বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির জন্ম লেজুড়বৃত্তি করার জন্য হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপ-উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন খান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির জন্ম লেজুড়বৃত্তি করার জন্য। তাহলে আমি কিভাবে সেটিকে রেখে ছাত্ররাজনীতি সংস্কার করব?’
শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ‘ছাত্ররাজনীতি সংস্কার প্রস্তাবে ছাত্র নেতৃবৃন্দের বোঝাপড়া’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে মন্তব্য করে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আলোচনার বিষয় হচ্ছে ছাত্ররাজনীতি সংস্কার। তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে রাজনীতি থাকবে এটা কি আমরা ধরে নিলাম? যদি ধরে নিই তাহলে ওকে। আর যদি না ধরে নিই তাহলে সংস্কার কেন? আগে প্রশ্নটি আসা উচিত ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি-না? আমরা যদি ছাত্র রাজনীতির সংজ্ঞা খুঁজতে যাই তাহলে এই ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে পৃথিবীর আর কোথাও এটি পাওয়া যাবে না। একইসঙ্গে আমাদের যে প্রচলিত শিক্ষক রাজনীতি আছে সেটিকে রেখে ছাত্ররাজনীতি যতই সংস্কার করি তা কি কার্যকর করা সম্ভব?’
সভায় রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল মোহাইমিন বলেন, ‘যে ছাত্ররাজনীতি দেখে আমি বড় হয়েছি সেই ছাত্ররাজনীতি আমিও নিষিদ্ধ চাই। তবে সবাই যদি একাডেমিশিয়ান হয় তাহলে ভবিষ্যতে কারা নেতৃত্ব দেবে? ছাত্ররাজনীতির মূল উদ্দেশ্য ছাত্রবান্ধব কাজ করা। এ কারণে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে পরে একটি দল ক্ষমতায় এসে আবারও আগের মতো তার দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে। যদি আমরা যৌক্তিকভাবে ছাত্ররাজনীতির একটি মডেল উপস্থিত না করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আবার আগের মতো চলবে। এজন্য যেসব কারণে আমরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চাই সেই সব জায়গায় সংস্কার প্রয়োজন।’
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে রাজনৈতিক চর্চা ছিল আমরা তাকে রাজনৈতিক চর্চা বলি না। আমরা দেখেছি কেউ ছাত্রলীগের সভাপতি বা কোনো পদ পেলে সে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক মনে করত। প্রকৃত ছাত্ররাজনীতি এটি নয়। আমরা এতে বিশ্বাস করি না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী ছাত্ররাজনীতি হবে মানবিক রাজনীতি। যে রাজনীতি হবে শিক্ষার্থীবান্ধব। রাজনীতি হবে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের জন্য, শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কোনো নেতা-কর্মী হলে গিয়ে আধিপত্য বিস্তার করবে না। ছাত্রদলের কেউ কোনো অন্যায় করলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ২৪ ঘন্টার কম সময়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবির সমন্বয়ক তাসিন খান বলেন, ‘বিগত ১৫-১৬ বছরে আমরা ছাত্ররাজনীতির নামে দেখেছি হল দখল, সিট বাণিজ্য, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গেস্ট রুম কালচার ইত্যাদি। ছাত্ররাজনীতির নামে এক সময় আমরা নির্মম হত্যাকাণ্ডও দেখেছি। ছাত্ররাজনীতি বলতে যদি এটি বোঝায় তাহলে আমরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চাই। যে ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের কল্যাণে আসে না বরং ছাত্রদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে সেরকম ছাত্ররাজনীতি আমরা চাই না। ছাত্রদের মধ্যে যদি রাজনৈতিক সচেতনতা বা চর্চা না থাকতো তবে এই গণঅভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব হতো না। অবশ্যই সবার মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বা চর্চা থাকা প্রয়োজন তবে অবশ্যই সেই রাজনীতি চর্চাটা শক্তি বা ক্ষমতার চর্চা হবে না।’
স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম রেজার সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এ মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
এস আই সুমন/জোবাইদা/অমিয়/