![সীমান্ত দিয়ে মাদক আসছেই](uploads/2024/05/26/Mymensingh-1716693558.jpg)
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং নেত্রকোনার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। চোরাচালানের মাধ্যমে আনা এসব পণ্য ছড়িয়ে পড়ছে ময়মনসিংহ শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এসব পণ্যের সঙ্গে লুকিয়ে আবার মাদকও আনা হয়।
কখনো কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে শুধুই মাদক আনা হচ্ছে। শহর থেকে গ্রাম, সবখানে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, যা অভিভাবকদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চোরাচালান বন্ধ করতে সৈনিকরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তবে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে যেসব পণ্য দেশের সীমানায় ঢুকে পড়ছে, সেগুলো ধরা সম্ভব হয় না। পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। মাদক ও চোরাই পণ্যের বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিনি, মসলা, কাপড়, কম্বল, বিভিন্ন প্রসাধনীসহ মাদক অবৈধ পথে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই কাজে চক্রগুলো দুর্গাপুর-পূর্বধলা-ময়মনসিংহ ও কলমাকান্দা-নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ রুট ব্যবহার করছে। এ ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেও ময়মনসিংহে মাদকদ্রব্য নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়া শেরপুর সীমান্ত পথে আনা হয় হেরোইন।
ভারতীয় চিনিগুলো ময়মনসিংহের সীমান্ত দিয়ে বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেলে আনা হয়। সীমান্ত পার করার পর ভারতীয় বস্তা পরিবর্তন করে দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানির মোড়কের বস্তায় ভরা হয়। এরপর কয়েক হাত বদল হয়ে এসব চিনি চলে যায় জেলার বিভিন্ন বাজারে। বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে দাম কম থাকায় সুযোগ নিচ্ছে চোরাকারবারিরা। এক শ্রেণির পাইকারি ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় চোরাচালানের চিনি বিক্রিতে ঝুঁকছেন। ভারতীয় অন্য পণ্যগুলোও চলে আসছে একই কায়দায়। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারি চক্র। নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন পণ্য অবৈধভাবে নিয়ে আসা হচ্ছে।
সীমান্ত এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলছেন, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে চোরাকারবারিরা ভারতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ে আসছেন। এতে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা গেলে মাদকের বিস্তার রোধ করা যেত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহে আশঙ্কাজনকভাবে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। বিভাগীয় শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে নগরীর কিংবা জেলার প্রত্যন্ত গ্রামেও মাদকের কেনাবেচা হচ্ছে। হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যাওয়ায় মাদকসেবীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এতে যুবকবয়সী ছেলেদের অভিভাবকরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। এ ছাড়া চোরাইপথে ভারতীয় পণ্য চলে আসায় অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, ‘অধিক লাভের আশায় অনেক চোরাকারবারি ভারতীয় চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য ময়মনসিংহে নিয়ে আসেন। চোরাচালান বন্ধ না হওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সীমান্তে যারা দায়িত্বে থাকেন তাদের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের কার্যালয় সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ অঞ্চলের মাদকসেবীরা ইয়াবা, হেরোইন ও ইনজেকশন বেশি ব্যবহার করেন। অন্য মাদকের ব্যবহার এখানে কম।
র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ সদর দপ্তরের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘র্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মাদক উদ্ধারসহ কারবারিদের গ্রেপ্তার করছে। ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহন তল্লাশি করে ভারতীয় অনেক পণ্য জব্দ করা হচ্ছে। চোরাচালানিরা ঈদকে সামনে রেখে বেশি তৎপর হতে পারে। আমাদের সদস্যরা এসব বিষয়ে সতর্ক আছে।
জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই অভিযান চালিয়ে আইস, ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, নেশাজাতীয় ট্যাবলেট ও ইনজেকশন, দেশি-বিদেশি মদ উদ্ধার করছে থানাসহ গোয়েন্দা পুলিশ। নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে অনেককে আটকের পর মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। তবু অনেক সময় মাদককারবারি চক্র নানা কায়দায় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে।’
এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ময়মনসিংহের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ইসমাইল হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের চোখের আড়াল দিয়ে যদি কিছু (পণ্য, মাদক) চলে আসে তবে তা ধরা অসম্ভব। তবে সীমান্তে টহলের কোনো ঘাটতি নেই। চোরাচালান বন্ধ করতে সৈনিকরা দিনরাত পরিশ্রম করছে।’