কুমিল্লার চান্দিনায় যুবলীগ নেতা তানভীর আহমেদ ভূঁইয়াকে (৩২) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার (৪ জুন) দিবাগত রাতে উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের গড়ামারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বুধবার (৫ জুন) সকালে গড়ামারা গ্রামের একটি বাড়ি থেকে তানভীরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় লাশ পাওয়া গেছে যার বাড়িতে, সেই সেলিম মিয়াকে (৩৫) আটক করেছে পুলিশ।
তবে আটক সেলিম মিয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রাবেয়ার দাবি, মঙ্গলবার রাত ২টায় তানভীর তার ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় তার স্বামীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও মারধরের ঘটনা ঘটে। আর স্বামী তানভীরকে মারধর করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তার মৃত্যু ঘটে।
তবে ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এলাকায় ধূম্রজাল বিরাজ করছে। নিহত তানভীরের লাশ যে জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই স্থানটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। এমন স্থান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় নিহত তানভীরের লাশ উদ্ধার বা সেলিমের ঘরে তার স্ত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার বিষয়ে এলাকাবাসী কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। যার ফলে এই অপমৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এ বাড়িতে প্রায় সবারই টিনের ঘর। একটি ঘর থেকে অপর একটি ঘরের দূরত্ব ৪-৫ ফুটের বেশি নয়। রাতে যদি এমন ধর্ষণের ঘটনা বা মারামারি হতো তাহলে আশপাশের মানুষ নিশ্চিয়ই টের পেত। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে সবার মাঝে কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
নিহত তানভীর আহমেদ ভূঁইয়া একই ইউনিয়নের গনিপুর গ্রামের বাবুল ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি বাড়েরা ইউনিয়ন যুবলীগ কমিটির সহসভাপতি। এলাকায় নানা কর্মকাণ্ডের কারণে বেশ সমালোচিত তানভীর। তার বিরুদ্ধে চান্দিনা ও তিতাস থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত তানভীরের মা নিলুফা বেগম বলেন, “আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতের খাবার খেয়ে আমার ছেলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। রাত ১২টায় তার মোবাইলে ফোন করলে তানভীর আমাদের ‘আসতেছি’ বলে জানায়। তারপর থেকে আর ফোন রিসিভ করেনি। ওই মহিলা যা বলছেন তা মোটেও সত্য নয়। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”
বাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব ভূঁইয়া বলেন, ‘আমিও ঘটনাস্থলে গিয়েছি, হত্যাকাণ্ডটি সন্দেহজনক। ঘটনাস্থলটি এতই ঘনবসতিপূর্ণ যে ওই বাড়িতে কোনো উঠানও নেই। বাড়ির বা পাশাপাশি মানুষ ঘটনাটি জানবে না, সেটা হতে পারে না। স্থানীয় কোনো মানুষ মুখ খুলছে না।’
চান্দিনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন দত্ত জানান, নিহত তানভীরের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও পায়ে কাটা চিহ্ন আছে। তবে কী কারণে হত্যা করা করেছে, এ বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো উদঘাটন হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেলিম মিয়াকে থানায় আনা হয়েছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো যাবে।
চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাম্মদ সঞ্জুর মোরশেদ জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পূর্বশত্রুতার জের ধরে এমনটা হতে পারে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মা বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ছাড়া নিহতের বিরুদ্ধে চান্দিনা ও তিতাস থানায় অস্ত্র ও ধর্ষণসহ একাধিক মামলা রয়েছে।