ঢাকা ২১ কার্তিক ১৪৩১, বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪

টেক বিশ্বের আলোকিত নাম শের ওয়াং

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
টেক বিশ্বের আলোকিত নাম শের ওয়াং
শের ওয়াং। ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক বিশ্বে সবকিছুর পাশাপাশি প্রযুক্তির দিকেও এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। প্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে রয়েছে তাদের অবাধ বিচরণ। বিভিন্ন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটার তৈরির প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কাজ করছেন নারীরা, রয়েছেন বিভিন্ন উচ্চপদে। তেমনই একজন তাইওয়ানের শের ওয়াং। যিনি তাইওয়ানের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটার নির্মাতা হাইটেক কম্পিউটার (এইচটিসি) করপোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।

শের ওয়াং টেক বিশ্বে সেরা নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ পরিচিত। তার জন্ম ১৯৫৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাইওয়ানের তাইপেইতে। তার বাবা ওয়াং ইয়ুং চিং ছিলেন প্লাস্টিক ও পেট্রোকেমিক্যালস সমষ্টি ফর্মোসা প্লাস্টিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। শের ওয়াংয়ের শিক্ষাজীবনের সূচনা ক্যালিফোর্নিয়ার দ্য কলেজ প্রিপারেটরি স্কুল ইন অকল্যান্ডে। এরপর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।

ওয়াং এবং কয়েকজন মিলে ১৯৮৭ সালে VIA এবং ১৯৯৭ সালে HTC নামের দুটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই দুটি কোম্পানিই ছিল মূলত স্মার্টফোন তৈরির প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সালে স্মার্টফোনের মোটামুটি প্রাথমিক মডেল তৈরি করে বেশ হইচই ফেলে দেন তিনি। বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’ শের ওয়াংয়ের স্বামী ওয়েন চি চেনের সঙ্গে শের ওয়াংকে যৌথভাবে ২০১১ সালের মে মাসে তাইওয়ানের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে। এমনকি ২০১২ সাল থেকে ফোর্বস এর ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকাতেও ধারাবাহিকভাবে অবস্থান পেয়ে আসছেন শের ওয়াং। ফোর্বসের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৫ সালে এইচটিসি কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার।

নিত্যনতুন লক্ষ্য নিয়ে এইচটিসিকে প্রযুক্তি দুনিয়ায় শীর্ষে নিয়ে যেতে চান ওয়াং। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বুদ্ধি আর দক্ষতার সঙ্গে এইচটিসি ব্র্যান্ড পণ্যের নানা উন্নয়ন কার্যক্রম দেখাশোনা করে আসছেন ওয়াং। এমনকি ব্যবসার সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করার ব্যাপারে বেশ সুনাম আছে তার। শুধু তাই নয়, তাইওয়ানে রাজনীতির সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত আছেন শের ওয়াং। বর্তমানে তার স্বামী ‘ভিআইএ’ টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে কাজ করছেন।

বিশ্ব আইসিটির মঞ্চে সফল নারী ব্যবসায়ী হিসেবে ওয়াং নিজের যোগ্যতা আর দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। বর্তমানে তার বয়স ৬৬ বছর হলেও পরিশ্রম করতে কোনো অনীহার ছাপ দেখেন না তার সহকর্মীরা। স্মার্টফোনের বাজারে আধিপত্য ও মুনাফা বাড়াতে স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে এসেছিল এইচটিসি। এ প্রসঙ্গে ওয়াং বলেছিলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোয় স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু এইচটিসি অনেক দিন শুধু দামি স্মার্টফোন তৈরিতেই আগ্রহী ছিল। এই কৌশলগত ভুলের কারণে বহু লোকসান গুনেছে এইচটিসি। এ ক্ষতি সামলে নিতেই কম দামি স্মার্টফোন তৈরিতে এইচটিসি এখন জোরালোভাবে কাজ করছে।’ স্মার্ট ব্যবসার দুনিয়ার এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে সফল নারী ব্যবসায়ী হিসেবে উদাহরণ তৈরি করেছেন ওয়াং। এখন সবচেয়ে স্মার্ট গ্যাজেট হিসেবে স্মার্ট হাতঘড়ি তারুণ্যের জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে। বিশ্বের প্রায় সব প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই স্মার্ট হাতঘড়ি বাজারে নিয়ে আসতে কাজ করছে। এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে এইচটিসি। এক সাক্ষাৎকারে এইচটিসি চেয়ারম্যান শের ওয়াং বলেন, ‘এইচটিসি পরিধানযোগ্য ডিভাইস উৎপাদন ও মানোন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাবে। স্মার্ট দুনিয়ার উন্নয়নে এখন সবসময়ই নিত্যনতুন চাহিদার আর্বিভাব হয়ে থাকে। ইন্টারনেটের ব্যাপকতা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা আজ অন্ধকারে থাকার শামিল। তাই প্রযুক্তি দুনিয়ায় মানোন্নয়নের প্রতিযোগিতাও এখন কঠিন থেকে চরম পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।’

জাহ্নবী

একা মায়ের বন্ধুর পথ

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৭ পিএম
একা মায়ের বন্ধুর পথ
মডেল: তমা ও তার ছেলে ধ্রুব। ছবি: আদিব

আমাদের সমাজে সবসময় সন্তানসন্ততিসহ সুখী যুগল জীবন দেখা যায় না। কিছু ব্যতিক্রমও আছে। এমন অনেক মা আছেন, যারা একাই সন্তানকে মানুষ করেন, একই সঙ্গে মা এবং বাবার ভূমিকা পালন করেন। আমরা তাদের ‘সিঙ্গেল মাদার’ বলি।

সিঙ্গেল মাদার হওয়ার কারণ

অনেক সময় স্বামী কিংবা শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক এত তিক্ত হয়ে যায় যে, মায়েরা সংসার ছেড়ে আসতে বাধ্য হন। তখন একাই তাকে সন্তানের দায়িত্ব নিতে হয়। কখনো আবার স্বামী মারা গেলে মা আর দ্বিতীয় বিয়ে করেন না, সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে জীবন পার করে দেন। কিছু কিছু নারী সন্তান দত্তক নিয়ে একাই লালনপালন করেন। এসব ক্ষেত্রে তারা সিঙ্গেল মাদারের ভূমিকা পালন করে থাকেন।

একা মাকে যেসব সমস্যা পোহাতে হয়

মায়েদের জার্নিটা বরাবরই কঠিন। আর একা মায়েদের জীবনযাত্রা আরও বেশি কঠিন। আমাদের সমাজে একা মায়েদের ভালো চোখে দেখা হয় না। সংসার ভাঙার জন্য মেয়েদেরই সাধারণত দায়ী করা হয়। সমাজ প্রত্যাশা করে, সাংসারিক জীবনে যত অশান্তিই হোক না কেন মেয়েরা সব মেনে নিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখবে। মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার যেই থিওরি প্রচলিত, তা যেন শুধু মেয়েদের জন্যই তৈরি। বেশির ভাগ মানুষ এও মনে করেন, একা মায়েদের চরিত্র ভালো হয় না। কিছু মানুষ মনে করেন, একা মায়েদের পুনরায় বিয়ে করা উচিত, নাহলে চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে। কিছু মানুষ ভাবেন, যে মা সন্তানের মঙ্গল কামনা করে সে কখনো দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারে না। সমাজ সাধারণত একা মায়েদের ওপর সহনশীল হয় না। প্রতিনিয়ত তাদের স্রোতের প্রতিকূলে সমাজের অনেক কটু কথা শুনে টিকে থাকতে হয়।

আয়েশা রহমান (ছদ্মনাম) নামের একজন একা মা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার নেশা ও পেশা ছিল একজন লেখক হওয়া। নিয়মিত লেখালিখি করতাম, বই প্রকাশ করতাম। প্রেম করে বিয়ে করার পরও জীবন ভালোই চলছিল। একটা ছেলেসন্তান হলো আমাদের। তারপর ধীরে ধীরে সন্তানের বাবা বদলে যেতে লাগল। তবু সন্তানের কথা ভেবে মেনে নিলাম। দিনের পর দিন দেখতে থাকলাম, সংসার আর সন্তানের প্রতি সে উদাসীন হয়ে পড়ছে। সন্তানের দুধ থেকে শুরু করে কোনো প্রয়োজনীয় জিনিসই সে কিনে দিত না। এদিকে একটা স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি হলো আমার। নিজেই যতটা সম্ভব সব খরচ চালাতে থাকলাম। সন্তানকে নিয়ে কষ্ট করে চাকরি আর সংসার এ ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করলাম। খুব খারাপ লাগত, সন্তানের প্রতি তার অবহেলা দেখে। সে ঠিকই সবসময় ব্র্যান্ডের ঘড়ি, পোশাক পরত এবং আমাদের সন্তান টানাপড়েনের ভেতর জীবন কাটাত। একপর্যায়ে জানতে পারি, তার অন্যত্র সম্পর্ক রয়েছে এবং সে সেই নারীর সঙ্গে জীবন কাটাতে চায়। তারপর সেই সংসার ছেড়ে চলে এলাম মায়ের বাড়িতে। মায়ের পরিবার খুব সাপোর্ট করেছে সবসময়, নাহলে আমার পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হতো। আমার ভাই থাকে ফিনল্যান্ডে। সে আমাকে আর আমার ছেলেকে ফিনল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার সব বন্দোবস্ত করলো। ফিনল্যান্ডে এসে ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করালাম আর আমি একটা কাজ জোগাড় করলাম। তিন বছর হলো ফিনল্যান্ডে আছি। এখন বেশ ভালোই আছি।’

দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন, দেশে থেকেও তো সন্তানকে মানুষ করা যেত- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একা মায়েদের জন্য আমাদের দেশটা ঠিক সহজ নয়। সমাজের বাঁকা চোখ, লোকের নিন্দা শুনে জীবন পার করা কঠিন হতো। আর তাছাড়া আমার ছেলের জীবনটাও দুর্বিষহ হয়ে উঠত, তাই দেশ ছেড়ে আসা। উন্নত দেশগুলোয় একা মায়ের চিত্র খুব নরমাল। এখানে অন্তত সমাজের সঙ্গে কোনো লড়াই করতে হয় না।’

একা মায়ের সন্তানদের ওপর প্রভাব

একটা সুখী যুগল পরিবারে সন্তানদের বেড়ে ওঠা আর একা মায়ের পরিবারে বড় হওয়া সন্তানদের জীবনযাপনে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। এটা ঠিক, সব পরিবার সুখী নয়। সেক্ষেত্রে একটা অসুখী পরিবারে সন্তানকে বড় করার চেয়ে আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো। নাহলে সেই অসুখী পরিবারের প্রভাব সন্তানের পুরো জীবনের ওপর পড়ে। তবে, সন্তানের ওপর মা এবং বাবা উভয়ের ছায়া থাকাই সবচেয়ে সুন্দর এবং নিরাপদ। কিন্তু যখন মা একা সন্তানকে লালনপালন করতে বাধ্য হন, তখন সন্তানের ওপর তার প্রভাব কেমন হয়?

সাধারণভাবে যদি দেখা হয়, সন্তানের জীবনের বড় একটা অপূর্ণতা থেকে যায়। সে বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়। সে যখন অন্যদের দেখে বাবারা তাদের সন্তানদের ভালোবাসছে, তখন তার ভেতরে এক অবর্ণনীয় কষ্ট দানা বাঁধে। দিনের পর দিন সেই কষ্ট তার মনোজগতের ওপর প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া বাবা নেই বলে সমাজ তাকে যেই কটাক্ষ করে সবসময়, বিভিন্ন জায়গায় হেয় হতে হয় বা নেতিবাচক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, এটা আরও বেশি ক্ষতিকর। সন্তানটি ভাবতে থাকে, অন্য আট দশ জনের মতো তার জীবন কেন সহজ স্বাভাবিক নয়, কেন তার বাবা নেই। কখনো কখনো সে মাকেও দোষারোপ করে ফেলে। কারণ, সমাজ তার মাথায় এই ধারণা ঢুকিয়ে দেয় যে, এসবের জন্য তার মা-ই দায়ী।

তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। জেসমিন আক্তার নামের একজন নারীর দুই সন্তান- একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে তিনি সংসার ছেড়ে আসতে বাধ্য হন। একাই মানুষ করতে থাকেন দুই সন্তানকে। একপর্যায়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান সন্তানদের নিয়ে।

সন্তানদের তিনি মানুষের মতো মানুষ করে তোলেন। এখন দুটি সন্তানই কর্মজীবী। এমনকি তারা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তখন তারা নিজ দায়িত্বে মাকে আবার বিয়ে দেন। যেন মা জীবনের শেষ দিনগুলো একাকিত্বে না ভোগেন। একজন ভালো বন্ধু পান।

একা মায়ের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত

যেহেতু একা মায়ের সংগ্রাম কঠিন, তাই সমাজের মানুষের উচিত তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, সহযোগী মনোভাব পোষণ করা। তাদের দোষারাপ করে, কটাক্ষ করে তাদের চলার পথ অমসৃণ করে না তুলে বরং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। আর সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট দরকার মা-বাবার পরিবারের। বেশির ভাগ মেয়ে এমন পরিস্থিতিতে মা-বাবার পরিবার থেকে সহযোগিতা পান না। ফলে, তাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

জেসমিন আক্তারের কথাই বলা যাক, তার বাবা তাকে বিয়ের দিন বলেছিলেন, ‘যদি কখনো শ্বশুরবাড়িতে এমন কিছু ঘটে যা তোমার সম্মানে আঘাত করে, তাহলে দ্বিতীয়বার না ভেবেই আমাদের কাছে চলে এসো। এ বাড়ির দরজা তোমার জন্য চিরকাল খোলাই থাকবে।’ প্রতিটি মা-বাবা যদি এমনভাবে পাশে থাকেন, তাহলে একা মায়েরা সমাজের বিপরীতে দাঁড়িয়েও সংগ্রাম করে যেতে পারবেন, টিকে থাকতে পারবেন।

জাহ্নবী

অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অবদান

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৬ এএম
আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অবদান
অলংকরণ: মাসুম

গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং এই সাফল্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের কৃতিত্ব বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত নারীদের। গ্রামীণ কৃষি থেকে শুরু করে শহুরে শিল্প এবং অনানুষ্ঠানিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান, নারীরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তিতে অনস্বীকার্য শক্তি হয়ে উঠেছে। সামাজিক এবং কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তাদের অংশগ্রহণ পরিবার, সমাজ এবং জাতীয় অর্থনীতিকে পরিবর্তন করেছে। আজকের এই লেখায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীদের ভূমিকা, তাদের অবদান, তাদের চ্যালেঞ্জ এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্তির গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়েছে।

কর্মক্ষেত্রে নারী: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালক

শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৩৬ শতাংশের ওপরে বেড়েছে। কৃষি, তৈরি পোশাকশিল্প (আরএমজি), ক্ষুদ্র উদ্যোগ এমন নানাবিধ ক্ষেত্রে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাদের কাজ দারিদ্র্য হ্রাস, পরিবারের আয় বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছে।

তৈরি পোশাকশিল্প

অর্থনীতিতে নারীদের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অবদান রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) শিল্পে দেখা যায়, যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশেরও বেশি। এই সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৮০ শতাংশ, যা এমন একটি শিল্পের বৃদ্ধিকে সচল রেখেছে, যেখানে বাংলাদেশ চীনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারকের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ আরএমজি সেক্টর লাখ লাখ নারীকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকা থেকে যারা কাজের সন্ধানে শহরে পাড়ি জমান। এই নারীরা কেবল তাদের পরিবারকেই সাপোর্ট করেন না বরং উপার্জনের মাধ্যমে বৃহত্তর জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখেন।

আরএমজি সেক্টরের সাফল্যকে প্রায়শই একটি নির্দিষ্ট শিল্পে নারীর ক্ষমতায়ন কীভাবে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে পারে তার একটি কেস স্টাডি হিসেবে দেখা হয়। এটি সামাজিক পরিবর্তনকেও ত্বরান্বিত করেছে, লিঙ্গ সমতার উন্নতি ঘটিয়েছে, উন্নত কাজের পরিবেশ এবং উন্নত মজুরি দাবি করার জন্য নারীদের একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে।

কৃষিতে নারী

শিল্পায়নের দিকে অগ্রসর হওয়া সত্ত্বেও কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে রয়ে গেছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং জিডিপি- উভয় ক্ষেত্রেই অবদান রাখে। নারীরা এই সেক্টরে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেন, বিশেষ করে জীবিকা নির্বাহ, ফসল উৎপাদন এবং পশুপালন ব্যবস্থাপনায়। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) তথ্য অনুসারে,  কৃষি শ্রমশক্তিতে ৫০ শতাংশের বেশি। তারা প্রায়শই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি বা বেতন ছাড়াই বপন, ফসল কাটা এবং ফসল-পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণের মতো কাজে নিযুক্ত থাকেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষিতে নারীদের অবদানকে স্বীকৃত ও আনুষ্ঠানিক করার লক্ষ্যে নানারকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষিতে নারীর ক্ষমতায়ন গ্রামীণ উন্নয়নকেও উৎসাহিত করে, যেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো গ্রামে বসবাস করে।

উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্রঋণ

ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পগুলো নারীদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু এবং ব্যবসার প্রসার এ মূলধনের জোগান দিয়েছে। এই উদ্যোগগুলো লাখ লাখ নারীকে স্বাবলম্বী হতে, তাদের জীবিকা উন্নত করতে এবং সমাজের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম করেছে। নারী উদ্যোক্তারা এখন হস্তশিল্প ও টেইলারিং থেকে শুরু করে পোলট্রি ফার্মিং, পোশাক বিক্রি, প্রসাধনীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের খুচরা বিক্রেতার বিস্তৃত পরিসরে নিজেদের যুক্ত করেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা যখন আয় নিয়ন্ত্রণ করে তখন তারা এমন ব্যয়কে অগ্রাধিকার দেয়, যা পারিবারিক কল্যাণ বাড়ায়, ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে অর্থপূর্ণ প্রভাব তৈরি হয়।

অর্থনৈতিক অংশগ্রহণে নারীর চ্যালেঞ্জ

যদিও নারীরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখছেন, তবুও তারা সুযোগসুবিধা অর্জনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। কিছু স্থায়ী বাধা হলো শ্রমজীবী নারীর মজুরি ব্যবধান, শিক্ষায় সীমিত প্রবেশাধিকার এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, যা নারীর গতিশীলতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে।

মজুরি বৈষম্য: বাংলাদেশের নারীরা একই কাজের জন্য পুরুষদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম উপার্জন করেন, এটি বিভিন্ন শিল্পে একটি সমস্যা হিসেবে দেখা যায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, পুরুষদের তুলনায় নারীদের গড় মজুরি ২১ শতাংশ কম। এই মজুরি ব্যবধান নারীদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে সীমিত এবং সামগ্রিকভাবে হ্রাস করে।

শিক্ষায় সীমিত প্রবেশাধিকার: যদিও বাংলাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তবুও উচ্চশিক্ষায় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। অনেক মেয়ে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অর্থনৈতিক চাপ বা বাল্যবিবাহের কারণে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। উচ্চশিক্ষার সুযোগের অভাব প্রকৌশল, প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনার মতো ক্ষেত্রে উচ্চ বেতনের চাকরিতে নারীদের প্রবেশকে সীমাবদ্ধ করে।

সামাজিক মনোভাব: আমাদের সমাজ এখনো এটি বিশ্বাস করে যে নারীরা প্রাথমিকভাবে গৃহস্থালির কাজ এবং পরিবারের যত্ন নেওয়ার সব দায়িত্ব পালন করবে। কাজ এবং গৃহজীবনের ভারসাম্যের এই ‘দ্বৈত বোঝা’ নারীদের শ্রমশক্তিতে সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করার 
ক্ষমতা হ্রাস করে, তাদের কর্মজীবনের অগ্রগতিকে সীমিত করে।

নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: এগিয়ে যাওয়ার পথ

অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীদের অব্যাহত অবদান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে অবশ্যই কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে যা এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে।

নীতিগত হস্তক্ষেপ: সরকারকে অবশ্যই জেন্ডার-সংবেদনশীল নীতিগুলোর প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চালিয়ে যেতে হবে যা নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সমান কর্মসংস্থানের আরও ভালো সুযোগ প্রদান করবে। ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কাজের পরিবেশ এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যহীনতা নিশ্চিত করতে শ্রম আইন শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: নারীদের জন্য আর্থিক সুবিধাগুলোতে প্রবেশাধিকার সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এই সুবিধা তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো নারীদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য বড় পরিসরে ঋণ, বিমা এবং সঞ্চয়ের মতো বিকল্পগুলো প্রদানের দিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিত। ব্যাংকগুলো নারীদের ঋণদানে আরও সহজ শর্ত এবং আন্তরিকতা দেখাতে পারে।

শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন: নারীদের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো, বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত (STEM) ক্ষেত্রে উচ্চ বেতনের চাকরির দরজা খুলে দিতে পারে। নারীদের প্রয়োজনের জন্য তৈরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলো আইটি এবং ফিন্যান্সের মতো উদীয়মান সেক্টরে তাদের কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে।

সামাজিক নিয়মের পরিবর্তন: অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সাংস্কৃতিক বাধাগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে, বিশেষ করে যা তাদের গতিশীলতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে সীমিত করে। সমাজভিত্তিক কর্মসূচি এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং লিঙ্গ সমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সবশেষে
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অবদান অনস্বীকার্য এবং এ অবদান দিনে দিনে বাড়ছে। গার্মেন্টশ্রমিক থেকে উদ্যোক্তা, কৃষক থেকে নীতিনির্ধারক, নারীরা সক্রিয়ভাবে দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ গঠন করছেন। যাই হোক, নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করার জন্য বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো ভেঙে আরও ন্যায়সঙ্গত পরিবেশ তৈরি করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। নারীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ক্ষমতায়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।

জাহ্নবী

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী ফ্রাঁসোয়াস বেতেনক্যুঁ মেয়ারের প্রাচুর্যময় জীবন

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০০ এএম
আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫০ এএম
ফ্রাঁসোয়াস বেতেনক্যুঁ মেয়ারের প্রাচুর্যময় জীবন
ফ্রাঁসোয়াস বেতেনক্যুঁ মেয়ার। ছবি: সংগৃহীত

ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে ধনী নারী ফ্রাঁসোয়াস বেতেনক্যুঁ মেয়ার। তৃতীয়বারের মতো তিনি এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। ফরাসি এই নারীর মোট অর্থের পরিমাণ ৮৫.৭ বিলিয়ন ডলার।

১৯৫৩ সালের ১০ জুলাই ফ্রান্সের নিউলি-সার-সেইনে জন্মগ্রহণ করেন মেয়ার। তিনি মানবসেবামূলক সংগঠন বেতেনক্যুঁ শ্যুলার ফাউন্ডেশনের সভাপতি। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, মানবিক সাহায্য এবং সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক ঐতিহ্য রক্ষার মতো নানা কাজের সঙ্গে জড়িত এ সংগঠন। এর বাইরে একাধিক বইও প্রকাশিত হয়েছে বেতেনক্যুঁ মেয়ারের।

৬৯ বছর বয়সী এই বিলিয়নিয়ারের বেশির ভাগ অর্থ আসে সৌন্দর্য-সংক্রান্ত পণ্য থেকে। তার কোম্পানির নাম ল’রিয়েল। ল’রিয়েল বিশ্বের বিখ্যাত মেকআপ, ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ১০০ বছর আগে বেতেনক্যুঁর নানা ইউজিন শুলার কোম্পানিটি চালু করেন। ১৯০৭ সালে চুল রং করার জন্য এক ধরনের সল্যুশন বানিয়ে ইউজিন সেটির নাম দিয়েছিলেন ‘ওরিয়াল’। প্যারিসের হেয়ারড্রেসারদের কাছে সেই পণ্য বিক্রি করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে নিজের একটি কোম্পানি হিসেবে রেজিস্টার করিয়ে নেন, যা কিছুদিন পর ‘ল’রিয়েল’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫৭ সালে শুলারের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন তার মেয়ে লিলিয়ান বেতেনক্যুঁ। তিনি ও তার স্বামী ফরাসি রাজনীতিক আঁদ্রে বেতনক্যুঁ মিলে একসঙ্গে কোম্পানির দায়িত্ব সামলাতে থাকেন। এখন পরিবারের সঙ্গে মিলে মেয়ার ল’রিয়েলের ৩৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। মোট ৮৫ হাজার কর্মী রয়েছে তার। তিনি ল’রিয়েলের বোর্ডে ১৯৯৭ সাল থেকে কর্মরত রয়েছেন। তার দুই সন্তান জ্য ভেক্টর ও নিকোলাসও এখন বোর্ডের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালের পর থেকে কোম্পানিটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি লাভ করে। লরিয়ালের ৩৩ শতাংশ মালিকানা পাওয়া সত্ত্বেও প্রসাধনী জগতের বাইরে বিভিন্ন কাজে সময় ব্যয় করেন মেয়ার। এর মধ্যে একটি হলো বই লেখা। গ্রিক মিথোলজি থেকে শুরু করে বাইবেলের বিভিন্ন ঘটনা নিয়েও লিখেছেন বিলিয়নিয়ার এই নারী।

১৯৮৭ সালের দিকে বিজ্ঞান ও শিল্পকলা নিয়ে গবেষণা ও মানবতাবাদী উদ্যোগ প্রচারের লক্ষ্যে ‘বেতনক্যুঁ শুলার ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। মা-বাবা দুজনকেই নিয়মিত জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে দেখলেও অল্প বয়স থেকেই মেয়ার ছিলেন এর বিপরীত। এমনকি কিশোরী বয়সেও তিনি পিয়ানো বাজানো কিংবা বই পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন বলে জানা যায়।

প্রথমে তিনি তার মায়ের কাছ থেকেই সবচেয়ে ধনী নারীর টাইটেলটি পেয়েছিলেন। তবে তাদের মা-মেয়ের সম্পর্কেও একসময় ফাটল ধরে। ২০০৭ সালে মায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সেলিব্রেটি আলোকচিত্রী ফ্রাঁসোয়া-মারি বেনিয়ারের নামে একটি মামলা করেছিলেন মেয়ার। তার অভিযোগ ছিল, মায়ের এই বন্ধু তাদের সম্পত্তির একাংশ দখলের চেষ্টা করছেন। এর পর থেকেই মায়ের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক তৈরি হয় তার।

পরবর্তী সময়ে সেই মামলা ‘বেতনক্যুঁ অ্যাফেয়ার’ নামে পরিচিতি পায়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলে মামলাটি। শেষ পর্যন্ত বেনিয়ারকে ওই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত জানান, তিনি লিলিয়ানের ডিমেনশিয়া রোগের সুযোগ নিয়ে তার পরিবারের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন।

২০০৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে তার মা বলেছিলেন, ‘মেয়ের সঙ্গে আমার আর দেখা হয় না। আমি চাইও না দেখা করতে। আমার মেয়ে এক ধরনের জড় পদার্থ হয়ে গেছে।’ ২০১৭ সালে তার মা লিলিয়ান বেতেনক্যুঁর মৃত্যু ঘটে।

জাহ্নবী

এশিয়া মহাদেশের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট কোরাজন অ্যাকুইনো সাধারণ গৃহবধূ থেকে প্রেসিডেন্ট

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০০ এএম
আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫০ এএম
সাধারণ গৃহবধূ থেকে প্রেসিডেন্ট
কোরাজন অ্যাকুইনো। ছবি: সংগৃহীত

কোরাজন অ্যাকুইনো। সাধারণ এক গৃহবধূ থেকে ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। ১৯৩৩ সালের ২৫ জুলাই ফিলিপিন্সের টারলাক প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন কোরাজন। তার বাবা ছিলেন ১৫ হাজার একর আখ খেতের মালিক এবং বিশাল ব্যাংক ব্যবসায়ী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে কোরাজন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে যান। সেখানে তিনি ফিলাডেলফিয়া এবং নিউইয়র্কের ক্যাথলিক স্কুলে পড়াশোনা করেন। এর পর দেশে ফিরে আসেন এবং ফার ইস্ট ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে ভর্তি হন।

১৯৫৪ সালে তখনকার নামকরা তরুণ সাংবাদিক বেনিগনো নিনয়কে বিয়ে করেন অ্যাকুইনো। নিনয়ও ছিলেন কোরাজনের মতোই ধনী পরিবারের সন্তান। কোরাজন ছিলেন নিভৃতচারী এক গৃহিণী। অন্যদিকে নিনয় রাজনীতিতে পা দিয়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন। ফিলিপাইনে সবচেয়ে কম বয়সে মেয়র, গভর্নর এবং সিনেটর নির্বাচিত হন তিনি।

রাজনীতির ময়দানে আসার কোনো ইচ্ছা ছিল না কোরাজনের। ১৯৭২ সালে ফিলিপিন্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মার্কোস সামরিক আইন জারি করলে এর পরের বছর অন্য রাজনীতিবিদদের মতো বেনিগনো নিনয়ও গ্রেপ্তার হন। পরবর্তী সাত বছর বহির্বিশ্বের সঙ্গে বেনিগনোর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল তার স্ত্রী কোরাজন অ্যাকুইনো। ১৯৮০ সালে মার্কিন সরকারের চাপের কারণে বেনিগনোকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট মার্কোস। এর পর যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে স্ত্রীকে নিয়ে চলে যান বেনিগনো নিনয়। তবে তিনি বেশি দিন সেখানে থাকেননি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ১৯৮৩ সালে দেশে ফিরে আসেন বেনিগনো। কিন্তু বিমান থেকে দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই আততায়ীর গুলিতে জীবন হারান এই রাজনীতিবিদ। মূলত এর পরই শুরু হয় কোরাজন অ্যাকুইনোর রাজনৈতিক পথচলা।

স্বামী হত্যার বিচার চান তিনি এবং এর পরই রীতিমতো জনগণের নেত্রীতে পরিণত হন অ্যাকুইনো। ১৯৮৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কোসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং উভয়পক্ষই বিজয়ের দাবি করেন। এ সময় লাখ লাখ জনতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামেন গণতন্ত্রের এই নেত্রী। দেশি-বিদেশি চাপ সইতে না পেরে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তৎকালীন স্বৈরশাসক মার্কোস। এর পর ছয় বছর দেশ পরিচালনা করেন কোরাজন অ্যাকুইনো। কিন্তু তিনি খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। অন্তত ছয়টি সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা তাকে মোকাবিলা করতে হয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে।

১৯৯২ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দেন। তবে রাজনীতির মাঠে ঠিকই সক্রিয় ছিলেন এর পরের আরও কয়েক বছর। ২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট জোসেফ এস্ত্রাদারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অন্যতম ভূমিকা রাখেন এই নারী। অন্ত্রে ক্যানসার ধরা পড়ার পর তাকে হাসপাতালেই জীবনের বাকিটা সময় কাটাতে হয়। এমনকি শেষ দিকে চিকিৎসা নিতেও তিনি অস্বীকার করেন। অবশেষে ২০০৯ সালের ১ আগস্ট ৭৬ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার আন্দোলনের জোরালো কণ্ঠস্বর কোরাজন অ্যাকুইনো।

জাহ্নবী

সিটি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেন ফ্রেজার পরিশ্রম ও চেষ্টায় উচ্চপদে নারী

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০০ এএম
আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫১ এএম
পরিশ্রম ও চেষ্টায় উচ্চপদে নারী
জেন ফ্রেজার। ছবি: সংগৃহীত

নারীরা চাইলেই তাদের পরিশ্রম এবং কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে উঁচু স্থানে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। তেমনি প্রতিষ্ঠিত একজন নারী জেন ফ্রেজার। জেন ফ্রেজার হলেন একজন ব্রিটিশ-আমেরিকান ব্যাংকিং এক্সিকিউটিভ, সিটি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনিই প্রথম নারী যিনি একটি বড় মার্কিন ব্যাংকের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জেন ফ্রেজার ১৯৬৭ সালে ১৩ জুলাই স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রুসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত কেমব্রিজের গিয়ারটেন কলেজে পড়াশোনা করেন। অর্থনীতিতে বিএ করার পর তিনি ১৯৮৮ এর জুলাই থেকে ১৯৯০ এর জুলাই পর্যন্ত লন্ডনের গোল্ডম্যান শ্যাক্স-এ একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণ বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৯৪ সালে এমবিএ শেষ করেন। তারপর ১৯৯৪ সালে ফ্রেজার ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানিতে যোগ দেন, আর্থিক পরিষেবা এবং বিশ্ব কৌশলে কাজ করেন। অবশেষে অংশীদারও হন। 

ফ্রেজারকে ২০০৪ সালের জুলাইয়ে সিটি গ্রুপের বিনিয়োগ এবং বৈশ্বিক ব্যাংকিং বিভাগে ক্লায়েন্ট স্ট্র্যাটেজির প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অক্টোবর ২০০৭ সালে তিনি গ্লোবাল হেড অব স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড মার্জারস অ্যান্ড অ্যাকুইজিশন হিসেবে পদোন্নতি পান। তারপর ২০০৯ সালের জুনে সিটি প্রাইভেট ব্যাংকের সিইও নিযুক্ত হন। তার পদোন্নতির সময় ব্যাংকটির প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার বার্ষিক ঘাটতি ছিল। জেন ফ্রেজার এই সমস্যার সমাধান করেন।

তিনি যে পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করেছিলেন তার মধ্যে ছিল ক্লায়েন্টদের সঙ্গে প্রাইভেট ব্যাংকারদের অনুপাত হ্রাস করা, প্রতি ৩০ জন ক্লায়েন্টের জন্য একজন ব্যাংকারের লক্ষ্যমাত্রা এবং বছর শেষে ব্যাংকারদের জন্য কমিশন সরিয়ে দেওয়া। সিটি গ্রুপ দেশব্যাপী বেশ কয়েকটি বন্ধকি অফিস বন্ধ করে দেয় এবং শুধু সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে ১০০০ কর্মী ছাঁটাই করে। 

ফ্রেজার হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ডিনস অ্যাডভাইজারস বোর্ড, স্ট্যানফোর্ড গ্লোবাল অ্যাডভাইজরি বোর্ড, ইকোনমিক ক্লাব অব নিউইয়র্ক এবং কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের সদস্য। তিনি ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টাচ ফাউন্ডেশন বোর্ডের সদস্যও ছিলেন। ২০২৩ সালে ফরচুনের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারীদের তালিকায় ফ্রেজার চতুর্থ স্থানে ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে ফ্রেজার বিবাহিত এবং দুই পুত্রের জননী। তার স্বামী আলবার্তো পিয়েড্রা, একজন সাবেক ব্যাংকার এবং কিউবার স্থানীয় বাসিন্দা। এই সংগ্রামী নারী তার সংসার এবং কর্মক্ষেত্র সমান দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছেন এবং নিজ পরিশ্রম এবং কর্মগুণে সিটিগ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন; যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

জাহ্নবী