বলেও জানান তারা।
অরণি থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা নিশান সাবের খবরের কাগজকে বলেন, ‘সংগঠনগুলো ঝিমিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ শিল্পকলার রাজনীতি। বিভিন্ন সময় প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে শিল্পকলার কমিটি গঠন করায় মূল সংগঠকদের কাজের প্রতি অনীহা বেড়েছে। সংস্কৃতি বাঁচাতে সাংস্কৃতিক ক্লাবগুলোকে বাঁচাতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিল্পকলার ভূমিকা সব থেকে বেশি।’
ভৈরব সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব থেকে বর্তমান প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই। শিল্পীদের আর্থিক সংকট নিরসনে সরকারি সহযোগিতা আরও বাড়ানো দরকার।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির একটি নির্বাচিত কমিটি ছিল। কিন্তু গত বছর তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি। জেলা শিল্পকলার বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি)
সাজ্জাদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘একাডেমির পাশাপাশি সংগঠনগুলোর মাধ্যমে সংস্কৃতি চর্চা বাড়ানোর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। শিল্পকলাকেন্দ্রিক সরকারি নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।