
গত বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিনেই ছিল প্রথম শিশু প্রহর। সেই দিনের শিশু প্রহরে শিশুদের পদচারণা আর কলতানে মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। এ ছাড়া ছিল সিসিমপুরের জনপ্রিয় চরিত্রগুলোর সঙ্গে খুদে পাঠক-দর্শনার্থীদের খুনসুটি।
শুক্র ও শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত থাকে শিশু প্রহর। আজ শুক্রবার এবারের গ্রন্থমেলার সপ্তম দিন। আজ বন্ধ রয়েছে শিশু প্রহরের আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষা কারণে এদিন শিশু প্রহর বন্ধ রাখে মেলা কর্তৃপক্ষ। একই কারণে শনিবারও থাকছে না শিশু প্রহর। ফলে শনিবার বেলা ২টায় গ্রন্থমেলা শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এদিকে এবারের গ্রন্থমেলায় শিশুদের বই নিয়ে শিশু কর্নার থাকলেও থাকছে না সিসিমপুরের আয়োজন। এর ফলে শুক্রবার মেলায় গিয়ে আশাহত হয় খুদে পাঠক-দর্শনার্থীরা। তাই তারা প্রথম শিশু প্রহর কাটায় অনেকটা মন খারাপ নিয়ে।
শিশু প্রহর আর সিসিমপুরের আসরের অংশ নিতে কুমিল্লা থেকে বাবা-মা-নানুর সঙ্গে মেলা এসেছে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অদিতি দেবনাথ। তবে এবার সিসিমপুরের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না করতে পারায় তার ভীষণ মন খারাপ।
অদিতি খবরের কাগজকে বলে, ‘আমি কুমিল্লার ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ি। সিসিমপুর আর শিশু প্রহরের টানেই প্রতিবছরই বাবা-মায়ের সঙ্গে মেলায় আসি। এখানে বই কেনা হয়। সিসিমপুরের ইকরি-সিকু-হালুম-টুকটুকির সঙ্গে অনেক মজা করি। এবার একটু মন খারাপ, যদি তাদের সঙ্গে একটু আড্ডা দিতে পারতাম! তারপরও বই কিনতে পেরে ভালো লাগছে।’
অদিতির বাবা অমৃত কুমার দেবনাথ। তিনি পেশায় চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা শেষের দিকে মেলায় এসেছিলাম, তখন অনেক বই মিস করে ফেলেছিলাম। এবার সে (অদিতি) বায়না ধরেছে, যেন আমরা আগে আসি। এবার আগে এসেছি। তবে সিসিমপুরের স্টল নেই। সে জন্য অদিতি কিছুটা আশাহত। ও যখন নার্সারিতে পড়ত, তখন থেকেই আমরা নিয়মিত এ মেলায় আসছি। আমরা আশা রাখি, শিশুদের বই ও মেলামুখী করতে সিসিমপুরসহ অন্য উদ্যোগগুলো চলমান রাখা উচিত।’
এদিকে বইমেলা ও অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শুক্রবার শিশু-কিশোরের চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে রাজধানীর উত্তরা থেকে মায়ের সঙ্গে আসে নার্সারিতে পড়া মেহেরিমা নূর ও আরিয়ান আহমেদ।
খবরের কাগজকে এই খুদে দুই পাঠক জানায়, সিসিমপুরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না পেয়ে তাদেরও মন খারাপ। তবে প্রতিযোগিতাতে অংশ নিতে পেরে তাদের ভালো লেগেছে।
কথা হয় মেহেরিমা-আরিয়ানের মা মনিকা সুলতানার সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘সিসিমপুরের কারণে বাচ্চাদের মধ্যে অনেক উত্তেজনা কাজ করে। তারা এখানে খেলতে পারে। এতে বাচ্চাদের মন বেশ প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। আমরা মনে হয়, এবারের মেলায় সিসিমপুর না থাকায় বাচ্চারাও কম আসবে। তবে এমন আয়োজন রাখতে বাংলা একাডেমি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
এদিকে সিসিমপুরের অনুপস্থিতির কারণে শিশুদের বই বিক্রিতেও কিছুটা প্রভাব ফেলবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রকাশনীসংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ময়ূরপঙ্খি প্রকাশনীর ম্যানেজার চন্দনা মণ্ডল খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রথম শিশু প্রহরে আমাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে। তবে আমার মনে হয়, যেহেতু মেলায় সিসিমপুরের আয়োজন থাকছে না, তাই বিক্রিতে হয়তো এর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। অনেকেই বই কিনতে এসে সিসিমপুরের কথা জিজ্ঞেস করছেন। যদি বাংলা একাডেমি এর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিত, হয়তো সেই আকর্ষণে খুদে-পাঠক-দর্শনার্থীরা মেলা আসার বায়না ধরত।’
এদিকে সার্বিক বিষয়ে কথা হয় অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিনের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘এবার দুই দিন শিশু প্রহর থাকছে না। আর সিসিমপুরের বিষয়টি হলো, তারা আমাদের কাছে এবার আবেদন করেনি। তবে আমরা অভিভাবকদের বলব, তারা যেন শিশুদের বইমেলা নিয়ে আসেন। আর বাচ্চার পছন্দের বইগুলো যেন কিনে দেন। তবে সিসিমপুর নেই বলে বই বিক্রিতে প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। তবে আয়োজনটি থাকলে ভালো হতো।’