ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৪ দিনের মধ্যে তিনবার অগ্নিকাণ্ড হয়। আর এসব অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে ভয়ানক তথ্য। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসব অগ্নিকাণ্ড মানবসৃষ্ট। তার মানে হাসপাতালের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নস্যাৎ করার পরিকল্পনা থেকেই এই অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। যদিও মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে এসব কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গত ২৩ মার্চ হাসপাতালটির মর্গে প্রথম আগুন লাগে। এরপর ৩১ মার্চ দুপুরে হাসপাতাল ভবনের ষষ্ঠতলায় আবার আগুন লাগে। সর্বশেষ গত ১৬ মে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হাসপাতালের ৯ তলাবিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় তলার স্টোররুমে আবারও আগুন লাগে। ওই স্টোররুমে হাসপাতালের ওষুধপত্র, যন্ত্রপাতি, ফ্রিজসহ নানা সরঞ্জাম ছিল। এ সময় পুড়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ নথিসহ বিভিন্ন জিনিস।
অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্কে মুমূর্ষু রোগীসহ হুড়োহুড়ি করে নিচে নামেন তাদের স্বজনেরা। খবর পেয়ে ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের চারটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে আলোচিত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পর্দা কেলেঙ্কারির পর থেকে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। যদিও এসব কাণ্ড এখনো রয়ে সয়ে চলছে মেডিকেলের ভেতরে। কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও থেমে নেই দুর্নীতির এসব কর্মকাণ্ড। হাসপাতালে কেনা বেশির ভাগ মেশিনই এখন নষ্ট। কোনো কোনো মেশিন এক দিনও ব্যবহার হয়নি, আবার কিছু মেশিন ব্যবহারের পর পরই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন রুমে। এতে রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে ব্যাপকভাবে।
আর এসব কারণে সব সময়ই ভয়ে থাকেন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কোনো বিষয় নিয়ে হাসপাতালে সাংবাদিকরা ঢুকলেই তাদের মাথায় বাজ পড়ে। এমনকি সাধারণ দুর্ঘটনা কিংবা সাপে কাটা রোগীর ভিডিও ধারণ করতে গেলেও বিপত্তি বাঁধে। বেশির ভাগ সময়ই চিকিৎসার জন্য কাজে লাগানো হয় ইন্টার্নি ডাক্তার।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘এ বছর ৫৪ দিনের মধ্যে হাসপাতালে তিনবার আগুন লেগেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই আতঙ্কিত ও শঙ্কিত। এটি ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল। এসব জায়গায় আগুন লাগলে অনেক প্রাণহানির শঙ্কা থাকে। কেন বারবার আগুন লাগছে, এর কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এসব আগুন মানবসৃষ্ট। বিদ্যুৎ বা অন্যভাবে আগুন লাগেনি। আমরা এই তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করি, বিষয়গুলো নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সঠিক ব্যবস্থা নেবে।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘ওই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কেবিনেটে পাঠানো হয়েছে। কেবিনেট বা মন্ত্রণালয় এগুলো যাচাই-বাছাই করে আরও বিশদ তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে টিম আসবে বলে আশা করছি।’ হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি, বিশেষ করে ইন্টার্নি চিকিৎসকদের ব্যবহার আরও ভালো হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা সুভাষ বাড়ৈ বলেন, ‘ফরিদপুর মেডিকেলের আগুন লাগার কোনো কারণ আমরা ওই সময় খুঁজে পাইনি। পরবর্তী সময়ে এই আগুন লাগার কারণ গঠিত তদন্ত কমিটির উপর আমরা ছেড়ে দিই। তদন্ত কমিটির যে রিপোর্ট দিয়েছে, তার সঙ্গে আমরাও একমত।’
অগ্নিকাণ্ডের পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের প্রতিনিধি, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও ফরিদপুর দমকল বাহিনীর সহকারী পরিচালক।