ঠিক দুই মাস আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ঘিরে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া এক বক্তব্যের জেরে বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। দুই মাস পর জুলাইয়ে ইতিহাস বিকৃত করার প্রতিবাদে এবং শেখ হাসিনার বিচার দাবিতে ‘রাজাকার’ স্লোগানে আবারও উত্তাল ঢাবি। শিক্ষার্থীদের দাবি, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান মুছে দেওয়ার সুযোগ নেই। যারা ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করবে, তাদের শক্ত হাতে দমন করবে দেশের ছাত্র-জনতা।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এই হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। এতে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ২ মাস যেতে না যেতে ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসব শুরু করেছে একদল অপতৎপরতাকারী। তারা সহস্রাধিক শহিদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিতে চায়। মুগ্ধ-আবু সাঈদের সহযোদ্ধারা এ-চক্রান্ত কখনোই বাস্তবায়ন হতে দেবে না। খুনি হাসিনা ১৫-১৬ বছর ধরে রাজাকার ট্যাগ দিয়ে গণহত্যা-গুম-খুনের স্টিম রোলার চালানোর চেষ্টা চালিয়েছে। গত ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলে গালি দেওয়ার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। শিক্ষার্থীরা তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদে ‘তুমি কে, আমি কে রাজাকার-রাজাকার’ স্লোগানের যে ঢেউ তুলেছিল, সেই ঢেউ খুনি হাসিনার চক্রান্তকে তো ব্যর্থ করেছেই, সেই সঙ্গে খুনি হাসিনা সমূলে উৎখাত হয়ে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের সাফল্য মুছে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পিতভাবে সচিবালয় প্রশাসন, ডিসি অফিস সব অফিসে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রিহ্যাবিলেট করার চেষ্টা চলছে। ছাত্র-জনতা জানে কারা এসব করছে।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এ বি জুবায়ের বলেন, “আমার স্পষ্ট মনে আছে, যখন ওই খুনি হাসিনা রাজাকারের নাতি-পুতি বলে, তার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বারুদের মতো ফুঁসে উঠেছিল, নারী শিক্ষার্থীরা রাতেই হল থেকে বের হয়ে এসেছিল। সবার কণ্ঠে স্লোগান ছিল ‘তুমি কে, আমি কে রাজাকার-রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে- স্বৈরাচার-স্বৈরাচার’ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, যেই স্লোগানের মধ্য দিয়ে আমাদের আন্দোলনের মোড় ঘুরে গিয়েছে এবং অর্জিত হয়েছে বিজয়। কিন্তু এখন কিছুসংখ্যক লোক আমাদের সেই দ্রোহের স্লোগানকে পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ২৪-এর বিপ্লবের যেকোনো উপাদান, আমরা রক্ত দিয়ে হলেও রক্ষা করব।”
কেন রাতে ফের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি এমন প্রশ্নের জবাবে সমাবেশে অংশ নেওয়া মাস্টারদা সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থী এস এম ওমর খবরের কাগজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন ছিল, সেই আন্দোলনের সব থেকে বহুল ব্যবহৃত স্লোগান ছিল ‘রাজাকার-রাজাকার’। এখন বলা হচ্ছে এসব স্লোগান সর্বপ্রথম বিএনপি-ছাত্রদলের ছিল, আবার বলা হচ্ছে এই স্লোগান সমন্বয়কদের ছিল, আবার কেউ কেউ যারা নিজেদের সমন্বয়ক দাবি করে তারা বিকৃতভাবে প্রচার করছে। মূলত এই আন্দোলন তো কোনো দল কিংবা সমন্বয়কদের না। তবে আমরা স্বীকার করি, সবাই এখানে অংশ নিয়েছে। এখানে তো নতুন করে দলীয় পরিচয় দেওয়ার কিছু দেখছি না। ৭১-কে ঘিরে শেখ হাসিনা যেভাবে ইতিহাস বিকৃতি করার চেষ্টা করেছিল এখন তো সেই সময় না, এখন ২০২৪ সাল। আমরা তাদেরকে সাবধান করে দিতে চাই, তারা ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান সেটি যেন বিকৃত না করে।
এর আগে রাত ১০টার দিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাতা হাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় একে-একে জমায়েত হতে শুরু করেন। সেখান থেকে সূর্য সেন হল-মুহসীন হল-এ এফ রহমান হল-স্মৃতি চিরন্তন-রোকেয়া হল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অংশ নেন। পরে সেখান থেকে রাত ১১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যে থেকে হলে ফেরত যান শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার সরকার’, ‘বিকৃতি চলবে না, সাক্ষী আছে জনতা’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ‘জুলাইয়ের ইতিহাস, বিকৃতি চলবে না’, ‘আবু সাঈদের ইতিহাস বিকৃতি চলবে না’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।