
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে এবং গণআন্দোলন গড়ে তুলতে দুই সপ্তাহব্যাপী ‘জুলাই রিভাইভস’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলন’ প্লাটফর্মের সংগঠকরা।
রবিবার (২৩ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন প্লাটফর্মটির অন্যতম সংগঠক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলি ইবনে মোহাম্মদ।
মোসাদ্দেক বলেন, ‘আমরা গত কয়েকদিন যাবৎ গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলনগড়ে তুলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে এসেছি। এ পর্যায়ে আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে আমরা আগামী ২ সপ্তাহের জন্য জুলাই রিভাইভস কর্মসূচির ঘোষণা করছি।’
ঘোষিত এ কর্মসূচির আওতায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে ‘শহিদ ও আহত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, গণসংযোগ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, নাগরিক সমাজের ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, অনলাইন-অফলাইন প্রচার-প্রচারণা, দেয়াল লিখন’ শীর্ষক প্রচারণামূলক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্ল্যাটফর্মটির নেতারা।
এসময় ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সালাহউদ্দিন আম্মার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসুদ রানা, ঢাকা কলেজের ইব্রাহিম খলিল, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তাহমিদ হুজাইফাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরিফ জাওয়াদ/মাহফুজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা আবারো অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যারা এর আগে অংশগ্রহণ করেছেন, শুধু তারাই পরীক্ষায় বসতে পারবেন।
রবিবার (২৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির এক সভায় এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি এখনই চূড়ান্ত নয়, বিষয়টি এখন পুরোপুরি নির্ভর করছে আদালাতের উপর।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ জানিয়েছেন, সভায় উপস্থিত বেশির ভাগ সদস্য বলেছেন, আদালতের রায়ের পর নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে তারা। তবে কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে সেটা আদালতের রায়ের উপর নির্ভর করছে।
এর আগে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ওই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ‘একাধিক ভুল থাকায় সুষ্ঠু ফল প্রকাশের জন্য পুনরায় পরীক্ষার আবেদন’ শীর্ষক ভিসি বরাবর একটি আবেদন দেন এক পরীক্ষার্থী। কিন্তু তাতে সাড়া না পাওয়ায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে প্রশ্নপত্রে ভুলের কারণে পরীক্ষা বাতিলে কর্তৃপক্ষের কাছে রিটকারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। একইসঙ্গে ২০ ফেব্রুয়ারি দেওয়া ওই আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বিকাল ৫টায় এই ইউনিটের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে বলে জানানো হয়েছিল। তবে তার আগের দিন শিক্ষার্থীর রিটের আলোকে ফলাফল প্রকাশ স্থগিত করে হাইকোর্ট।
আরিফ জাওয়াদ/মাহফুজ
মায়ের জন্য ঈদের আগে অবশ্যই একটা শাড়ি কিনতে হবে। এদিক-ওদিক ঘুরছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান। এত এত শাড়ির মধ্যে কোন ধরনের শাড়ি নেবেন সেটি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। একটু সময় নিয়ে জানালেন- টিউশনির টাকা দিয়ে মাকে কিছু একটা কিনে দিতে চাচ্ছেন কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
আতিকুরের সঙ্গে কথা হচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে ঠিক ইফতারের পর। চারদিকে অনেক মানুষের আনাগোনা। এলইডি হ্যালোজেন লাইটের আলোয় চারদিকটা বেশ স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি টেবিল পেতে বসে আছে কিছু মানুষ। মিটিমিটি আলো জ্বলছে দোকানগুলোতে। টেবিল নিয়ে ছোট পরিসরে কেউ বিক্রি করছেন শাড়ি, পাঞ্জাবি, প্যান্ট, টি-শার্ট আবার কেউবা খেজুর, মাঠা থেকে শুরু করে হরেক রকমের খাবার। রোজার ঈদের আগের এই সময় ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়াখ্যাত জায়গাটি এমন জমজমাট হতে কখনোই দেখা যায় না। বস্তুত ক্যাম্পাসে এভাবে দোকান বসাতে দিতে চায় না কর্তৃপক্ষ। এখন অবশ্য কোনো বাধা নেই। হয়তো বাধা দিলে কেউ মানতও না। মজার বিষয় হলো- এখানকার ক্রেতা-বিক্রেতার প্রায় সবাই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী। কর্তৃপক্ষের চুপ থাকার হয়তো এটাই কারণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও চাকরি করার গৎবাঁধা ধারণা থেকে বের হয়ে বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে কিছু শিক্ষার্থী। ছোট ছোট টেবিল নিয়ে এই হরেক রকমের জিনিসপত্র বিক্রি করাটা হয়তো তাদের সেই স্বপ্নের অংশ। অবশ্য বিক্রেতার কেউ কেউ শুধু আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কথা মাথায় রেখে এই সময়কে ব্যবসার জন্য বেছে নিয়েছেন।'
মায়ের জন্য শাড়ি খুঁজতে থাকা আতিকুরকে সাহায্য করার জন্য তাকে নিয়ে একটি শাড়ির দোকানের দিকে এগিয়ে গেলাম। ছোট্ট একটা টেবিল নিয়ে বসা চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা বেশ উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে হাসিমুখে জানতে চাইলেন কোন ধরনের শাড়ি নিতে চাই আমরা। সুতির শাড়ি নেবেন বলে জানান আতিকুর। কয়েকটা শাড়ি দেখেই একটা নিয়ে ফেললেন তিনি। বেশ খুশি মনে হলো আতিকুরকে। উদ্যোক্তা ফারজানাও খুশি হলেন। ব্যবসা নিয়ে অনেক সময় কথা বললাম ফারজানার সঙ্গে। তার ব্যবসা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সব সময় স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিল। আমার বাড়ি যেহেতু সিরাজগঞ্জ তাই শাড়ি নিয়ে কাজ করাটা আমার জন্য কিছুটা সহজ হবে ভেবে আর অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করিনি। ঈদের আগের এই সময় যেহেতু আমাদের প্রতিষ্ঠানের আবাসিক ছাত্রছাত্রীরা ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে বাড়ি চলে যায়, তাই অনেকেই গ্রামে থাকা মা, বাবা, বা বোনের জন্য কিছু কেনাকাটা করে। অনেকেই বান্ধবীকে শাড়ি উপহার দেয়। সবমিলিয়ে এই সময় বিক্রি অনেক বেশি হয়। আমাদের স্বপ্নের দিকেও এগিয়ে যেতে যেটা সাহায্য করে। সঙ্গে কিছু আয়ও হয়।’
ফারজানার সঙ্গে কথা শেষ করে বেশ ভিড় দেখে এগিয়ে গেলাম রাস্তার পশ্চিম পাশে বিজয় একাত্তর হলের গেটের কাছে। শিক্ষার্থী আবদুর রহিম চামড়ার জুতাসহ এক্সপোর্টের প্যান্ট-শার্ট বিক্রি করছেন। বেশ ব্যস্ত থাকায় খানিকটা সময় অপেক্ষা শেষে কথা হলো তার সঙ্গে। ব্যবসা নিয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে তার স্বপ্নের কথা জানালেন। তিনি একটা ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে চান। চামড়ার জুতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। হেমায়েতপুরের জুতার কারখানা থেকে সবচেয়ে ভালো মানের পণ্যগুলো অর্ডার দিয়ে নিয়ে আসেন বলে জানান আমাদের। তিনি হাসিমুখে একটা তথ্য জানালেন। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া উদ্যোক্তা মেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে আসেন। স্যারের স্ত্রী স্যারের জন্য আব্দুর রহিমের স্টল থেকে একটা বুট জুতা পছন্দ করেন। পরে নিজে স্যারের বাসভবনে গিয়ে সেই জুতা জোড়া দিয়ে আসেন আব্দুর রহিম। কথাগুলো জানানোর সময় তিনি বেশ গর্ব অনুভব করলেন বোঝা গেল। গর্ব করবেই বা না কেন? স্বয়ং ভিসি স্যার তার দোকানের জুতা ব্যবহার করছেন।
আব্দুর রহিমের ফেসবুকে একটা পেজও আছে। সেখান থেকে মোটামুটি সাড়াও পান। তবে আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীরা তার থেকে নিয়মিত পণ্য নিচ্ছেন। ব্যবসা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় কম দামের মধ্যে সবচেয়ে ভালো জিনিস আনার চেষ্টা করি। পণ্যের কোয়ালিটি নিয়ে আমি ভীষণ সচেতন। যেহেতু এটা নিয়ে আমি স্বপ্ন বুনছি।’
বেশ পরিশ্রমী আর দৃঢ়চেতা মনে হলো আব্দুর রহিমকে। হয়তো ভবিষ্যতে কোনো একদিন দেশের বড় একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।
এতক্ষণে ঠাণ্ডা কিছু খেতে ইচ্ছা হলো আমার। একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলাম জসিম উদ্দিন হল মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনার দিকে মাঠা বিক্রি করছেন সাজিদ নামের এক শিক্ষার্থী। ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায় এই মাঠা। দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও বেশ সুস্বাদু এই মাঠা নিয়ে কথা হলো সাজিদের সঙ্গে। তার কাছে জানতে চাইলাম, মাঠা নিয়ে ব্যবসা করার চিন্তা মাথায় এল কীভাবে। সাজিদ বললেন, ‘রমজান মাসে রোজা ছেড়ে অনেকেই ঠাণ্ডা এবং পুষ্টিকর কিছু খেতে চায়। মূলত চাহিদার কথা চিন্তা করেই এই ব্যবসা শুরু করেছি।’ মাঠা কোথা থেকে আনেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এই মাঠা সরাসরি খামারি থেকে সংগ্রহ করি। তাই এটা ভেজাল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
মাঠা খাওয়ার পর আমারও মনে হলো- দিনের মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু একটা জিনিস খেলাম। কোনোভাবেই এটা ভেজাল হওয়া সম্ভব না। আশপাশে আরও দোকান ছিল যেমন- খেজুর, কসমেটিকস, সুগন্ধি ইত্যাদি। সময় স্বল্পতার কারণে সব দোকানে আর যাওয়া হলো না। অবশেষে বাসায় ফেরার জন্য মনস্থির করলাম। পাঞ্জাবি সাজানো একটা টেবিল চোখে পড়ল। চোখ আটকে গেল বোটল গ্রিন রঙের একটা পাঞ্জাবিতে। দামও তুলনামূলক কম। ভাবলাম- ঈদের জন্য পাঞ্জাবিটা নিলে মন্দ হয় না।
/রিয়াজ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার ‘বি’ (কলা ও আইন), ‘সি’ (ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ) ও ‘ডি’ (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ) ইউনিটের ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
রবিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত পৃথক তিনটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে জানানো হয়, উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা www.admission.jnu.ac.bd ওয়েবসাইটে লগইন করে তাদের ফলাফল দেখতে পারবেন। এ ছাড়া আগামী ৮ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিষয় পছন্দ (Subject Choice) ফরম পূরণের সুযোগ থাকবে, যা ওই ওয়েবসাইটে সম্পন্ন করতে হবে।
‘বি’ ইউনিটের তিন শিফটে মোট আসন সংখ্যা ৭৮৫টি। প্রথম শিফটে মোট আসন ২৯৪টি, যার মধ্যে মানবিক ২১৬টি, বাণিজ্য ৩৭টি, বিজ্ঞান ৪১টি। দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৯২টি, যার মধ্যে মানবিক ২১৮টি, বাণিজ্য ৩৫টি ও বিজ্ঞান ৩৯টি। তৃতীয় শিফটে মোট আসন ১৯৯টি, যার মধ্যে মানবিক ১২৪টি, বাণিজ্য ১০টি ও বিজ্ঞান ৬৫টি।
‘সি’ ইউনিটের দুই শিফটে মোট আসন সংখ্যা ৫২০টি। প্রথম শিফটে মোট আসন ২৩০টি, যার মধ্যে সবগুলোই বাণিজ্য বিভাগের। দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৯০টি, যার মধ্যে মানবিক ১৬টি, বাণিজ্য ২৩০টি ও বিজ্ঞান ৪৪টি।
‘ডি’ ইউনিটের দুটি শিফটে মোট আসন সংখ্যা ৫৯০টি। প্রথম শিফটে মোট আসন ২৯৪টি, যার মধ্যে মানবিক ১৯২টি, বাণিজ্য ৩৩টি, বিজ্ঞান ৬৯টি। দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৯৬টি, যার মধ্যে মানবিক ১৯৩টি, বাণিজ্য ৩২টি ও বিজ্ঞান ৭১টি।
এর আগে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ডি’ ইউনিট এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘বি’ ইউনিট এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
‘বি’ ইউনিটের ৭৮৫ আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় বসেন ৪২ হাজার ৯৭৪ জন। ‘সি’ ইউনিটের ৫২০ আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় বসেন ২০ হাজার ১১২ জন। ‘ডি’ ইউনিটের ৫২০ আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় বসেন ২৪ হাজার ৯৫৭ জন।
মুজাহিদ/সালমান/
‘ও পলাশ, ও শিমুল/ কেন এ মন মোর রাঙালে/ জানি না, জানি না/ আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে…’ আগুনরাঙা বসন্ত এলেই মনে পড়ে লতা মঙ্গেশকরের এই কালজয়ী গান। বাংলার বসন্তের সাথে পলাশের উপস্থিতি সহজাত। আর পলাশ মানেই রক্তরঙা আভায় আলোর বিচ্ছুরণে পর্ণমোচী বনের নবনৃত্যকলা।
আচমকা পলাশ ফুল দেখে মনে হতে পারে থোকা থোকা আগুনের শিখা। পলাশ যেন শীতের রিক্ততা কাটাতে বসন্ত-প্রকৃতির মন রাঙানোর দায় নিয়েছে। মাটির পরশে বেজে ওঠে মিষ্টি হারমোনির মর্মর ধ্বনি। আগুনরাঙা ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো শিক্ষাঙ্গন। ফুলের পাপড়ি ঘাসের জমিনে পড়ে যেন লাল কার্পেটে রূপ নিয়েছে। পলাশদামে মুখ ডুবিয়ে মেটে শালিকের সে কি আনন্দ! পত্রহীন ডালের ফাঁক গলে নীলাকাশে শোভিত রঙের খেলা। এ যেন বসন্তের আগমনী বার্তা। শুধু বার্তা নয়, গাছে গাছে ফোটা নতুন কুঁড়ি আর নানা রঙের বাহারি ফুল জানান দিচ্ছে বসন্ত এসে গেছে।
বলছিলাম শীতের আড়মোড়া ভেঙে রুক্ষতা বিদায় করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্তের প্রাণ আগুনরাঙা পলাশের কথা। এই রক্তরাঙা পলাশের রক্তিম রঙে পুরো ক্যাম্পাস রঙিন হয়ে উঠছে। পলাশদামে মুখ ডুবিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে পাখির ঝাঁক। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রকৃতি সেজেছে নবরূপে। গাছে গাছে পাখির কলকাকলি। কুহু কুহু ধ্বনিতে শোনা যায় কোকিলের কুহুতান। সব মিলিয়ে এ যেন এক প্রকৃতির নবপ্রাণ।
প্রকৃতি আমাদের যাপিত জীবনের নিত্যসঙ্গী। মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতির মতো পরিবেশ-প্রকৃতিও বদলায়। প্রকৃতির এই অদলবদলের খেলায় বিপুল ঐশ্বর্যধারী ঋতুরাজ বসন্তের হাওয়ায় যখন মুখরিত চারপাশ, তখন প্রকৃতির সাথে বাঙালিও বসন্ত-প্রেমের স্বাদ নিতে শুরু করে। দখিনা-বাতাসে নেওয়া শুরু করে নিঃশ্বাস। বনফুলের পল্লবে পাগলের ন্যায় উত্তরীয় উড়িয়ে আপন মনে গায় গান। প্রেমিকের হৃদয়ে লাগে প্রেমের দোলা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমির নগরীখ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাঙ্গন একেক ঋতুতে পায় একেক রূপ। শীতের সময় এই হিম নগরী মুগ্ধ থাকে অতিথি পাখির কলতানে, বসন্তে ফুলের সৌরভে মুখরিত করে চারপাশ আর পাখির কলকাকলিতে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে স্তব্ধ রাখে কোলাহল। গ্রীষ্মে বাহারি ফলের ছড়াছড়িতে আকৃষ্ট করে যে কাউকে। সাংস্কৃতিক উৎসবের সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে সাংস্কৃতিক রাজধানীখ্যাত জাহাঙ্গীরনগরে যখন বসন্তের আগমন ঘটে, তখন ক্যাম্পাস যেন সব ছাড়িয়ে তার নিজস্ব সত্তাটিকেই ধারণ করে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্তের মৌসুমে পলাশ ফুলের গাছগুলো এক চমৎকার দৃশ্য উপস্থাপন করে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে সারি সারি পলাশগাছ ফুলে পূর্ণ হয়ে উঠেছে, আর তাদের উজ্জ্বল লাল রঙের ফুল যেন পুরো পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে তোলে। পর্ণমোচী প্রতিটি গাছে বসন্তের হাওয়ায় পলাশ এক মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য অনুভূতির নাম এবং এর সুমিষ্টতা হয়তো পাখিদের বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টির কারণ, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শাখা-প্রশাখা ও আঁকাবাঁকা কাণ্ডের গাছটির টকটকে লাল ছাড়াও জাহাঙ্গীরনগরে হলুদ ও লালচে রঙের ফুল দেখা যায়। এই সময়টাতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীরা যেন ফুলের মাঝে হারিয়ে যায়, প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে চায়।
শহুরে জীবনের কোলাহলে ঋতুরাজ কিংবা গ্রীষ্ম তাপমাত্রার অসহ্যতা ছাড়া ঠিক আলাদাভাবে হয়তো প্রভাব ফেলে না। হয়তো গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম জানান দেয় তার উপস্থিতি। ঋতুরাজ বসন্তের হয়তো সে সুযোগ নেই। কিন্তু ঢাকার অদূরে অবস্থিত এক নৈসর্গিক শিক্ষাঙ্গন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্ত আসে মায়া ছড়িয়ে। প্রকৃতির শোভা ছড়িয়ে ভালোবাসার গান গেয়ে গেয়ে। মনের আনন্দে পাখিরা গান গাইতে শুরু করে। বসন্ত মানুষের হৃদয়ে তোলে ঢেউয়ের তাল। সে তাল পূর্ণতা পায় সুর শ্বাশতে। রবীন্দ্র-নজরুলেও এ বসন্ত ধরা দেয় কখনো বিরহী, কখনো আনন্দ, কখনো সৃষ্টি, কখনো প্রকৃতির অনবদ্য গানে।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বসন্তকে তুলে এনেছেন গানে, ‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়/ ফুল ফুটেছে বনে বনে/ শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায় ফাল্গুনী মোর মন বনে।’ আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘মায়ার খেলা’ গীতিনাট্যে বসন্তকে তুলে ধরেছেন, ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে/ এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।’ এখানকার শিক্ষার্থীদের অবচেতন মনেও বসন্তের এই প্রভাব পড়ে। বসন্তের এই দিনে পর্ণমোচী বনের উদাসী বাতাসে শুকনো পাতার নূপুরের নিক্বণ আর দূর থেকে ভেসে আসা বসন্তদূত কোকিলের কুহুতানের ধ্বনিতে প্রেমিকযুগলের হৃদয় আকুল করে হৃদয়মন্দিরে গেয়ে ওঠে, ‘আজি, খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো/ আজি, ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো/ এই সংগীত-মুখরিত গগনে/ তব গন্ধ করঙ্গিয়া তুলিয়ো।’
কেউ কেউ নিঃসঙ্গতায় হয়তো বলে ওঠে, ‘দূরে, গগনে কাহার পথ চাহিয়া/ আজি, ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।’
আমানউল্লাহ/তাওফিক