ঢাকা ২৯ মাঘ ১৪৩১, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান নিয়ে শিক্ষার্থীরা কতটুকু সন্তুষ্ট?

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:২৫ পিএম
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান নিয়ে শিক্ষার্থীরা কতটুকু সন্তুষ্ট?
ছবি: সংগৃহীত

তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমরা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক দিক থেকেই পিছিয়ে আছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো শিক্ষা। ফলস্বরূপ প্রতি বছরই উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়ার হিড়িক যেন বেড়েই চলেছে। কেউ কেউ উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েই বিদেশে পাড়ি জমান, কেউ আবার স্নাতক শেষ করে। উচ্চশিক্ষার জন্য আমাদের দেশে অনেক পাবলিক, প্রাইভেট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠলেও বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষার যে মান সেটা কি শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণে যথার্থ। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই-বা কতটুকু সন্তুষ্ট? সেটা নিয়েই শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন মাহমুদ শাকিল।

মো. রেদওয়ান কবির অনিক

ক্রিমিনোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও শিক্ষক নিয়ে নিজের অজান্তেই শিক্ষার্থীদের মানসপটে যে প্রত্যাশার আবির্ভাব হয় সেখানে কুঠারাঘাত পড়ে তখনই যখন প্রাপ্তির সঙ্গে তার ঢের অমিল পরিলক্ষিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষকরাই ক্ষমতার মোহে স্বীয় অন্ধত্ব ধারণ করে তাদের ক্লাস লেকচার, প্রয়োজনীয় স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস, কনটেম্পোরারি বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে সিলেবাস আপডেট বা রিসার্চে আগ্রহ হারিয়ে তাদের বেশির ভাগ সময়ই ব্যয় করেন শিক্ষক রাজনীতির পেছনে। কেননা প্রোডাক্টিভ একাডেমিক চর্চার চেয়ে এই নির্ধারকটিই তাদের বেশি এগিয়ে রাখে পেশাগত জীবনে মোহনীয় ধাপটিতে পৌঁছাতে। একদিকে আবাসিক, একাডেমিক অবকাঠামোগত সংকট অন্যদিকে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে কিছু প্রভাবশালী শিক্ষকদের নতুন নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠার হিড়িক এই সমস্যায় বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। শিক্ষকদের এই অদূরদর্শী চিন্তাভাবনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক রেপুটেশন দিন দিন তলানিতে নিয়ে যাচ্ছে।

মো.কামরুজ্জামান মিঠু

লোক প্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা নানা সমস্যায় জর্জরিত। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ল্যাব সুবিধা এবং আধুনিক প্রযুক্তির অভাব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা এবং দক্ষতা উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল এবং সুযোগ নেই, যা শিক্ষার্থীদের গবেষণার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্দোলন-সংগ্রামের প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, কর্মমুখী শিক্ষা ও কর্মজীবন নির্দেশিকার অভাব রয়েছে। এসব সমস্যার ফলে শিক্ষার্থীরা পেশাগত জীবনে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাচ্ছে। একটি কার্যকর ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য গবেষণা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং বাস্তবমুখী শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।

আনিকা তানজিম

ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদালয়।

বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মানের ক্ষেত্রে সংশয় দেখা যাচ্ছে। র‍্যাংকিংয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে দেশে এবং বিশ্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখা যাচ্ছে না। এর পেছনে অন্যতম একটা কারণ গবেষণা ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা। স্কুল-কলেজে যেই সার্বিক তত্ত্বাবধানে পড়াশোনার একটা পরিবেশ থাকে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বিমুখ হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশোনার দৃশ্যটি কম দেখতে পাওয়া যায়। তবে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক ও ইদানীং দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমগুলো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক সংগঠন গড়ে উঠছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন গড়ে উঠবে। শিক্ষকদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে গবেষণামূলক কাজে আরও মনোনিবেশ করলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা যায়।

আব্দুল্লাহ আল নোমান

রসায়ন ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানদণ্ড প্রশ্নে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই মনঃক্ষুণ্ন অনেকক্ষেত্রে হতাশ। প্রথমত, অনেক কোর্স বা টপিক পড়ানো হয় যার সঠিক প্রয়োগ সম্পর্কে সবাই অবগত নন, অনেকক্ষেত্রে তার প্রয়োগবিধি খুঁজে পাওয়া দুরূহ। আউটপুট ভিত্তিক এবং যথাযথ প্রয়োগ সম্পন্ন কোর্স বা টপিক নির্ধারণ এবং সুযোগ থাকলে ল্যাবে হাতে-কলমে শেখানো জরুরি।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের পড়ানোর দক্ষতা যাচাইপূর্বক নিয়োগ সম্পন্ন করা উচিত। একজন প্রথম বা সেকেন্ড হওয়া শিক্ষার্থী সব সময় ভালো শিক্ষক হতে পারবেন এমন কোনো যৌক্তিকতা নেই। যার ভুক্তভোগী পরবর্তী শিক্ষার্থী এবং এটা প্রায় সব ডিসিপ্লিনের একটি নিয়মিত ঘটনা। অনেকক্ষেত্রেই যেসব টপিকের উৎস হিসেবে বই বা নেটে ঠিকমতো রেফারেন্স নেই সেগুলোই অ্যাসাইনমেন্ট বা প্রেজেন্টেশন হিসেবে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, যার যৌক্তিকতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা সন্দিহান।

সামিয়া রহমান অনি

ইংরেজি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শেষ নেই। শিক্ষাব্যবস্থায় দক্ষতা উন্নয়নের পরিবর্তে ভর্তি প্রতিযোগিতা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, যা প্রকৃত শিক্ষার চেয়ে সার্টিফিকেট অর্জনের দিকেই মনোযোগ বাড়াচ্ছে। শিক্ষকদের ঘাটতি থাকায় শিক্ষার্থীরা মানসম্মত পাঠদান ও পর্যাপ্ত দিকনির্দেশনা পাচ্ছে না। দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই শিক্ষা নিশ্চিত করতে গবেষণা ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার অভাব প্রকট। আধুনিক চাকরির বাজারের সঙ্গে কোর্স কারিকুলাম সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, ফলে শিক্ষার্থীরা বাস্তব দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত শিক্ষানীতি, দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির উদ্যোগ প্রয়োজন। শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি ও প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ব্যর্থ হবে। এজন্য শিক্ষায় উদ্ভাবনী পদ্ধতির সংযোজন অপরিহার্য।

জান্নাতুল ফেরদৌস মৌ

কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

গবেষণা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক পর্যায়ে কিছু ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করছে, যা ইতিবাচক দিক। তবে শিক্ষার্থীদের রয়েছে লাইব্রেরি, ল্যাবে সময় দেওয়ার প্রতি অনীহা। কিছু অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে আগ্রহ থাকলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী কিছু গৎবাঁধা পড়াশোনা করে কোনো রকমে একটা ডিগ্রি নিতে চায়। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুণগত মানের গবেষণার সুযোগের অভাব, গবেষণা থেকে অন্য সরকারি চাকরিগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া, শিক্ষকদের সহযোগিতার অভাব, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব না দেওয়া। ফলে বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ব তালিকায়ও অনেক পিছিয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান উন্নত করতে গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি এবং শিক্ষা আধুনিকায়ন জরুরি। পাশাপাশি শিক্ষকদের সহযোগিতা ও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের উন্নয়ন শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে জরুরি।

জেম ইয়াছিন অরিন

আইন বিভাগ, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 

বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পুথিগত জ্ঞান অর্জনের জায়গা নয়, বরং সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং বাস্তবজীবনের দক্ষতা গড়ে তোলার একটি কেন্দ্র হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান নিয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তুষ্টি দেখায়। এর প্রধান কারণগুলো হলো সৃজনশীলতার অভাব, যুগোপযোগী শিক্ষাক্রমের ঘাটতি, অপর্যাপ্ত গবেষণা সুবিধা এবং দুর্বল পরিকাঠামো। অনেক সময় প্রশাসনিক জটিলতা ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব শিক্ষার্থীদের শেখার পরিবেশ ব্যাহত করে। এ ছাড়া ক্যারিয়ার উপযোগী প্রশিক্ষণের অভাবও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

শিক্ষার মানোন্নয়নে শুধু প্রশাসনের নয়, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি ও বিশ্বব্যাপী চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার পদ্ধতিকে আধুনিক করা প্রয়োজন। সৃজনশীল ও ব্যবহারিক শিক্ষায় জোর দিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী দক্ষতা বৃদ্ধি করা উচিত। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে অনলাইন রিসোর্স ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রসার শিক্ষার মান আরও উন্নত করতে পারে।

হুমায়রা তিথি

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের একেকটি বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এত বেশি যে, শিক্ষকের পক্ষে সবার প্রতি সমান গুরুত্ব দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার না হওয়া, আধুনিক ল্যাব ও ডিজিটাল ক্লাসরুমের অভাব শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব এবং যথাযথ দিকনির্দেশনার অভাবে শিক্ষার্থীরা পুথিগত জ্ঞান থেকে বাস্তবসম্মত জ্ঞানের দিকে অগ্রসর হতে পারছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদেরও নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবাসিক হলগুলোর নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মানসম্মত খাবারের অভাব শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পাঠদান বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়টি, যা শিক্ষার পরিবেশকে আরও খারাপ করে তোলে। এ ছাড়া মানসিক স্বাস্থ্য ও ক্যারিয়ার গাইডেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপেক্ষিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও মানসিক স্থিতিশীলতার অভাবে ভুগছে। যদিও কিছু জায়গায় উন্নতির প্রচেষ্টা চলছে, তবে শিক্ষার সামগ্রিক মান উন্নত করতে আরও পরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

হাসান

জবিতে থিসিস নিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম
জবিতে থিসিস নিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন
ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে থিসিস বন্টনের নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে এ তথ্য জানানো হয়।

পরিপত্রে বলা হয়, গত ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিলে রিপোর্ট সাপেক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে থিসিস বন্টনের নীতিমালা অনুমোদিত হয়েছে।

স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে থিসিস বন্টনের নীতিমালাগুলো হলো- ১. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল শিক্ষার্থীর স্নাতক (সম্মান)/বিবিএ পর্যায়ে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.০০ আছে তারা থিসিস গ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

২. কোনো শিক্ষক স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে এক শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ ০৩ (তিন) জনের বেশি শিক্ষার্থীর থিসিস সুপারভাইজার হতে পারবেন না।

৩. থিসিস গ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের আবেদনে ন্যূনতম ০৩ (তিন)টি বিষয় (Topic) (যে সব বিষয়ে থিসিস করতে আগ্রহী) তা উল্লেখ করতে হবে।

৪. আবেদনকারী শিক্ষার্থীর মেধাক্রম ও বিষয় (Topic) অনুযায়ী/ লটারি/ বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার থিসিস সুপারভাইজার নির্ধারিত হবে।

আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ক্রম, ১ ও ২-এর শর্তপূরণ সাপেক্ষে এবং ক্রম, ৩ ও ৪-এর আলোকে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে থিসিস বন্টন করতে পারবে বলে পরিপত্রে জানানো হয়।

মুজাহিদ বিল্লাহ/এমএ/

শিক্ষার্থীবান্ধব ও গবেষণামুখী বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে চাই

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৬ পিএম
আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৮ পিএম
শিক্ষার্থীবান্ধব ও গবেষণামুখী বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে চাই
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ । ছবি: খবরের কাগজ

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ। দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ মাসের মধ্যেই তিনি নানা সংস্কারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। চলমান দায়িত্ব এবং বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আরাফাত রহমান অভি

দেশের নতুন এক প্রেক্ষাপটে আপনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের শুরুর দিকে অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? 

প্রায় এক মাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন-শূন্য ছিল, তারও আগে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের ক্যাম্পাসেও অস্থিরতা বিরাজ করছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন পক্ষ নানা দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করে, যার কিছু ছিল যৌক্তিক, কিছু নীতি-বহির্ভূত। যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের চেষ্টা করেছি, বাকিগুলো আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি।

দায়িত্ব নিয়ে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন? 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছিল, যা গতিশীল করাই ছিল প্রধান অগ্রাধিকার। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সবাই একাডেমিক কার্যক্রম, গবেষণা এবং প্রশাসনে ইতিবাচক পরিবর্তন চেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কিছু সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, যার মধ্যে কিছু ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে, আর কিছু প্রক্রিয়াধীন।

এই পাঁচ মাসে আপনি কী কী পরিবর্তন আনলেন?

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় আগে ১১ শতাংশ আসন কোটার জন্য বরাদ্দ ছিল। যার মধ্যে ৩ শতাংশ ছিল পোষ্য কোটা। পোষ্য কোটা বাতিলসহ কোটায় সংস্কার আনা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩ শতাংশ, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ১ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও উপজাতিদের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোটায় প্রার্থী না থাকলে আসন মেধাতালিকা থেকে পূরণ হবে। আমরা দুইটি ক্লাস টেস্টের পরিবর্তে একটি মিডটার্ম পরীক্ষা চালু করেছি। ব্যবহারিক খাতা লেখার সংস্কৃতি বাদ দেওয়া হয়েছে। সব হলে ও রিডিং রুমে হাইস্পিড ইন্টারনেট সংযোগ দিয়েছি। সব শিক্ষার্থী প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল পেয়েছে। তিন সপ্তাহের মধ্যে সেমিস্টার ফাইনালের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, যা ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার্থীদের দাবিতে, মুজিব পরিবারের নামে রাখা ভবন ও হলগুলোর নাম পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ এবং যোগ্য ব্যক্তিদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ বস্তি গড়ে তুলে বহিরাগতদের ভাড়া দেওয়া হতো। এসব বস্তির ৮০ শতাংশ উচ্ছেদ করা হয়েছে, বাকিগুলোর উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি দূর করতে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করছি। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সমাবেশ আয়োজন ও আবাসিক হলে শতভাগ আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে র্যাগিং বন্ধ করা হয়েছে। 

বিগত সময়ে নিয়োগ, পদোন্নতি অনিয়ম এবং ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন?

বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়ম যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরোধিতাকারী শিক্ষার্থীদের বিচারের জন্য তদন্ত চলমান। ইতোমধ্যে আমরা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। সিন্ডিকেট অনুমোদনের পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কী?

বর্তমান জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে মাঠপর্যায়ের চাহিদা পূরণে প্রয়োগিক শিক্ষার গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য জ্ঞান সৃষ্টি, সংরক্ষণ ও বিতরণ নিশ্চিত করা। এ জন্য গবেষণার মানোন্নয়নসহ পাঠ্যক্রমে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রির মান সমান রাখতে প্রয়োজনীয় কোর্স ও ক্রেডিট সংখ্যায় সামঞ্জস্য আনতে আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কৃষি একটি প্রায়োগিক বিজ্ঞান, তাই স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশিপ চালুর উদ্যোগ নিচ্ছি। ইন্টার্নশিপ বাস্তবায়নে ইউজিসির সহায়তা প্রয়োজন, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ভাতা নিশ্চিত করতে। এটি তরুণদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দেবে। কৃষি স্নাতকদের শুধু চাকরির জন্য তৈরি করার ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউজিসির ‘এ-গ্রেড’ তালিকাভুক্ত হলেও আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে অবস্থান নেই কেন?

কোনো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে হলে প্রথমেই আবেদন করতে হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিভিন্ন শর্ত পূরণ করলেও দুঃখজনকভাবে প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরে কোনো প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেয়নি। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তনে পদক্ষেপ নিয়েছি এবং ইতোমধ্যে কিউএস ও টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাংকিংয়ের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই আমরা ভালো অবস্থানে পৌঁছাব।

বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে ভালো অবস্থানে নিতে আপনি কী উদ্যোগ নেবেন?

বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে উন্নতির জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বাড়াতে হবে শিল্প-একাডেমিয়া সংযোগ। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক গবেষণায় অংশগ্রহণ, বিদেশি গবেষকদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিসহ নিয়মিত ওয়েবসাইটে তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। ইতোমধ্যে শিক্ষকদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা বছরব্যাপী চলবে। এতে শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত নিজেদের আপডেট রাখতে পারবেন। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন, পিএইচডি গবেষণা বৃদ্ধি, উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি, যৌথ গবেষণা কর্মসূচিসহ আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার ও বিদেশি শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নেব। এসব বাস্তবায়িত হলে আমরা দ্রুতই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।

পূর্ব প্রশাসনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?

পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রম জরুরি। গত বছর আকস্মিক বন্যায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। বন্যা-পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে ধানের চারা, সবজির বীজ, মুরগির বাচ্চা, সার, কীটনাশক বিতরণ করে। যেখানে প্রশাসন সহযোগিতায় করেছে। এ ছাড়া, ‘জুলাই স্মৃতিচারণ ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সেমিনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো সিরাত মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনও চলমান। প্রশাসন থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে, যা চলমান থাকবে।

শিক্ষার্থীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

শিক্ষার্থীরা কঠিন সময় পেরিয়েছে, বিপ্লবের সব উপাদান দেখেছে। এখন তাদের পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে। তারা যেকোনো সমস্যা নিয়ে আমার দপ্তরে আসতে পারে, আমি সমাধানের সর্বাত্মক চেষ্টা করব। প্রশাসক নয়, আমি শিক্ষক হিসেবে তাদের পাশে থাকতে চাই। আমি চাই শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্তকে সামনে রেখে একটি গবেষণামুখী বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে। আমি চাই, যখন আমি চলে যাব, শিক্ষার্থীরা আমাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে।

/ তাসনিম তাজিন

 

মুহসীন হল অ্যালামনাই কমিটি আহ্বায়ক সাইদুর, সদস্যসচিব নাসিম

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:০৪ পিএম
আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:০৭ পিএম
আহ্বায়ক সাইদুর, সদস্যসচিব নাসিম
সাইদুর রহমান-শেখ মো. নাসিম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’-এর আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকার একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে সংগঠনটির সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটি গঠন করা হয়। 

এতে মুহসীন হল ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস সাইদুর রহমানকে (সাইদ সোহরাব) আহ্বায়ক এবং শেখ মো. নাসিমকে সদস্যসচিব নির্বাচিত করা হয়।

কমিটির সদস্যরা হলেন, ড. শামসুদ্দিন ইলিয়াস, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, শাহীন সিদ্দিক লিটন, সুলতান মো. নাসির উদ্দিন, আবদুল আওয়াল খোকন, রশিদুল আলম তালুকদার, হাবিবুর রহমান, নূরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবীর খান, ড. শরীফুল ইসলাম দুলু, মিজানুর রহমান খান, ড. মো. শওকত হোসেন, এস এম জাহাঙ্গীর কবীর, আ স ফ কবীর চৌধুরী (শত), আইনুল হক বাবুল, ইলিয়াস খান, আফজাল রহমান (রিয়েল), তৌহিদুল ইসলাম টিটু, দেলোয়ার হোসেন, জাহিদ হোসেন ভূঞা, জাহিদ রহমান, শহিদ আলমগীর, গোলাম হাফিজ নাহীন, নাহিদ হোসেন, মঞ্জুর রশীদ বিদ্যুৎ, মকবুল হোসেন পাইক, মো. ফারুক (শাসন), এম এম আবদুল্লাহ আল মামুন তুহিন, বাবুল হোসেন হাওলাদার ও জালাল মোহাম্মদ স্বপন। 

সভায় উপস্থিত সদস্যরা আগামী ৯০ দিনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য আহ্বায়ক কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

ছাত্রীকে পৃথিবীর সব সুখ দিতে চাওয়া নোবিপ্রবির শিক্ষককে শোকজ

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০১ পিএম
আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০৫ পিএম
ছাত্রীকে পৃথিবীর সব সুখ দিতে চাওয়া নোবিপ্রবির শিক্ষককে শোকজ
নোবিপ্রবির সহকারী অধ্যাপক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবির) এক নারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী অধ্যাপক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে কেন চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না, তা আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিতভাবে বলার জন্য শোকজ পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সংস্থাপন শাখার এক নোটিশ থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

ওই শিক্ষার্থী অভিযোগে বলেন, ‘শিক্ষক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমান আমার মায়ের নম্বরে ফোন দিয়ে বলেন- পৃথিবীর সব সুখ আমি আপনার মেয়েকে দেব, কোনো স্বামী এই পৃথিবীতে তা দিতে পারবে কিনা, আমি জানি না।’ 

নোটিশে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে প্রতারণা করে অসদাচরণ করেছেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে অবস্থিত শিক্ষক এপার্টমেন্ট 'শঙ্খচিল' এ অনৈতিক উদ্দেশ্যে অবস্থান করে অসদাচরণ এবং নৈতিক স্খলন ঘটিয়েছেন। তিনি বিয়ে করার দুই দিন আগে (৯ অক্টোবর, ২০২৪) প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে নৈতিকস্খলন ঘটিয়েছেন।’

নোটিশে আরও  বলা হয়েছে, ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমানের (সাময়িক বরখাস্তকৃত) বিরুদ্ধে এক নারী শিক্ষার্থীর আনা অভিযোগ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা,২০০৮ এর বিধি ৩(৩.১) (ঝ) এবং (ঠ) এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ২(খ) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০১ এর ধারা ৪৭(৮) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ 

একই সঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থনে যদি কোনো বক্তব্য থাকে তা লিখিত আকারে উপস্থাপনের বিষয়ে নোটিশে বলা হয়েছে।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগত্রে ওই ছাত্রী জানান, ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ তিন মাস ওই শিক্ষক আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক জড়ানোর জন্য তাকে মানসিক অত্যাচার করেন। পরবর্তীতে সে ওই শিক্ষককে অনলাইনে ব্লক দেয়। পরে ওই শিক্ষক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কল দিয়ে ওই শিক্ষক বলেতেন- ওই ছাত্রীকে পেলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগপত্রে লিখেন, ‘এমন করে করে তিনি আমাকে ফাঁদে ফেলতেন এবং মানসিকভাবে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি। একটা পর্যায়ে ভাবতে থাকি আমার কারণে একটা মানুষ এতো কষ্ট পাচ্ছে। ২০২৩ সালের ১১ মার্চ তিনি পিএইচডি পড়া ছেড়ে আমার কারণে দেশে চলে আসেন এবং বলেন আমার আশেপাশে থাকলেই তিনি ভালো থাকবেন।’

তিনি আরও লিখেন, ‘আমার একাডেমিক লাইফে ক্ষতির সম্ভাবনা, মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি এবং নানান বিষয়ে ডিপ্রেশনে থাকার কারণে আমি তার সঙ্গে সম্পর্কে যেতে রাজি হই। আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে। এর মধ্যে কয়েকদফা তিনি আমাকে একা একা বিয়ে করে ফেলার কথা বলেন কিন্তু আমি বলেছি ফ্যামিলিকে জানাও তারপর বিয়ে করব। ২০২৪ সালের কুরবানি ঈদের সময় থেকে তিনি পরিবারে জানান এবং তার ভাষ্যমতে তার পরিবার রাজি হয় না।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগে বলেন, ‘১১ অক্টোবর শুক্রবার তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে ঢাকা যেতে বলেন। আমি তার কথা বিশ্বাস করে ঢাকা যাই। কিন্তু তিনি নানা তাল বাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাবা অসুস্থ বলে আমার থেকে তড়িঘড়ি বাড়ি যাবে বলে বিদায় নেন। আমাকে বিদায় দেওয়ার সময় জড়িয়ে ধরে কপালে চুম্বন করে বলেন- আমি আমার বাবাকে দেখে এসে তোমাকে বিয়ে করবো ময়না, আমার অপেক্ষা করিও, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব পারিবারিক বিয়েটা ভাঙানোর, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’

শিক্ষার্থী অভিযোগে আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে জানতে পারি তার বাবা অসুস্থ হয়নি। বরং ১৩ অক্টোবর রবিবার চট্টগ্রামে তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন যার সঙ্গে তার ৩ মাস আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।’

এর আগে নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই ঘটনায় গত বছরের ৩০ অক্টোবর অভিযুক্ত শিক্ষক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমানকে সব ধরনের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তীতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি চাকুরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে ওই শিক্ষকের বক্তব্য শোনার জন্য তাকে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কাউসার আহমেদ/সুমন/

জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে প্রথম ধাপের কাজে একটি ছাত্র হল অন্তর্ভুক্ত হবে: ভিসি

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০১ পিএম
আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম
জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে প্রথম ধাপের কাজে একটি ছাত্র হল অন্তর্ভুক্ত হবে: ভিসি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা। ছবি: খবরের কাগজ

কেরাণীগঞ্জের তেঘরিয়ায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রথম ধাপের কাজে একটি ছাত্র হল অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সম্পর্কিত একটি সভায় তিনি এ তথ্য জানান।

এ সময় উপাচার্য  বলেন, ‘২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের পরিকল্পনা হবে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রথম ধাপে একটি ছাত্র হল অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যদি বাণী ভবন ও হাবিবুর রহমান হলের নির্মাণে দেরি হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সাত একর জমিতে বালু ভরাট করে অস্থায়ীভাবে ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে।’

এ সময় সভায় প্রকল্প পরিচালক ইফতেখার আলম বলেন, ‘আমাদেরকে বলা হয়েছে প্রথম ধাপের কাজ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে। তবে আমরা এর আগেই শেষ করার চেষ্টা করব। দ্বিতীয় ধাপের কাজের পরিকল্পনাও চলবে, তবে এর দৃশ্যমান কাজ ২০২৬ সালের পরে শুরু করা সম্ভব হবে। প্রথম ধাপের কাজের মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পাসের নিচু জায়গা বালু দিয়ে ভরাট করা, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন তৈরি এবং একটা বেসক্যাম্প তৈরি করা।’

বাণী ভবন ও হাবিবুর রহমান হল নিয়ে তিনি বলেন, ‘হল দুইটির স্থান এমন জায়গায় যে, এখানে স্টিল স্ট্রাকচারের কাজ চালানোর জন্য যে ক্রেন আনা দরকার সেটা নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। কারণ সেখানে রাস্তাগুলো ১৪ থেকে ২২ ফুটের মধ্যে। তবে এখানে স্টিলের স্ট্রাকচারের পরিবর্তে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ বেশি টেকসই হবে। তা ছাড়া স্টিল স্ট্রাকচার সময়সাপেক্ষ। স্থানীয় কমিউনিটির কিছু আপত্তি এসেছে, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।’

শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ২০০৫ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে আমরা বিগত সময়ে নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢাকা থেকে সরিয়ে অজপাড়াগাঁয়ে পাঠানোর জন্য তারা নতুন ক্যাম্পাস দিয়েছে। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, এই ক্যাম্পাস আমাদেরই থাকবে। কেরানীগঞ্জে হবে আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস।’

জবি সংস্কার আন্দোলনের সদস্য নওশিন নাওয়ার জয়া বলেন, ‘বর্তমানে ছাত্রীদের জন্য একটি হল আছে, তাই এখন ছাত্রদের হল বেশি জরুরি।’

শিক্ষার্থীদের এসব দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকা জেলা এডিসি পারভেজ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি আইনগত কাঠামোর মধ্যে কীভাবে ফ্যাসিলিটেট করা যায়। আইনগতভাবে অস্থায়ী বা স্থায়ী কাঠামো করার সুযোগ নাই। স্ট্রাকচারের বিষয়টা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। এ বিষয়ে লোকাল কমিউনিটিকে রেসপেক্ট না করলে সাসটেইনেবল হয় না।’

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন, শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. বেলাল হোসেন ও নাসির আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

মুজাহিদ/সুমন/