সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যথাযথ বিচার ও সন্ত্রাসীদের সাজা নিশ্চিত করার দাবিতে এবং জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালনকারীদের তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পালন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে এ পদযাত্রা শুরু হয়ে শাহবাগ, টিএসসি হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
এতে ছাত্রলীগের বিচার না করলে তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া তত সহজ হবে উল্লেখ করে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সদিচ্ছা পোষণ করছে না। সরকার ভেবেছে, ছাত্রলীগকে শুধু দায়সারাভাবে নিষিদ্ধ করলে তাদের অপকর্ম ঢাকা পড়ে যাবে। এখন পর্যন্ত জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ে তার পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোন প্রতিবেদন জমা পড়েনি। আমরা চাই, অবিলম্বে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে। তাদের ছাত্রত্ব বাতিল ও আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা কোন আল্টিমেটাম দিচ্ছি না। তবে আমরা বিচার প্রক্রিয়া চালুর দাবি জানাচ্ছি। আপনারা যত দেরি করবেন, তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া তত সহজ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকে কুক্ষিগত করতে চায়, তারা যেন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে। আমি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে চাই, আপনারা এমন কোনো কর্মকাণ্ড করবেন না, যার দ্বারা ঐক্য নষ্ট হয়।’
এ সময় ছাত্রদলের সভাপতি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিও জানান।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় জড়িত ছাত্রলীগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের চলে চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ‘ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে অন্তর্বর্তী সরকার গ্রেপ্তার করতে পারেনি। শুধুমাত্র শীর্ষ সন্ত্রাসী নয়, প্রত্যেকটি জেলায় ছাত্রলীগের যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসী রয়েছে, তারা এখনও ঢাকায় অবস্থান করছে। আমরা চাই, অবিলম্বে ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি যেসব আওয়ামী লীগের দোসররা জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হয়।’
এতে অন্যান্যদের মধ্যে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, মহানগর উত্তরের সভাপতি মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান লিপকন, দক্ষিণের সভাপতি শামীম মাহমুদ এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি মো. সোহাগ ভূঁইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হান্নান মজুমদার, ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সভাপতি মো. রবিন খান এবং সাধারণ সম্পাদক আকরাম আহমেদসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় নেতাকর্মীরা ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’, ‘সে নো টু মবোক্রেসি’, ‘স্টপ মব জাস্টিস’, ‘ক্রিমিনাল হ্যাভ নো প্লেস ইন ক্যাম্পাস’, ‘আওয়ামী সিনেট-সিন্ডিকেট, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ সহ বিভিন্ন স্লোগান ও প্লেকার্ড প্রদর্শন করেন।
আরিফ জাওয়াদ/নাবিল/এমএ/