ঢাকা ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পর্যটন খাত হোক নারীবান্ধব

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২২ পিএম
পর্যটন খাত হোক নারীবান্ধব
নারীরাও স্বাধীনতা নিয়ে আকাশ দেখুক। ছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণ মানে শুধু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরতে যাওয়া নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু। ভ্রমণ নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে শেখায়, প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করে, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির চমৎকার লেনদেনের সুযোগ করে দেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তার বাধার কারণে ভ্রমণ— বিশেষ করে একাকী কোথাও ঘুরে আসা একটি অপূরণীয় স্বপ্নের মতো। ভ্রমণে নারীদের নানাবিধ ব্যাপার নিয়ে লিখেছেন রাজিয়া সুলতানা

বাংলাদেশ বৈশ্বিক পর্যটনে একটি ক্রমবর্ধমান গন্তব্য হিসেবে অবস্থান করছে, এখন সময় এসেছে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার এবং ভ্রমণকে নারীদের জন্য আরও সহজলভ্য ও নিরাপদ করে তোলার। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে স্বতন্ত্রভাবে বেশকিছু শুধু নারীদের নিয়ে ট্যুর গ্রুপ তৈরি হয়েছে। পর্যটক ও লেখক এলিজা বিনতে এলাহীর সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশে নারীদের ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা, বাধা এবং করণীয় সম্পর্কে। তার মতে, ‘ভ্রমণ শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের দেশে পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে ভ্রমণের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলা হয় না। ভ্রমণ একটি শিল্প। ভ্রমণ যেমন ব্যক্তির জন্য দরকারি, তেমনি এটি রাষ্ট্রীয় পর্যটনশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয়। বিশ্বব্যাপী পর্যটন নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, পর্যটনের মাধ্যমে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে, পর্যটন অর্থনীতির চাকা সচল করার মাধ্যমে একটি গোটা রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে পর্যটনশিল্প অনেক অবহেলিত। নারীর স্বাবলম্বী হওয়া, উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা, স্বাধীনভাবে চিন্তা করা, নিজেকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে ভ্রমণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রমণ দেশের বাইরে হতে হবে এমন নয়, নিজের জেলা, নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতি জানার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।’

এলিজা বিনতে এলাহী ঘুরেছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলার আনাচে-কানাচে। তিনি মনে করেন, ‘দেশকে পর্যটনবান্ধব রাখা ও নারীবান্ধব করে তোলার জন্য নাগরিকদের দায়িত্ব রয়েছে। গণপরিবহনগুলো নারীবান্ধব নয়। আবাসনের সমস্যাও প্রকট।’ তিনি আরও জানান, ‘ভ্রমণের সঙ্গে পোশাকের একটা সম্পর্ক রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণবান্ধব পোশাকের ক্ষেত্রে নারীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় সব পর্যায়ে সচেতনতা প্রয়োজন। মানুষের মধ্যে চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন দরকার।’ 

নারীদের ভ্রমণে সাধারণত যেসব বাধা আসে তার মধ্যে রয়েছে-

সাংস্কৃতিক নিয়ম এবং সামাজিক প্রত্যাশা
বাংলাদেশের কিছু নিয়মিত পর্যটন এলাকা যেমন- কক্সবাজার, তিন পার্বত্য জেলার ফোকাসড কিছু লোকেশন, সিলেট ইত্যাদি ছাড়া বেশির ভাগ এলাকায় ভ্রমণে নারীদের জন্য রয়েছে নানাবিধ প্রতিকূলতা। কিছু কিছু স্থানে নারীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে অলিখিত বাধা। একজন নারী একা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের বিষয়টি সন্দেহ, সংশয় বা সম্পূর্ণ অস্বীকৃতির সঙ্গে দেখা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে সমাজ প্রত্যাশা করে যে, নারীরা তাদের পরিবারের কাছে থাকবেন, ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণ, অচেনা-অজানার অন্বেষণ অথবা কেবল অবসরের জন্য একাকী বাইরে বের হওয়ার পরিবর্তে ঘরোয়া দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দেবেন।

নিরাপত্তার উদ্বেগ
নারী পর্যটক জিনাত হাকিম নিরাপত্তাটাকেই সবার ওপরে রাখতে চান। তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে কোথাও যেতে ভ্রমণে একদমই ভাবতে হয় না। কিন্তু দেশের ভেতরে ভ্রমণে নিরাপত্তার কথাই সবার আগে ভাবতে হয়। আমাদের সমাজ মনে করে, একটি মেয়ে একা কেন ভ্রমণে যাবে- এই চিন্তাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধটা সমাজের আগে শুরু হয় পরিবারের সঙ্গে।’ বাংলাদেশে নারীদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে হয়রানির গল্প, নিরাপদ আবাসস্থলের স্বল্পতা, রাত্রিকালীন ভ্রমণ সংশয়, পাবলিক স্পেসে অনিরাপত্তা- ভ্রমণ পরিকল্পনায় নারীর জন্য এসবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। পরিবার থেকে নারী যে বাধা পায়, তা মূলত নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে তৈরি হয়। 

অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা
নারীর জন্য ভ্রমণকে সাধারণত একটি বিলাসিতা হিসেবে দেখা হয়। বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বিবেচনায় আর্থিক লেনদেন আছে, এমন সিদ্ধান্তের জন্য তাদের পরিবার বা স্বামীর ওপর নির্ভর করতে হয়। এমনকি যেসব নারীর আর্থিক সংগতি বা সম্পদ রয়েছে, তারাও ভ্রমণের মতো ব্যক্তিগত ইচ্ছার চেয়ে পারিবারিক চাহিদাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।

অবকাঠামোর অভাব
নারী পর্যটক আরিফা রহমানের কাছে নারীবান্ধব টয়লেটের অভাব এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অপ্রাপ্যতাকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে হয়। বাংলাদেশের পর্যটন অবকাঠামো এখনো উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে, বিশেষত নারীবান্ধব অবকাঠামোয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দূরদৃষ্টি, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের ঘাটতি রয়েছে। নারীবান্ধব পরিষ্কার বিশ্রামাগার, নিরাপদ বাসস্থান, টয়লেট এবং নিরাপদ পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মতো সুবিধার অভাব অনুভব করেন ভ্রমণপিপাসী নারী পর্যটকরা। অবকাঠামোর অপ্রতুলতা নারীদের ভ্রমণকে কঠিন করে তোলে- বিশেষ করে যারা একা ভ্রমণ করতে চান। ভ্রমণের সময় আরাম এবং নিরাপদ বোধ করা অনেক জরুরি। 

পারিবারিক এবং সামাজিক চাপ
বাংলাদেশের অনেক নারীর জন্য পুরুষের সাহচর্য ছাড়া ভ্রমণকে অনুপযুক্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। ‘মানুষ কী বলবে’ তার ভয় একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা, বিশেষ করে রক্ষণশীল এলাকাগুলোয়। এমনকি বিবাহিত নারীরাও ভ্রমণের মতো বিষয় নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেন। পারিবারিক দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়ার একটি সামাজিক চাপ সবসময়ই থাকে। 

নারীদের ভ্রমণে উৎসাহী হওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

নারীর ক্ষমতায়ন এবং আস্থা তৈরিতে 
ভ্রমণ নারীদের চিরাচরিত কমফোর্ট জোনের বাইরে পা রাখার, নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার এবং ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেয়। হোক সেটি একটি ভিনদেশি শহর, একটি নতুন ভাষা শেখা বা নিজের দেশের প্রকৃতিতে কেবল শান্তি খুঁজে পাওয়া, এই অভিজ্ঞতাগুলো ব্যক্তিগত বৃদ্ধি এবং ক্ষমতায়নে অবদান রাখে। অনেক নারীর জন্য, ভ্রমণ হলো তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার এবং সামাজিক প্রত্যাশা থেকে মুক্ত হওয়ার একটি মাধ্যম।

সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচন 
ভ্রমণ নারীদের বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধারণা এবং জীবনধারার সঙ্গে পরিচিত করে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করে। ভ্রমণ আপনাকে আরও উন্মুক্ত মানসিকতা, সহনশীলতা এবং বোঝাপড়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এটি এমন একটি গুণ, যা ক্রমবর্ধমান বিশ্বে আপনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তিন পার্বত্য জেলার উপজাতীয় সম্প্রদায় থেকে কক্সবাজারের উপকূলীয় জীবন, হাওর কিংবা চা-বাগান, পাহাড় কিংবা সমুদ্র- আপনার ব্যক্তিগত জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে।

মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিতে
ভ্রমণ প্রাত্যহিক জীবনের ছকে বাঁধা রুটিন থেকে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিরতি দেয়। প্রতিদিনের কাজ, পরিবার এবং সামাজিক প্রত্যাশার চাপ থেকে অব্যাহতি দেয়, যা নারীকে মানসিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করে। আরও আত্মবিশ্বাসী এবং উন্নত মানসিকতার করে তোলে এবং মনের পাশাপাশি শরীরও ভালো অনুভব করে।

অর্থনীতিতে অবদান
যত বেশি নারী পর্যটক ভ্রমণে যুক্ত হবেন, তত বেশি তারা স্থানীয় অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখতে পারবেন। ছোট ব্যবসা, হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং পর্যটনশিল্প আরও সমৃদ্ধি অর্জন করবে। নারীদের ভ্রমণে উৎসাহিত করা স্থানীয় অর্থনীতিতে বিশেষ করে বাংলাদেশের অনুন্নত অঞ্চলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশের পর্যটন খাত হওয়া চাই নারীবান্ধব 

পর্যটনকে নারীদের জন্য একটি কার্যকর ও আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে নারী ভ্রমণকারীদের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিরাপদ করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি 
সরকারের উচিত সব পর্যটক বিশেষ করে নারীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। পর্যটন এলাকায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত রাখা, যেকোনো হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, আবাসিক হোটেলগুলোয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, টয়লেট এবং খাবারের ব্যাপারে স্বাস্থ্যসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া ইত্যাদি জরুরি।

নারী পর্যটক জিনাত হাকিম মনে করেন, ‘নারীবান্ধব পর্যটনশিল্প নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরিকল্পনা, উদ্যোগ গ্রহণ এবং কাজ করার অনেক জায়গা রয়েছে।’ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এত বাধা কিংবা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, নারীর ভালো থাকায় ভ্রমণও যুক্ত হোক। সব বাধা পেরিয়ে নারীর জন্য ভ্রমণ হোক নিরাপদ ও আনন্দের। উন্মুক্ত হোক প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বদ্ধ দুয়ার।

জাহ্নবী

৬ বীরকন্যার গল্প

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম
৬ বীরকন্যার গল্প
(বাঁ থেকে) মোছা. এলেজান (এলিজান নেছা), মোছা. দোলজান নেছা, মোছা. মাছুদা (মাসুদা খাতুন), মোছা. মোমেনা খাতুন, রাবেয়া খাতুন ও মজিরন নেছা। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শুধু যে পুরুষরাই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, যুদ্ধ করেছিলেন, তা নয়। বরং অনেক নারীও সেই যুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন। কিছুসংখ্যক নারী যুদ্ধ করেছিলেন অস্ত্র দিয়ে, কেউ শত্রুপক্ষের আস্তানায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে তা সরবরাহ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে, কেউ নিজের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, পরম স্নেহে তাদের পাতে তুলে দিয়েছেন খাবার, কেউ আবার অত্যাচার সহ্য করেছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে। কুষ্টিয়ার এমনই ছয়জন বীরকন্যা সম্পর্কে লিখেছেন মোহনা জাহ্নবী

বীরকন্যা মজিরন নেছা

মজিরন নেছার আবাস কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নাতুড়িয়া গ্রামে। তিনি নিজ জেলাতেই যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের প্রয়োজনে কখনো ধরেছেন ছদ্মবেশ, সংগ্রহ করেছেন শত্রুপক্ষের গোপন খবর। কখনো আবার সময়ের প্রয়োজনে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন হাতে। যুদ্ধ জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছেন, সব আত্মত্যাগকে তখন সার্থক মনে হয়েছে। যুদ্ধের অনেক বছর পর বীরকন্যা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আরও সম্মানিত বোধ করেছেন বীরকন্যা মজিরন নেছা।

বীরকন্যা রাবেয়া খাতুন

রাবেয়া খাতুনের জন্ম কুষ্টিয়ার করিমপুরে। বর্তমানে তিনি সদর উপজেলার জিয়ারখী ইউনিয়নের বংশীতলা গ্রামে বসবাস করেন। যখন দেশজুড়ে যুদ্ধের দামামা বাজছে, তখন তিনি নববধূ, বয়স মাত্র ১৬ বছর। ওইটুকু বয়সেই তাকে দেখতে হয়েছিল জীবনের সবচেয়ে নির্মম রূপ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে ভয়ানকভাবে নির্যাতন করেছিল। যখন যুদ্ধের তাণ্ডবে আর ভয়ে তার এলাকার সব নারী পালিয়ে গিয়েছিলেন, তার স্বামী তাকে যেতে দেননি। বলেছিলেন, ‘তুই চলে গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাত রান্না করবে কে?’ আজ তার স্বামী নেই, স্বামীর ছোট্ট ভিটেতেই বসবাস করেন রাবেয়া। তার আফসোস, তার স্বামী আজও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি, যদিও তিনি বীরকন্যা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন অনেক পরে।

বীরকন্যা মোছা. মোমেনা খাতুন

কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোমেনা খাতুন। ১৯৭০ সালে যখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর, তখন তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আর তারপরের বছরেই তো দেশজুড়ে যুদ্ধ লেগে গেল। যুদ্ধের সময় মোমেনা খাতুন যখন মা-বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, তখন তাদের গ্রামে একদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢুকে পড়ে। যে যার মতো জীবন নিয়ে পালাতে থাকে। তার ছোট বোনও পালিয়ে যান। কিন্তু তিনি থেকে যান তার মা-বাবার সঙ্গে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তার মা-বাবাকে উঠানে দাঁড় করিয়ে রেখে কয়েকজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাকে বীরকন্যা নারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

বীরকন্যা মোছা. দোলজান নেছা

দোলজান নেছার জন্ম কুমারখালী উপজেলার এলঙ্গীপাড়া গ্রামে। দেশে যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন তার কোলে তিন মাসের এক কন্যা। যেদিন তার শ্বশুরবাড়ির গ্রামে পাকিস্তানি সেনা আসে, সবাই রুদ্ধশ্বাসে পালাতে থাকে। কিন্তু তারা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাননি, তার আগেই পাকিস্তানি সেনারা তাদের বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। একপর্যায়ে তিনি বুদ্ধি করে দৌড়ে পালিয়ে যেতেও শুরু করেছিলেন, কিন্তু কোলে সন্তান থাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দৌড়ে পারেননি। তারা তাকে ধরে ফেলেছিল। সন্তানসহ মাটিতে ফেলে দিয়েছিল তাকে। তারা রাজাকারের মাধ্যমে জেনে গিয়েছিল, তার স্বামীর সঙ্গে মুক্তিফৌজের যোগাযোগ আছে। তাই স্বামীর সামনেই তাকে করেছিল পৈশাচিক ধর্ষণ। বেয়োনেট দিয়ে বাঁ স্তন খুঁচিয়ে অসহ্য যন্ত্রণা দিয়েছিল। তার শাশুড়ি আর স্বামীকেও খুব মেরেছিল। এসব কথা সন্তানদের কাছে দীর্ঘজীবন গোপনই রেখেছিলেন দোলজান নেছা। পরবর্তী সময়ে তারা সব জানতে পেরেছেন।

বীরকন্যা মোছা. এলেজান (এলিজান নেছা)

কুমারখালী উপজেলার হাসিমপুর গ্রামের বাসিন্দা এলিজান নেছা। যুদ্ধের সময় তিনিও ছিলেন নববধূ। চোখে অনেক স্বপ্ন। কিন্তু যুদ্ধের কবলে সব স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে গেল তার। এলিজান নেছার স্বামী পদ্মা নদীতে মাছ ধরতেন। তার নৌকাতে মুক্তিযোদ্ধারা যাতায়াত করতেন, থাকতেনও। এমনকি তাদের বাড়িতেও আসতেন। সে খবর জেনে তাদের বাড়িতে ১৫-২০ জন পাকিস্তানি সেনা এসে হামলা করে। এলিজান নেছা এক বাড়িতে পালিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু তাকে সেখান থেকেই ধরে আনা হয় এবং অনেকে মিলে ধর্ষণ করে। এসব নিয়েই কষ্টেসৃষ্টে জীবন কেটে যাচ্ছিল তাদের। কিন্তু ১৯৯২ সালে যখন তাকে গণ-আদালতে সাক্ষ্য দিতে নিয়ে যাওয়া হলো, তারপর থেকে তাদের জীবন আরও বিভীষিকাময় হয়ে যায়। সমাজ তাদের কটু কথা শোনায়, বাঁকা চোখে দেখে, কাজের সুযোগ দেয় না। যারা দেশের জন্য এত ত্যাগ করল, তাদের জীবনেরই এমন করুণ পরিণতি।

বীরকন্যা মোছা. মাছুদা (মাসুদা খাতুন)

কুমারখালী উপজেলার হাসিমপুর গ্রামের আরও এক বীরকন্যার নাম মাসুদা খাতুন। যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ১৮-১৯ বছর। বিয়ে হয়েছিল তারও প্রায় বছর দশেক আগে। তার স্বামী মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। একাত্তরে একদিন তাদের বাড়িতে দুজন পাকিস্তানি সেনা আসে। তাকে জোর করে ঘরে নিয়ে গিয়ে একজনের পর একজন ধর্ষণ করতে থাকে। বিছানায় তখন তার ছোট ছেলেকে শুইয়ে রাখা হয়েছিল।  পাকিস্তানি সেনারা তার সেই ছোট্ট শিশুকে তুলে নিয়ে কাছের এক ডোবায় ফেলে দেয়। ধর্ষণের পর মাসুদা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেশ কিছুদিন শরীরজুড়ে প্রচণ্ড ব্যথায় ঠিকমতো হাঁটতে পারেননি, খেতে পারেননি। অভাব-অনটনের জীবনে নিতে পারেননি চিকিৎসাও। পরবর্তী সময়ে শরীরের এই দুর্দশা তাকে বহুকাল বয়ে বেড়াতে হয়েছে। তার সঙ্গে এমন নোংরা ঘটনা ঘটে যাওয়াতে স্বামী তাকে প্রথম প্রথম মেনে নিতে পারেননি। পরে মেনে নিয়েছেন আবার, অথবা মানিয়ে নিয়েছেন। রাজাকাররা লুট করেছে তাদের সোনাদানা, টাকা-পয়সার সামান্য সঞ্চয় যা ছিল। এমনকি দুটি গরু ছিল তাদের, সেসবও নিয়ে গেছে।

যুদ্ধ-পরবর্তী জীবনেও তারা ভালো থাকতে পারেননি। তার সন্তানদের মানুষ ‘মিলিটারির ছাওয়াল’ বলে উপহাস করে। ১৯৯২ সালে গণ-আদালতে সাক্ষ্য দিতে এলে আরও অনেক মানুষ তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা জানতে পারেন। ফলে জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন তাদের একঘরে করে রাখা হয়। তার ছেলেদের কাজ থেকে বের করে দেয় লোকজন। তাদের কেউ কাজ দেয় না। তাদের জীবনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনার কথা তার সন্তানরা কেউ জানত না। কিন্তু গণ-আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার পর তারাও জেনে গেছে। এই জানাটা তাদের কাছে ছিল অসম্মানের। 

কৃতজ্ঞতা স্বীকার
বই: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কুষ্টিয়া গৌরবের ৫০ বছর
লেখক: ড. মুহম্মদ এমদাদ হাসনায়েন এবং 
ড. সারিয়া সুলতানা

জাহ্নবী

 

উদ্যোক্তা জীবনে ঝুঁকি থাকলেও আমিই আমার বস: জারিন সালসাবিল সামিহা

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০০ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ পিএম
উদ্যোক্তা জীবনে ঝুঁকি থাকলেও আমিই আমার বস: জারিন সালসাবিল সামিহা
জারিন সালসাবিল সামিহা। ছবি: সংগৃহীত

জারিন সালসাবিল সামিহা। বর্তমানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তার অনলাইন পেইজের নাম আহর্সি। খবরের কাগজের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আহর্সির শুরুর গল্পটা বলুন। 

ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল দেশের বাইরে বাংলাদেশের পণ্য উপস্থাপন করার। এসএসসি পরীক্ষার দুই মাস আগে আমি ঠিক করি, বিজনেস করব। টিফিন, রিকশা ভাড়া, ঈদের সালামির জমানো টাকা দিয়ে প্রথমে শুরু করি। আমি চাচ্ছিলাম এমন কিছু করতে, বাজারে কারোর কাছে থাকবে না, ইউনিক হবে, আমার নিজস্ব পণ্য হবে। আমার আঁকাআঁকির ও ছবি তোলার গুণকে কাজে লাগিয়ে কাঠের গহনা নিয়ে কাজ শুরু করি। এসএসসি পরীক্ষার পরে পুরোদমে কাজ করি। স্কুলের বান্ধবী ও আপুরা অর্ডার করতেন, প্রশংসা করতেন। ফেসবুক গ্রুপগুলোতে পোস্ট করতাম। এর পর কোভিড মহামারি আসে। আমি তখন পুরো ঘরে বসা। সময় নষ্ট না করে কাঠের গহনা বানানোর কাজেই সম্পূর্ণ সময় দিলাম। সেপ্টেম্বরে প্রথম মালয়েশিয়া থেকে অর্ডার আসে কাঠের কাস্টমাইজড পণ্যের। ডিসেম্বরে এসে আমি আমার ডিজাইন করা শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করি। শুরু থেকেই ভালো রেসপন্স ছিল। কোয়ালিটির সঙ্গে কখনো আপস করিনি আর দামও রিজনেবল রেখেছি সবসময়।

বর্তমানে কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?

বর্তমানে আহর্সিতে আমার ডিজাইন করা ব্লক ও অ্যামব্রয়ডারির শাড়ি, শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউস পিস, কাঠের গহনা, কামিজ সেট, পাঞ্জাবি, বেবি স্টিচড শাড়ি, ফ্রক ইত্যাদি রয়েছে। এ ছাড়া বাচ্চাদের কামিজ কাস্টমাইজড করে নেওয়ারও সুযোগ আছে।

আহর্সি নামকরণের কারণ?

আমি চাচ্ছিলাম একটু ইউনিক নাম দিতে, যার অর্থটাও সুন্দর হবে। আহর্সি অর্থ রাজা। আমি বিশ্বাস করি, একদিন আহর্সি দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডের মধ্যে রাজত্ব করবে।

উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে কোন ব্যাপারটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল?

আমি আত্মনির্ভর হতে চাই, নিজে কিছু  করতে চাই- এ থেকে শুরু। আমি ছোট থেকে দেখেছি আমার নানি তার সংসার সামলানোর পাশাপাশি দক্ষতার সঙ্গে শিক্ষকতাও করেছেন। আমার মা-ও সকালে উঠে বাসার কাজ গুছিয়ে চাকরি করতে যেতেন। চাকরি করা আমার পছন্দ নয়। আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পছন্দ করি। উদ্যোক্তা জীবনে ঝুঁকি থাকলেও আমিই আমার বস। এখানে স্বাধীনতা আছে।

পরিবার থেকে সহযোগিতা পেয়েছিলেন?

শুরুতে তারা একদমই বিজনেস করাটা পছন্দ করতেন না। কিন্তু এখন অনেক সাপোর্ট দিচ্ছেন।

এখন কেমন রেসপন্স পাচ্ছেন?

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে থেকে নিয়মিত অর্ডার আসছে। ক্রেতারাও পণ্য পেয়ে সন্তুষ্ট।

আহর্সি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

দেশের বাইরে আরও বিস্তৃত পরিসরে পণ্য বিক্রি করা আর আহর্সির একটি আউটলেট দেওয়া। এর পর আস্তে আস্তে সারা দেশে আহর্সির আউটলেট করা। 

উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবেশ কতটুকু অনুকূল বলে মনে করেন?

শুরুর দিকে তো সবাই নিরুৎসাহিত করতেন, কটু কথা বলতেন। তাদের নেতিবাচক কথাকে আমি শক্তি হিসেবে নিয়েছি। আজ তারাই আসেন, বিজনেস কীভাবে শুরু করবেন সেই পরামর্শ নিতে। 

যারা নতুন উদ্যোক্তা বা উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে ইচ্ছুক, তাদের কোনো পরামর্শ দিতে চান?

শুরু করাটাই মূল। তার থেকে কঠিন কাজ হচ্ছে লেগে থাকা। লেগে থাকলে সফলতা আসবে। অনেক চড়াই-উতরাই এলেও হার মানা যাবে না। 

জাহ্নবী

 

ড. ফেরদৌসী কাদরী ভিনফিউচার ২০২৪ স্পেশাল পুরস্কার বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর ঝুলিতে

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২০ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২১ পিএম
ভিনফিউচার ২০২৪ স্পেশাল পুরস্কার বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর ঝুলিতে
ভিনফিউচার ২০২৪ স্পেশাল পুরস্কার গ্রহণ করছেন ড. ফেরদৌসী কাদরী। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী; যিনি ২০২১ সালে এশিয়ার নোবেলখ্যাত ম্যাগসেসাই পুরস্কার পেয়েছিলেন। এবার তিনি ভিনফিউচার ২০২৪ স্পেশাল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। উন্নয়নশীল দেশের উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে তিনি এ পুরস্কার পেয়েছেন। কলেরা, টাইফয়েড এবং হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের (এইচপিভি) সুলভ মূল্যের টিকা উদ্ভাবনে অবদান রাখার জন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরীকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

তিনি কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা ও সাশ্রয়ী দামে টিকা সহজলভ্য করে লাখো প্রাণ রক্ষায় কাজ করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ের হো গুওম অপেরা হাউসে ভিনফিউচারের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে তিনি ভিনফিউচার ২০২৪ স্পেশাল পুরস্কার গ্রহণ করেন।

ভিনফিউচার পুরস্কার দুটি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়। একটি গ্র্যান্ড প্রাইজ, আরেকটি স্পেশাল প্রাইজ। এ বছর ভিনফিউচার পুরস্কারের বিষয়বস্তু ছিল রিজিলিয়েন্ট রিবাউন্ড বা অদম্যের ঘুরে দাঁড়ানো। ফেরদৌসী কাদরীর কাজে এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে। বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশের প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয় এ বছর।

পুরস্কার গ্রহণের সময় ফেরদৌসী কাদরী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের উদ্ভাবন বিভাগে ভিনফিউচার পুরস্কার পাওয়ায় আমি গভীরভাবে সম্মানিত বোধ করছি। চার দশক ধরে আমি সংক্রামক রোগ, বিশেষ করে কলেরা, টাইফয়েড এবং এইচপিভির টিকা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য সুলভমূল্যে উদ্ভাবনের কাজে মনোনিবেশ করেছি। শিশু ও নারীদের জন্য এটা বিশেষভাবে কাজে লেগেছে।’

১৯৫১ সালের ৩১ মার্চ বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন ফেরদৌসী কাদরী। তিনি তার অবদানের জন্য আরও কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০২ সালে উন্নয়নশীল দেশে সংক্রামক আন্ত্রিক রোগ গবেষণার জন্য ক্রিস্টোফ মেরিএউক্স পুরস্কার পান। ২০০৮ সালে তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি থেকে গোল্ড মেডেল পান। ২০১৩ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির বার্ষিক সি এন রাও পুরস্কার পান, যেটা নিউ মেক্সিকোর শহর টাওস থেকে দেওয়া হয়। একই বছর তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারও দেওয়া হয়। তার বৈজ্ঞানিক সাফল্য বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য যেমন উপকারের, তেমনি গর্বের।

জাহ্নবী

আমরা এক জাতি, এক জনগণ: বারবারা জর্ডান

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ পিএম
আমরা এক জাতি, এক জনগণ: বারবারা জর্ডান
বারবারা জর্ডান। ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীতে এমন কিছু ব‍্যক্তিত্ব থাকেন, যাদের অবদানে বদলে যেতে পারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের চিন্তার ধরন। তারা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন। তেমনি একজন সাহসী সৎ, লড়াকু ব‍্যক্তিত্ব ছিলেন বারবারা জর্ডান; যিনি সবসময় মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ন‍্যায়বিচারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। অন‍্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে কখনো পিছপা হননি। তিনি একাধারে একজন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ইত্যাদি। মানুষের ন‍্যায়বিচারের জন্য তার অবদান ইতিহাসে অবিস্মরণীয়।

১৯৩৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি টেক্সাসের হিউস্টন শহরে জন্ম হয় বারবারা জর্ডানের। ব‍্যক্তিগতভাবে তিনি আফ্রিকা-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের সদস‍্য ছিলেন। ফলে তাকে অনেক বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। মধ‍্যবিত্ত পরিবারের একজন নারী সদস‍্য ছিলেন বারবারা জর্ডান। যদিও পড়াশোনায় বেশ আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। তিনি হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে।

আফ্রিকান-আমেরিকান রাজনীতিতে বারবারা জর্ডান এক বিস্ময়কর নাম। যার পদচারণা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে মানুষের অধিকার ও সাম‍্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৬ সালে তিনি টেক্সাসের রাজ‍্য সিনেটর নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে নির্বাচিত হন বারবারা জর্ডান। তার কারণে সাধারণ ন‍্যায় প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।

বারবারা জর্ডান যখন রাজনীতিতে আসেন, তখন আফ্রিকান-আমেরিকানদের ন‍্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সহজতর হয়। তিনি গণতন্ত্র, সংবিধান পুনর্নবীকরণের জন্য সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তার নেতৃত্বে পার্লামেন্টে সংখ‍্যালঘু ও গরিব মানুষের অধিকার ও উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠায় অনেক আইন পাস হয়। বর্ণবৈষম‍্যের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে এই বৈষম্য রোধ করেন তিনি।

বারবারা জর্ডান আইনজীবী হিসেবে মানুষের ন‍্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, নাগরিক অধিকার প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, সংখ‍্যালঘু এবং গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি জিতেছেনও এই সাহসী ও লড়াকু মনোভাবের জন্য।

১৯৭৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন বারবারা জর্ডান। তিনি একটি উক্তির জন্য অনেক খ‍্যাতি লাভ করেন, তা হলো- ‘আমরা এক জাতি, এক জনগণ’।

একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে বিশ্ব মানবসভ‍্যতায় ন‍্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তার যে ভূমিকা ছিল, তার জন্য বিশ্ববাসীর কাছে অনন‍্য দৃষ্টান্ত হয়ে তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে । দুরারোগ‍্য ক‍্যানসার ব‍্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৬ সালের ১৭ জানুয়ারি মারা যান বারবারা জর্ডান।

জাহ্নবী

প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সরকারি সহায়তা

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩০ এএম
প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সরকারি সহায়তা
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সরকারি সহায়তা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়। প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য প্রধান সরকারি সহায়তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সহায়তা হলো:

প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বাংলাদেশ সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করে থাকে। এটি মূলত অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী নারীদের মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য নির্ধারিত কিছু শর্ত থাকে, যেমন: বয়সসীমা, আর্থিক অবস্থার মানদণ্ড, প্রতিবন্ধীতার ধরন ইত্যাদি।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তা

বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী নারীদের শিক্ষা সুবিধা প্রদানে বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু করেছে। বিশেষ স্কুল, সহায়ক প্রযুক্তি, শিক্ষা উপকরণ প্রদান এবং বিশেষ শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী নারীদের শিক্ষা নিশ্চিত করা হয়।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি প্রদান করা হয়, যাতে তারা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।

কর্মসংস্থান সুযোগ

প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। যেমন:

প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণ

সরকার প্রতিবন্ধী নারীদের বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আত্মনির্ভরশীল করতে সহায়তা করছে।

প্রতিবন্ধী কর্মীদের জন্য কোটা

সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা সংরক্ষিত আছে, যাতে তারা সহজে সরকারি চাকরির সুযোগ পেতে পারে।

স্বাস্থ্যসেবা

প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হয়। এসব স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, থেরাপিস্ট, এবং অন্যান্য সহায়ক সেবা অন্তর্ভুক্ত।

আইনি সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা

সরকার প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করেছে, যাতে তারা তাদের অধিকার এবং সুরক্ষা পায়। বিশেষভাবে, প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য নারী ও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা আইন এবং প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন কার্যকর রয়েছে।

প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রকল্প

সরকার প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প চালু করেছে, যার মধ্যে খাদ্য সহায়তা, বাসস্থানের ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত।

বিশেষ সহায়ক প্রযুক্তি

সরকার প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি সরঞ্জাম প্রদান করে থাকে, যেমন ব্রেইল পুস্তক, হিয়ারিং এডস, হুইলচেয়ার ইত্যাদি, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজতর করে।

এনজিও এবং দাতা সংস্থার সহায়তা

সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও এবং দাতা সংস্থাও প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সহায়ক প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে, যা সরকারের সহযোগিতায় বা স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়।

এছাড়া, প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে, যাতে তাদের সামাজিক অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো সব মিলিয়ে প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য একটি নিরাপদ, উন্নত এবং আত্মনির্ভরশীল জীবন নিশ্চিত করতে সহায়ক।

জাহ্নবী

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });