ফরিদপুরের পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে একের পর এক সাপ মারার ঘটনা ঘটেছে। আবার অনেকে জ্যান্ত সাপ ধরে নিয়ে আসছেন শহরের দিকে। তাদের গন্তব্য জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের পুরস্কার ঘোষণা করা টাকা নেওয়া। প্রথমদিকে মৃত সাপপ্রতি ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হলেও একদিন পরেই সেই কথা ঘুরিয়ে জ্যান্ত সাপ ধরে আনলে পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এরপর যে যার মতো জ্যান্ত সাপ নিয়ে শহরে ঢুকে পড়েন পুরস্কারের টাকা নিতে। তবে এ ক্ষেত্রে অনেকটা নিরাশ হয়েই তাদের ফিরে যেতে হয় নিজ নিজ এলাকায়।
গত কয়েকদিন এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও মৃত কিংবা জ্যান্ত সাপ নিয়ে আসা কোনো ব্যক্তিই এখন পর্যন্ত কোনো টাকা পাননি। গত শনিবার সন্ধ্যায় জ্যান্ত রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে আসেন কৃষক রেজাউল খান (৩২)। এ সময় সাংবাদিকদের সামনে জ্যান্ত রাসেলস ভাইপার সাপটি দেখান তিনি। রেজাউল সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকার মনোরুদ্দিন খানের ছেলে।
রেজাউল জানান, শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকার ফসলি জমিতে চাষ করার সময় রাসেলস ভাইপার সাপটি দেখতে পান তিনি। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সাপটিকে একটি অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলে ভরে শহরে নিয়ে আসেন পুরস্কারের টাকা নেওয়ার জন্য। দুই দিন আগেও তিনি একটি রাসেলস ভাইপার সাপ মেরেছেন। জ্যান্ত রাসেলস ভাইপার সাপ ধরতে পারলে ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের নেতারা পুরস্কার দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সেজন্যই জ্যান্ত রাসেলস ভাইপার ধরে নিয়ে আসেন তিনি। তবে গতকাল রবিবার পর্যন্ত তিনি কোনো পুরস্কারের টাকা পাননি।
অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সভায় আওয়ামী লীগ নেতারা ঘোষণা দেন, সাপ মেরে নিয়ে এলে তাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। সেই কথা মতো ঘোষণার পরের দিন শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের আইজউদ্দীন মাতুব্বরের ডাঙ্গি গ্রামে খেতে কাজ করার সময় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মারেন ওই গ্রামের তোতা মোল্লার ছেলে মুরাদ মোল্লা (৪৫)। তবে তিনিও গত রবিবার পর্যন্ত কোনো পুরস্কারের টাকা পাননি।
এ বিষয়ে পুরস্কার ঘোষণাকারী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ বলেন, ‘বিষয়টি হয়তো বলার ভুল কিংবা বোঝার ভুল হতে পারে। বিষধর হলেও এসব সাপ পরিবেশের বাস্তুসংস্থানের একটি অংশ। কিন্তু বর্তমানে ফরিদপুরের চরের মানুষরা এ নিয়ে ভীষণ আতঙ্কগ্রস্ত। এজন্যই আমরা সবাইকে সতর্ক হতে এ ঘোষণা দিয়েছি। তবে সাপ মারা যাবে না, জ্যান্ত অবস্থায় ধরতে পারলে তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ধরনের পুরস্কার ঘোষণা করা বেআইনি। অন্যদিকে মানুষকে ঝুঁকির মধ্যেও ফেলা হচ্ছে। ওই কৃষকদের উচিত হবে, যেখান থেকে সাপটি ধরেছেন ওই স্থানে ছেড়ে দেওয়া।’