গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সিলনা বাজারসংলগ্ন শির খালের ওপর নির্মিত সেতুটি ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ভেঙে গেছে। এতে ওই সড়ক দিয়ে পাঁচদিন ধরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। ফলে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে তাদের সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে। এই পথে যাতায়াতকারীরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি পাঁচদিন ধরে এভাবেই পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও করা হয়নি। তবে এলজিইডি বলছে, হালকা যান চলাচলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বেইলি ব্রিজ বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বরাদ্দ পেলে নতুন ব্রিজ বানানো হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সেতুটি সদর উপজেলার একাংশকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ১৯৯৪ সালে ২৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের এ সেতু নির্মাণ করা হয়। পরে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ১২ লাখ ৯৮ হাজার ব্যয়ে তা মেরামত করা হয়। কিন্তু গত সোমবার সকালে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সেতুর পাশের একটি গাছ উপড়ে মাটি সরে গেলে পানির তীব্র স্রোতে সেতুটি ভেঙে পড়ে। এরপর থেকে বেদ্রগ্রাম-বর্ণি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্ভোগে পড়েছে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
সড়কটি দিয়ে টুঙ্গিপাড়ার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জেলা শহরে, কোটালীপাড়া উপজেলা এবং সদর উপজেলার অর্ধলাখ মানুষ টুঙ্গিপাড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে থাকেন। সেতুটি ভেঙে পড়ার পর এই সড়কে যাতায়াত করা যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ফলে সদর ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় মালামাল আনা-নেওয়ায় অন্তত ১০ কিলোমিটর পথ বেশি ঘুরতে হচ্ছে। এতে তাদের সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে।
এ পথে চলাচলকারী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামের আকবর শেখ বলেন, ‘প্রতিদিন আমি এই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করি। কিন্তু গত সোমবার ঘূর্ণিঝড়ে সেতুটি ভেঙে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে আর চলাচল করা যাচ্ছে না। অতি প্রয়োজনে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এ ভাঙা সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করছেন। সেতুটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখানে একটি সেতু বানানোর দাবি রইল।’
স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ বালা বলেন, ‘সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় আমার এলাকার কয়েক গ্রামের মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। এখান দিয়ে গাড়ি চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হাটবাজারে যাওয়াসহ সব কিছুতেই স্থবিরতা নেমে এসেছে।’
শ্যামল কান্তি বিশ্বাস নামে এক পথচারী বলেন, ‘গোপালগঞ্জ সদর ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাসিন্দারা এ সেতুটি ব্যবহার করে থাকেন। প্রতিদিন অর্ধলাখের বেশি মানুষ এ সেতুটি ব্যবহার করেন। কিন্তু এত বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য গত পাঁচ দিনেও কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি জনসাধারণ এখন ক্ষুব্ধ।’
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন উদ্দীন বলেন, ‘প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সারা দেশের মতো গোপালগঞ্জেও কিছু ক্ষতি হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদরের বেদগ্রাম থেকে টুঙ্গিপাড়ার বর্ণি ইউনিয়নের সংযোগ রাস্তায় এলজিইডি নির্মিত একটি সেতু ভেঙে পড়েছে। এ কারণে গোপালগঞ্জ এবং টুঙ্গিপাড়ার একাংশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ওই স্থানে সেতু পুনর্নির্মাণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানা হয়েছে।’
গোপালগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মাহামুদ হাসান বলেন, সেতুটি ভেঙে যাওয়ার কারণে এলাকাবাসীসহ এই পথে যাতায়াতকারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আপাতত দুর্ভোগ কমানোর জন্য এলজিইডি থেকে একটি বেইলি ব্রিজ বা অস্থায়ী বাঁশের ব্রিজ বানিয়ে দেওয়া হবে। এতে মানুষ হাঁটা-চলা করার পাশাপাশি হালকা যানবাহনগুলো চলাচল করতে পারবে।
ব্রিজ ভাঙার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে এলজিইডির এই কর্মকর্তা বলেন, বরাদ্দ পেলে দ্রুত সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।