ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে ধনী নারী ফ্রাঁসোয়াস বেতেনক্যুঁ মেয়ার। তৃতীয়বারের মতো তিনি এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। ফরাসি এই নারীর মোট অর্থের পরিমাণ ৮৫.৭ বিলিয়ন ডলার।
১৯৫৩ সালের ১০ জুলাই ফ্রান্সের নিউলি-সার-সেইনে জন্মগ্রহণ করেন মেয়ার। তিনি মানবসেবামূলক সংগঠন বেতেনক্যুঁ শ্যুলার ফাউন্ডেশনের সভাপতি। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, মানবিক সাহায্য এবং সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক ঐতিহ্য রক্ষার মতো নানা কাজের সঙ্গে জড়িত এ সংগঠন। এর বাইরে একাধিক বইও প্রকাশিত হয়েছে বেতেনক্যুঁ মেয়ারের।
৬৯ বছর বয়সী এই বিলিয়নিয়ারের বেশির ভাগ অর্থ আসে সৌন্দর্য-সংক্রান্ত পণ্য থেকে। তার কোম্পানির নাম ল’রিয়েল। ল’রিয়েল বিশ্বের বিখ্যাত মেকআপ, ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ১০০ বছর আগে বেতেনক্যুঁর নানা ইউজিন শুলার কোম্পানিটি চালু করেন। ১৯০৭ সালে চুল রং করার জন্য এক ধরনের সল্যুশন বানিয়ে ইউজিন সেটির নাম দিয়েছিলেন ‘ওরিয়াল’। প্যারিসের হেয়ারড্রেসারদের কাছে সেই পণ্য বিক্রি করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে নিজের একটি কোম্পানি হিসেবে রেজিস্টার করিয়ে নেন, যা কিছুদিন পর ‘ল’রিয়েল’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫৭ সালে শুলারের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন তার মেয়ে লিলিয়ান বেতেনক্যুঁ। তিনি ও তার স্বামী ফরাসি রাজনীতিক আঁদ্রে বেতনক্যুঁ মিলে একসঙ্গে কোম্পানির দায়িত্ব সামলাতে থাকেন। এখন পরিবারের সঙ্গে মিলে মেয়ার ল’রিয়েলের ৩৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। মোট ৮৫ হাজার কর্মী রয়েছে তার। তিনি ল’রিয়েলের বোর্ডে ১৯৯৭ সাল থেকে কর্মরত রয়েছেন। তার দুই সন্তান জ্য ভেক্টর ও নিকোলাসও এখন বোর্ডের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালের পর থেকে কোম্পানিটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি লাভ করে। লরিয়ালের ৩৩ শতাংশ মালিকানা পাওয়া সত্ত্বেও প্রসাধনী জগতের বাইরে বিভিন্ন কাজে সময় ব্যয় করেন মেয়ার। এর মধ্যে একটি হলো বই লেখা। গ্রিক মিথোলজি থেকে শুরু করে বাইবেলের বিভিন্ন ঘটনা নিয়েও লিখেছেন বিলিয়নিয়ার এই নারী।
১৯৮৭ সালের দিকে বিজ্ঞান ও শিল্পকলা নিয়ে গবেষণা ও মানবতাবাদী উদ্যোগ প্রচারের লক্ষ্যে ‘বেতনক্যুঁ শুলার ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। মা-বাবা দুজনকেই নিয়মিত জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে দেখলেও অল্প বয়স থেকেই মেয়ার ছিলেন এর বিপরীত। এমনকি কিশোরী বয়সেও তিনি পিয়ানো বাজানো কিংবা বই পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন বলে জানা যায়।
প্রথমে তিনি তার মায়ের কাছ থেকেই সবচেয়ে ধনী নারীর টাইটেলটি পেয়েছিলেন। তবে তাদের মা-মেয়ের সম্পর্কেও একসময় ফাটল ধরে। ২০০৭ সালে মায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সেলিব্রেটি আলোকচিত্রী ফ্রাঁসোয়া-মারি বেনিয়ারের নামে একটি মামলা করেছিলেন মেয়ার। তার অভিযোগ ছিল, মায়ের এই বন্ধু তাদের সম্পত্তির একাংশ দখলের চেষ্টা করছেন। এর পর থেকেই মায়ের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক তৈরি হয় তার।
পরবর্তী সময়ে সেই মামলা ‘বেতনক্যুঁ অ্যাফেয়ার’ নামে পরিচিতি পায়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলে মামলাটি। শেষ পর্যন্ত বেনিয়ারকে ওই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত জানান, তিনি লিলিয়ানের ডিমেনশিয়া রোগের সুযোগ নিয়ে তার পরিবারের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন।
২০০৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে তার মা বলেছিলেন, ‘মেয়ের সঙ্গে আমার আর দেখা হয় না। আমি চাইও না দেখা করতে। আমার মেয়ে এক ধরনের জড় পদার্থ হয়ে গেছে।’ ২০১৭ সালে তার মা লিলিয়ান বেতেনক্যুঁর মৃত্যু ঘটে।
জাহ্নবী