চলতি বছরের ৫ জুলাই যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির নিরঙ্কুশ জয়ের পর দেশটির নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন র্যাচেল রিভস। এর মধ্য দিয়েই ইতিহাস গড়েছেন তিনি। ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম মহিলা অর্থমন্ত্রী হয়েছেন র্যাচেল রিভস। র্যাচেলের মতে, ‘নারীদের কর্মদক্ষতায় উচ্চাকাঙ্ক্ষার সীমা থাকা উচিত নয়। আর এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাই একজন নারীকে কর্মক্ষেত্রে স্বাধীন করবে’। র্যাচেল নারীদের স্বপ্নপূরণে সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চান, একই সঙ্গে নারী ও পুরুষের মধ্যকার বিদ্যমান বেতনবৈষম্য দূর করতেও তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে তিনি দেশটির কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান ১৪.৩ শতাংশ জেন্ডার পে গ্যাপের সমস্যাটি সমাধান করতে চান।
শিক্ষক গ্রাহাম এবং স্যালি রিভসের কন্যা, র্যাচেল রিভস ১৯৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি লুইশামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেকেনহামের ক্যাটর পার্ক স্কুল ফর গার্লস-এ একটি স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং স্কুলে থাকাকালীন তিনি ব্রিটিশ অনূর্ধ্ব-১৪ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। এ-লেভেলে বসার পর রাজনীতি, অর্থনীতি ও গণিতে দক্ষতা অর্জন করেন। তার পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি অধ্যয়ন করেন। তার পর তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর রিভসের প্রথম চাকরি ছিল ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে। তিনি ২০০৬ সালে কাজের প্রয়োজনে লিডসে চলে আসেন।
র্যাচেল রিভস কিন্তু ১৬ বছর বয়সেই লেবার পার্টিতে যোগ দেন এবং পরে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে কাজ করেন। হাউস অব কমন্সে নির্বাচিত হওয়ার জন্য দুটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর, ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে লিডস ওয়েস্টের আসনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ২০১০ সালের শ্রম নেতৃত্ব নির্বাচনে এড মিলিব্যান্ডকে সমর্থন করেছিলেন এবং অক্টোবর ২০১০-এ ছায়া পেনশন মন্ত্রী হিসেবে ফ্রন্টবেঞ্চে যোগদান করেছিলেন। তিনি ২০১১ সালে ট্রেজারির ছায়া মুখ্য সচিব হিসেবে ছায়া মন্ত্রিসভায় উন্নীত হন এবং পরে ২০১৩ সালে কর্ম ও পেনশনের জন্য ছায়া সেক্রেটারি অব স্টেট হন। ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি সংসদে পুনরায় নির্বাচিত হন এবং জেরেমি করবিনের নির্বাচনের পর একই বছর শ্রমিক নেত্রী ছায়া মন্ত্রিসভা ছেড়ে ব্যাকবেঞ্চে ফিরে আসেন। ব্যাকবেঞ্চে তিনি ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যবসা, শক্তি এবং শিল্পকৌশল কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০২০ সালে তিনি নতুন নেতা কেইর স্টারমারের অধীনে ডাচি অব ল্যাঙ্কাস্টারের ছায়া চ্যান্সেলর হিসেবে ছায়া মন্ত্রিসভায় ফিরে আসেন। মে ২০২১ সালে তাকে এক্সচেকারের শ্যাডো চ্যান্সেলর পদে উন্নীত করা হয়েছিল।
শ্যাডো চ্যান্সেলর হিসেবে রিভস একটি প্ল্যাটফর্মে প্রচারণা চালান, যেটি আধুনিক সরবরাহ-সদৃশ অর্থনীতির সমর্থন করে, একটি অর্থনৈতিক নীতি; যা বৈষম্য এবং পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার সঙ্গে সঙ্গে শ্রম সরবরাহ বৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উন্নতিতে ফোকাস করে। তিনি ব্যাংকারদের বোনাসের ওপর একটি ক্যাপ পুনঃপ্রবর্তন না করার এবং রেলওয়েকে জাতীয়করণের একটি পরিকল্পনার প্রস্তাব করেন। ছোটবেলার এই দাবা চ্যাম্পিয়ন রাজনীতির মাঠে একের পর এক চালের দক্ষতায় সর্বশেষ ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম মহিলা অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। ব্রিটেনে চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকারের পদটি গত ৮০০ বছর ধরে থাকলেও এতদিন সেখানে দেখা যায়নি কোনো নারীকে। দেশটির অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও যেন এমনটাই দেখা যায়। কেননা ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর কিংবা ট্রেজারি বিভাগের পারমানেন্ট সেক্রেটারির পদের দায়িত্বও এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে দেওয়া হয়নি। অথচ র্যাচেল রিভস এই ইতিহাসের পাতায় নতুন আরও একটি পাতা যুক্ত করে নিয়েছেন; অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে।
জাহ্নবী