আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে তিন মহীয়সীকে সম্মাননা দেবে ছায়ানট কলকাতা। তারা হলেন- রূপশ্রী ভট্টাচার্য্য, র্যাচেল ফেল ম্যাকডরম্যাট এবং মনোয়ারা খাতুন।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উইসডম্ ট্রি ক্যাফেতে ‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সংগঠনটি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ‘পুবের কলম’ পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন ড. শেখ মকবুল ইসলাম ও শুভজিৎ পাকড়াশী।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করবেন তন্ময় রায়চৌধুরী এবং পরিকল্পনা ও পরিচালনায় রয়েছেন সোমঋতা মল্লিক।
অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করবেন দেবযানী বিশ্বাস, ইন্দ্রাণী লাহিড়ী, সুকন্যা রায়, তিস্তা দে, সৃজিতা ঘোষ, রাজশ্রী বসু, অনিন্দিতা ঘোষ, শর্মিলা পাল, টুটুন দাস, প্রাযুক্তা চক্রবর্তী, আর্যদ্যুতি ঘোষ, অর্ঘ্যদ্যুতি ঘোষ, সোহালিয়া সিং, দেবলীনা চৌধুরী, রাজ্যশ্রী দাস এবং মৌমিতা ঘোষ। দলীয় পরিবেশনায় থাকবে বৈখরী।
যাদের সম্মাননা দেওয়া হবে তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী-
রূপশ্রী ভট্টাচার্য্য
রূপশ্রী ভট্টাচার্য্যের তালিম শুরু হয় কণ্ঠসংগীতে তাঁর বাবা দুর্গাচরণ ভট্টাচার্য্যের কাছে। সংগীতের পরিবেশে বেড়ে উঠা রূপশ্রী এরপর শিক্ষাগ্রহণ করেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিদূষী শিপ্রাবোসের কাছে। ১৯৯৬ সালে তিনি পদ্মভূষণ পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমির স্কলার হিসেবে পথচলা শুরু করেন।
পাশাপাশি তিনি ধ্রুপদ এবং ধামারের তালিম গ্রহণ করেন ফাল্গুনী মিত্রের কাছে। পরবর্তী সময়ে তিনি একজন সুচিন্তিত এবং সুদক্ষ সহযোগী হারমোনিয়াম বাদক হিসেবে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে যোগ দেন এবং ২০০২ সাল থেকে আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমির সঙ্গে যুক্ত আছেন।
বিভিন্ন সময় তিনি দেশে-বিদেশে বহু খ্যাতনামা কণ্ঠসংগীত শিল্পীদের সঙ্গত করেছেন। ২০০৬ সালে ভবনীপুর সংগীত সম্মিলনীতে একক বাদনের মধ্য দিয়ে তাঁর পথচলা শুরু হয়।
আশা করা যায়, একক হারমোনিয়াম বাদনের ক্ষেত্রে তাঁর এই অবদান বিভিন্ন সংগীত সম্মেলনে একক হারমোনিয়াম বাদনের উপস্থাপনাকে তার হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরিয়ে দেবে। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য একক উপস্থাপনা সল্টলেক কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, সপ্তসুর, বালিগঞ্জ মৈত্রী মিউজিক সার্কেল, আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমির সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান, দক্ষিণী সংগীত সম্মেলন, বেহালা কালচারাল ফেস্টিভ্যাল, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসংগীত একাডেমি এবং ঝুলনবাড়ি মিউজিক ফেস্টিভ্যাল।
২০১৩ সালে বিহান মিউজিক থেকে তার অ্যালবাম লিলটিং রিডস্ প্রকাশিত হয়। হিন্দি সংবাদপত্র ‘সন্মার্গ’ থেকে তাঁকে অপরাজিতা সম্মান দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে এমন এক বিদুষীকে সম্মান জানাতে পেরে ছায়ানট গর্বিত ও আনন্দিত। তাঁর দীর্ঘ সুরেলা জীবন কামনা করছে ছায়ানট।
র্যাচেল ফেল ম্যাকডরম্যাট
র্যাচেল ফেল ম্যাকডরম্যাট হলেন এশীয় ও মধ্যপ্রাচ্য সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক এবং তিনি দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।
তিনি ১৯৮১ সালে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া ১৯৮৪ সালে হার্ভার্ড ডিভাইনিটি স্কুল থেকে ধর্মতত্ত্বের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ১৯৯৩ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তাঁর গবেষণার আগ্রহ মূলত বঙ্গ (পূর্ব ভারত এবং বাংলাদেশ), বিশেষত হিন্দু দেব-দেবীকেন্দ্রিক ধর্মীয় ঐতিহ্য নিয়ে। তিনি এই অঞ্চলের ধর্মীয় ঐতিহ্য নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন।
বর্তমানে তিনি ভারত ও বাংলাদেশের ‘বিদ্রোহী কবি’ ও বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ওপর একটি গবেষণা প্রকল্পে নিযুক্ত আছেন।
র্যাচেল ফেল ম্যাকডরম্যাট তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যয়নেও নিজেকে সম্পৃক্ত করছেন। এ ছাড়া তিনি এ বিষয়ের ওপর কিছু কোর্স পড়ান, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ধারণাগুলো বিভিন্ন সংস্কৃতিতে কীভাবে বিকশিত হয়েছে তা অনুসন্ধান করে থাকেন।
মনোয়ারা খাতুন
বাড়ি পূর্ব বর্ধমান। কৃষিজীবী পরিবারের কন্যা, গৃহবধূ। তিনি সমাজসেবিকা, কবিতা, প্রবন্ধ, ছোট গল্পের লেখিকা। তাঁর পছন্দ বাঙালি মুসলিম সমাজসম্পর্কিত বিষয়। প্রাচীন মুসলিম নারীদের গীতিপদ্য বা গীতিকবিতা নিয়ে ‘মুসলিম বিয়ের গান’ বা গীত অন্দরমহল থেকে সংগ্রহ করে, সেই সম্পর্কে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখে আসছেন দীর্ঘকাল। অন্দরমহল বাসিনীদের জীবনগাথা সম্বলিত ‘মুসলিম বিয়ের গান’ গুলো বাহির মহলে, ডকুমেন্টারিতে, লোকসংস্কৃতির প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়েছেন। ভালোবাসেন বিয়ের সংগীত শোনাতে এবং এ বিষয়ে অন্যদের অবগত করতে চেষ্টা করেন।
১৯৯৩ সালে তাঁর বই ‘মুসলিম বিয়ের গান’ প্রকাশিত হয়। ২০২১ সালে হরফ প্রকাশনী থেকে ‘মুসলিম বিয়ের গানে বাঙালি মুসলিম সমাজ’ প্রকাশিত হয়।
সালমান/