শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) প্রশাসন প্রতি সেমিস্টারে রেজিষ্ট্রেশন ফির জন্য বিভিন্ন খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে থাকে। এ নিয়ে করোনার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রেজিষ্ট্রেশন ফিতে এমন কিছু খাতে টাকা নেওয়া হয় যেগুলোর কোনো ব্যবহার বা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন ফির বিভিন্ন খাতের তালিকা ও প্রশাসন সূত্রে সেসব খাতের ব্যবহার বিধি জানতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রেজিষ্ট্রেশন ফির সঙ্গে শাকসুর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইউনিয়ন ফি এবং ডায়েরির জন্য শিক্ষাপঞ্জি ফি নামে দুটি খাতে যথাক্রমে ১০০ টাকা ও ৯০ টাকা করে নেওয়া হলেও সেগুলোর কোনো ব্যবহার বা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (শাকসু) কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতি সেমিস্টারে ইউনিয়ন ফি হিসেবে ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায় দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে শাকসু অকার্যকর থাকলেও প্রতি সেমিস্টারে তার জন্য শিক্ষার্থীদের আলাদা টাকা গুনতে হচ্ছে। সর্বশেষ শাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ২৫ আগস্ট। এরপর সারাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শাবিতেও ছাত্র সংসদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রথম কয়েক বছর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন শাকসু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার থাকলেও পরবর্তীতে তা থমকে যায়।
অন্যদিকে শিক্ষাপঞ্জির জন্য প্রতি সেমিস্টারে ৯০ টাকা করে প্রদান করলেও শিক্ষাপঞ্জি বা এই সম্পর্কিত কোনো কিছুই পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা৷ এর আগে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর একটা করে ডায়েরি পেতো শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেটাও এখন পাচ্ছেন না তারা।
এ দিকে গত ১১ ডিসেম্বর শিক্ষার্থী ভর্তিতে পোষ্য কোটা বাতিলসহ ভর্তি, সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনকে এ সব ‘অযৌক্তিক’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন তারা।
এর আগে গত ১৯ নভেম্বর খবরের কাগজে শাবিতে প্রতিবছর বাড়ছে রেজিস্ট্রেশন ও ক্রেডিট ফি' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় কীভাবে প্রতি বছর রেজিষ্ট্রেশন ও ক্রেডিট ফি বৃদ্ধি নিয়ে শিক্ষার্থীরা নানামুখী সমালোচনা করে এলেও পরিবর্তনের বদলে প্রতিবছর নতুন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের গুনতে হচ্ছে বিগত শিক্ষাবর্ষের থেকে বেশি টাকা। তার ব্যতিক্রম ঘটেনি নতুন সেমিস্টারেও। নতুন সেমিস্টারে প্রতি বর্ষের শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন ফি বেড়েছে ২৫০ টাকা করে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ জুয়েল বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তার গতানুগতিক মাতৃসুলভ মমতা থেকে দিনদিন এক আগ্রাসী সৎ মা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। প্রতি বছর দাদনের মতো চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে অযৌক্তিক রেজিস্ট্রেশন ফি যার ভারে শিক্ষার্থীরা পিষ্ট। এই অযৌক্তিক ফি এবং তার বিপরীতে কাঁচকলা দেখানোর সংস্কৃতির অবসান ঘটুক।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসাইন বলেন, আমি মনে করি, ইউনিয়ন ফি ও শিক্ষাপঞ্জি নামে খাতগুলো আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। অর্থাৎ সকল সাস্টিয়ানকে এসব সুবিধা প্রধান করতে হবে। নয়তো এসব অযৌক্তিক ফি বাদ দিতে হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাকসুর কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এত বছর যাবত ইউনিয়ন ফির টাকা কোন খাতে ব্যবহার হয়ে আসছে এবং শাকসু অকার্যকর থাকলেও কেনো তার জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বর্তমান প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, অতীতে আমি ছিলাম না তাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারছি না। কিন্তু আগামীতে যাতে খুব শিগগিরিই যাতে শাকসুর নির্বাচন হয় এবং এই টাকাটা যাতে শাকসুর জন্যই ব্যবহার করা হয় এ বিষয়টা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমি বদ্ধপরিকর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ এছাক মিয়া বলেন, আমরা এত দিন ছিলাম না। কিন্তু এখন আমরা এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা বিষয়গুলো নিয়ে যৌক্তিক চিন্তাভাবনা করছি এবং খুব শীগ্রই এ ব্যাপারে একটা কমিটি গঠন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, এই বিষয়গুলো ইতোমধ্যে একাডেমিক কাউন্সিলের এজেন্ডাভুক্ত হয়েছে। শিক্ষকরা এ ব্যাপারে আলোচনা করে কী সিদ্ধান্ত নেন সেটা খুব শিগগিরিই জানিয়ে দেওয়া হবে।
ইসফাক আলী/নাবিল/এমএ/