শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা ভর্তির সময়ের পাশাপাশি প্রতি সেমিস্টারে রেজিস্ট্রেশন ফির সঙ্গে জীবনবিমা ও স্বাস্থ্যবিমার টাকা দিয়ে থাকেন। কোনো কারণে তারা অসুস্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা।
কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষার্থী তাদের এই অধিকার সম্পর্কে জানেন না। আবার যারা জানেন, তারা প্রাপ্ত সুবিধা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে অনেক শিক্ষার্থী আবার চিকিৎসার সহায়তার আবেদন করা থেকেই আগ্রহ হারিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে প্রচার না থাকায় তারা তাদের ন্যায্যা অধিকার সম্পর্কে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচারের বিষয়ে তারা শিগগিরই উদ্যোগ নেবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বিমাচুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হলে শিক্ষার্থীরা বছরে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পাবেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা পাঁচ হাজার টাকার একটি আউটপেশেন্ট ট্রিটমেন্ট কাভারেজ পাবেন। দুর্ঘটনাবশত কোনো শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করলে তিনি যাকে নমিনি করে যাবেন তিনি ৫০ হাজার টাকা পাবেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অতি প্রয়োজনীয় এই তথ্যগুলো জানানোর জন্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমার জন্য ৫০০ টাকা এবং পরবর্তী সময়ে প্রতি সেমিস্টারে রেজিস্ট্রেশন ফির সঙ্গে ২৫০ টাকা করে পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু নিয়মিত জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমার জন্য টাকা পরিশোধ করলেও তারা এর সুবিধা সম্পর্কে জানেন না। এমনকি কোন পদ্ধতিতে এই সুবিধা ভোগ করতে হয়, তার সম্পর্কেও শিক্ষার্থীদের কোনো ধারণা নেই।
অসুস্থ হওয়া একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে খবরের কাগজ। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই এই বিমা সম্পর্কে প্রথমবার শুনেছেন। আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে কজন বিমার সুবিধা নিয়েছেন, তারা জানিয়েছেন তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা।
কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত বছরের ১ নভেম্বর হঠাৎ বুকে ব্যথা নিয়ে সিলেট শহরের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি হই। তারপর ৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে প্রয়োজনীয় তথ্যাসহ স্বাস্থ্যবিমার জন্য আবেদন করি। তখন জানানো হয়, শিগগিরই টাকা পেয়ে যাব। কিন্তু দুই সপ্তাহ যাওয়ার পরও যখন টাকা পাইনি তখন আবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। তখন আমাকে ধৈর্য ধরতে বলা হয়। তিন মাস হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আমি কোনো টাকা পাইনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গত কয়েক মাস আগে সাইনুসাইটিসজনিত চিকিৎসার জন্য আমার প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু এর এক মাস আগে আমার এক বন্ধু আবেদন করেও টাকা পায়নি। তাই সব কাগজপত্র সংগ্রহ করার পরও আমি আর আবেদন করিনি।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যারা স্বাস্থ্যবিমার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত অবগত নন। অসুস্থ হওয়ার পর জানেন না যে তাদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আর এই অধিকারের জন্য তাদের প্রতি সেমিস্টারে ২৫০ টাকা করে গুনতে হয়। এ রকমই কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয় খবরের কাগজের প্রতিবেদকের।
গত নভেম্বর মাসে ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ের হাড়ে ফাটল দেখা দেয় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আসিফের। চিকিৎসা করাতে তার প্রায় ছয় হাজার টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যবিমার ব্যাপারে না জানায় এই সুবিধার জন্য তিনি আবেদন করতে পারেননি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. এছাক মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘যদি কোনো শিক্ষার্থী সেবা পেতে ভোগান্তির সম্মুখীন হন, আমাদের জানালে আমরা সর্বাত্মক সহোযোগিতা করব। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিমা সম্পর্কে সচেতন করতে আমরা খুব শিগগির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
এদিকে বিমার সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হলে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিমা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে আমরা শিগগিরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। যদি কোনো শিক্ষার্থী এই সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হন, সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’