একটা সময় দেশে ধাই বা ধাত্রীদের মাধ্যমেই সন্তানের জন্ম হতো। কিন্তু তাদের এ বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না। এখন সময় পাল্টেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক হয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞানও। সন্তান জন্মদানের কিছুদিন আগে থেকেই মায়ের এবং সন্তান জন্মদানের পর মা ও নবজাতকের যিনি পরিচর্যা করেন তাকে মিডওয়াইফ বলে।
আগে দেশে মিডওয়াইফারি পেশার তেমন গুরুত্ব ছিল না। মনে করা হতো যাদের অন্য কোনো উপায় নেই তারা এ পেশায় আসেন। কিন্তু সময়ের চাহিদা ও পরিবর্তিত বাস্তবতায় মিডওয়াইফারি পেশা পৃথিবীর সম্মানজনক পেশাগুলোর দিক দিয়ে এখন উপরের সারিতে। তথ্যমতে, বাংলাদেশে মিডওয়াইফারি কোর্স চালু হয় ২০১০ সালে। ২০১২ সালে পুরোপুরিভাবে ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয়। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধে দক্ষ মিডওয়াইফের ভূমিকা অনেক।
সরকার মাতৃস্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত ও মাতৃমৃত্যু কমিয়ে আনতে মিডওয়াইফারি পেশায় প্রশিক্ষিত কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ থাকলে মহৎ এ পেশা বেছে নিতে পারেন। এই পেশায় সরকারি ক্ষেত্রে ভালো বেতন ছাড়াও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া দেশ ও দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ভালো সুযোগ আছে। তাই দক্ষ মিডওয়াইফ হিসেবে মা ও শিশুকে সেবা দিয়ে এ পেশায় গড়তে পারেন ক্যারিয়ার।
একজন মিডওয়াইফ গর্ভাবস্থায়, প্রসব বেদনা এবং প্রসবের প্রারম্ভিক অবস্থায় নারীদের যত্ন এবং সহায়তা করেন। তিনি গর্ভাবস্থায় একজন নারীকে তাদের তত্ত্বাবধানে রেখে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেন। স্বাস্থ্য ও শিশুর পরিচর্যাবিষয়ক উপদেশও দেন। মিডওয়াইফ মা ও সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ এবং গর্ভাবস্থা বা জন্মকালীন জটিলতা দেখা দিলে গাইনি ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন। একজন মিডওয়াইফ হাসপাতাল এবং কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েও সেবা দিয়ে থাকেন।
কাজের ক্ষেত্র: আমাদের দেশে মিডওয়াইফদের কাজের ক্ষেত্র বেশ বিস্তৃত। সাধারণত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, সেবা অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও সেবা মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন।
কাজের ধরন: গর্ভাবস্থায় একজন নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। রোগ প্রতিরোধ, স্বাভাবিক প্রসবের জন্য মাকে প্রস্তুত এবং মা ও শিশুর জটিলতা নির্ণয় করে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করেন। গর্ভবতী নারীর জন্য কেয়ার প্রোগ্রাম তৈরি ও তার মূল্যায়ন করাও তাদের কাজ। এ ছাড়া হাসপাতাল ও বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে স্ক্রিনিং পরীক্ষাসহ পূর্ণ যত্ন দেওয়াও তাদের কাজের মধ্যে পড়ে। অধিক ঝুঁকিযুক্ত গর্ভধারণ শনাক্ত, ডাক্তার এবং অন্যান্য চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ সম্পর্কে যোগাযোগ করা, স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি ও কাউন্সেলিং করা, স্ক্রিনিং ও পরীক্ষা করার আগে এবং পরে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে কাউন্সেলিং করা; গর্ভপাত, নবজাতকের অস্বাভাবিকতা এবং নবজাতকের মৃত্যু সম্পর্কিত ঘটনাবলিতে পূর্ণ মানসিক ও প্রফেশনাল সহায়তা দেওয়া, মাতৃগর্ভের তত্ত্বাবধান এবং সহায়তা, ভ্রূণের অবস্থা নিরীক্ষণের কাজও মিডওয়াইফ করে থাকেন। নবজাতকের দৈনিক যত্ন যেমন বুকের দুধ খাওয়ানোসহ গোসল করানো, খাবার তৈরি করা ইত্যাদি বিষয়ে সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া, জুনিয়র সহকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং তত্ত্বাবধানে অংশগ্রহণ করাও তাদের কাজের অংশ।
যা জানতে হবে: ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স সম্পন্ন করা, শিশুর জন্মবিষয়ক জ্ঞান, গর্ভাবস্থাবিষয়ক জ্ঞান, গর্ভাবস্থায় ও শিশু জন্মের পর মায়ের যত্নে দক্ষতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখা, সহযোগিতামূলক মনোভাব, জরুরি অবস্থায় ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করার ক্ষমতা ও যোগাযোগ সম্পর্কিত দক্ষতা থাকতে হবে।
কোথায় পড়বেন ও উপার্জন: সরকারি নার্সিং কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট; মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউটে বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা এবং ব্যাচেলর ইন মিডওয়াইফারি কোর্স রয়েছে। এখান থেকে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করে আপনি এই পেশায় যোগ দিতে পারবেন। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। দেশের বাইরেও এই পেশায় প্রচুর সম্ভাবনা আছে। সরকারি অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার পদে এ পেশায় নিয়োগ দেওয়া হয়। জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী এই পেশায় বেতন ১৬,০০০ থেকে শুরু হয়ে ৩৮,৬৪০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য সুযোগসুবিধাও রয়েছে।
কলি