বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সম্পর্কের সূচনা হয় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে। ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশ জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে ১০টির বেশি জাতিসংঘ সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার এবং জনগণের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পর জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি বরাবরই তাদের কাজ করে যাচ্ছে নিষ্ঠার সঙ্গে। এই দৌড়ে বাংলাদেশের একজন নারীও তার জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। বলছি, জাতিসংঘে বাংলাদেশি প্রথম নারী স্থায়ী প্রতিনিধি ইসমত জাহানের কথা।
ইসমত জাহানের জন্ম ১৯৬০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ফ্লেচার স্কুল, টাফ্টস ইউনিভার্সিটি থেকে আইন এবং কূটনৈতিক বিষয়ে এম এ করেছেন এবং ক্রস নিবন্ধিত কোর্স নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাড ইউনিভার্সিটিতে কাজ করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ফরেন সার্ভিসের ফেলোও ছিলেন। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি কূটনীতিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তার কূটনৈতিক কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটি, জেনেভা এবং নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের বিদেশে স্থায়ী মিশনসমূহে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। নেদারল্যান্ডসে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের পর ইসমত জাহান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রথম নারী স্থায়ী প্রতিনিধি। ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইসমত জাহান বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে মিশন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে তিনি নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-এর স্থায়ী পর্যবেক্ষক মিশনের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। ইসমত জাহান সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষপূর্ণ বক্তৃতাসহ মুসলিমবিরোধী এবং ইহুদিবিদ্বেষী বক্তৃতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখেন। ব্যক্তিগত জীবনেও ইসমত জাহান ভালোবাসার অনন্য এক নজির তৈরি করেছেন। ১৯৭৬ সালের একটি নিয়মের অধীনে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিদেশি নাগরিকদের বিয়ে করার অনুমতি ছিল না। কিন্তু ইসমত জাহান বিয়ে করেছেন এক বিদেশি নাগরিককেই আর এর জন্য তিনি রীতিমতো নিয়মই বদলে ফেলেছিলেন!
ইসমত জাহান বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি ক্যাথলিক ডি লুভাইনের আরবি ভাষা ও সাহিত্যের ডাচ অধ্যাপক জোহানেস ডেন হেইজারকে বিয়ে করেছেন। আর হেইজারকে বিয়ে করবেন বলে ১৯৭৬ সালের নিয়মের সংশোধনের জন্য ইসমত জাহান অনুরোধ করেন এবং পরে তার অনুরোধে ২০০৮ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়েছিল। ইসমত জাহানকে বাংলার নারীদের পায়ের শেকল ভাঙার হাতিয়ার বলা চলে। নিজ কর্মগুণে তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশি প্রথম নারী স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন, যা এগিয়ে যাওয়া সব নারীর জন্য অনুপ্রেরণার।
জাহ্নবী