ফরিদপুরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের পাটপাশা গ্রামের দীর্ঘ ১৭ বছর মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে আপন ভাইদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন নেপাল চন্দ্র কাপাশিয়া (৪৬)।
প্রবাস জীবনে উপার্জন করা ৩৬ লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন দেশে তারই আপন বড় ভাই দুলাল কাপাশিয়ার কাছে। দেশে ফিরে টাকার হিসাব চাইলে উল্টো তাকে ও তার স্ত্রীকে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। থানায় মামলা করলেও প্রতিকার মিলছে না। একমাত্র শিশু সন্তানকে নিয়ে বিচারের আশায় তিনি এখন পথে পথে ঘুরছেন। ফিরতে পারছেন না বসতভিটায়।
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিচার দাবি করেন নেপাল।
শহরের মুজিব সড়কের পাশে স্থানীয় একটি সংবাদপত্র কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তার স্ত্রী ইতিলতা মন্ডল ও চার বছরের ছেলে চিত্র কাপাশিয়া উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে নেপাল বলেন, ‘বাবা মৃত পবন চন্দ্র কাপাশিয়া। চার ভাই আমরা। আমি ১৯৯৪ সালে মালয়েশিয়া গিয়ে টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ করি। তখন বিয়ে করিনি। বিদেশ থেকে উপার্জনের টাকা বড় ভাই দুলাল কাপাশিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতাম। ২০১৪ সালে বিয়ে করে মাঝখানে ছায় বছর দেশে থেকে আবার বিদেশে যাই। ২০১৭ সালে দেশে ফিরি। এরপর বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার হিসাব চাইলে শুরু হয় বিবাদ। এলাকার চেয়ারম্যান ও স্থানীয়রা এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ মিমাংসাও করে। সেখানে সর্বশেষ দুলালকে অনুরোধ জানানো হয় কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দিতে। তিন দিন পরে সেই টাকা দেওয়ার কথা হলেও কোনো টাকা দেননি। এরপর ওই টাকা চাইতে গেলে ভাই-ভাতিজারা মিলে দুই দফায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলা করে জখম করে। আমার স্ত্রীর ৭৫ হাজার টাকা দামের গহণা ছিনিয়ে নেয়। এ নিয়ে থানায় ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তিনটি মামলা করি। ওই মামলায় এ পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। প্রবাস জীবনের সব উপার্জন হারিয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বাড়িতে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
নেপালের স্ত্রী ইতি লতা মণ্ডল বলেন, বিয়ের পরেও দুই বছর বড় ভাইয়ের কাছে টাকা পাঠাতো তার স্বামী। এখন আমরা শিশু সন্তাকে নিয়ে যাযাবরের মতো দিন কাটাচ্ছি। আমার আর সংসার গোছানো হলো না। বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা দিয়ে দুলাল কিছু জমি কিনে। আমাদেরকে বাবার ভিটের একপাশে ঘর তুলে থাকতে বলেছিলো। এখন সেই ভিটাতেও যেতে দিচ্ছেনা। তিন ভাই একজোট হয়ে এখন আমার স্বামীকে বাড়ি যেতে দিচ্ছে না। টাকা আত্মসাৎ করে তারা জমিজমা কিনেছেন। বাজারে রড-সিমেন্ট ও শেয়ারের ব্যবসা করছেন।
এ ব্যাপারে জানতে দুলাল কাপাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে কথা হয় তার স্ত্রী পূর্ণিমা কাপাশিয়ার সঙ্গে। পূর্ণিমা বলেন, ‘নেপাল যে কয়বার বিদেশ গেছে আমার স্বামীও তাকে টাকা পয়সা দিয়েছিলো। উনি এখন হিসাব দিতে পারছেন না।’ হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘জমি মাপার সময় উল্টো নেপাল লোকজন নিয়ে হামলা করেন।’
এ বিষয়ে আলিয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘সালিশের মাধ্যমে নেপাল কাপাসিয়াকে পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল কিন্তু একান্নবর্তী পরিবার হওয়ায় তাদের মা টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি করেন। এজন্য ওই টাকা আর ফেরত পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে ওই পরিবার ভোগান্তিতে রয়েছে।’
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এসএম রিয়াদুজ্জামান বলেন, ভাইয়ে ভাইয়ে টাকা পয়সা ও জায়গা জমি নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে দুই পক্ষ থেকেই পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।
সঞ্জিব দাস/জোবাইদা/অমিয়/