বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সময় নিষ্ক্রিয় থাকাসহ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর। যে কারণে তাদের পদত্যাগের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে উপাচার্যসহ প্রশাসনের সদস্যদের পদত্যাগের হিড়িক।
ঢাবি প্রক্টরসহ ১৪ জন সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর এবং ১৪ জন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন। ১৫ জনের প্রক্টরিয়াল বডিতে ১ জন সহকারী প্রক্টর বাদে বাকিরা সবাই পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা বৃহস্পতিবার বিকেলে ভিসি স্যারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমি এবং ১৩ জন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। বাকি একজন সহকারী প্রক্টর সীমা ইসলাম ছুটিতে দেশের বাইরে থাকায় পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেননি।’
রাবির উপাচার্যসহ প্রশাসনের ২৯ সদস্যের পদত্যাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ প্রশাসনে থাকা ২৯ সদস্য পদত্যাগ করছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে খবরের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. তারিকুল হাসান।
ইতোমধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন প্রশাসনের ২৯ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, প্রক্টরিয়াল বডির সব সদস্য এবং বেশ কয়েকজন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া আরও অনেকেই পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।
ইবির ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারের পদত্যাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া পদত্যাগ করেছেন। জানা যায়, বৃহস্পতিবার ই-মেইলের মাধ্যমে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে শিক্ষাসচিব বরাবর তারা পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
শাবিপ্রবি-সিকৃবির প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রভোস্টদের একযোগে পদত্যাগ
শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামের মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) প্রক্টরিয়াল বডিসহ সব হলের প্রভোস্ট।
বৃহস্পতিবার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং সব হলের প্রভোস্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শাবিপ্রবির প্রক্টর অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল বডির সব সদস্য, হলের প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্ট সবাই আমরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমরা সবার সঙ্গে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি পদত্যাগ করতে। ইতোমধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের দুটি হল বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট বডির লিখিত পদত্যাগপত্র রেজিস্ট্রার দপ্তরে জমা হয়েছে।’
একই আলটিমেটামে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) প্রক্টরসহ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। সিকৃবির জনসংযোগ দপ্তর এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে গতকাল বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক টিম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সিলেটের দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রভোস্ট বডি, শিক্ষক সমিতিসহ আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সব শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দিয়েছিল।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সব শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার ও শিক্ষার্থীদের মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলার দায় স্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনা এবং নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় তাদের ক্যাম্পাস থেকে চিরজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। যারা দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করবেন, তাদের ক্যাম্পাসে থাকার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বিবেচনা করবেন।’
দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদত্যাগের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। এমনকি তারা বর্তমানে কোথায় আছেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেনি।