বান্দরবানের গোদারপাড় এলাকার আর্যগুহা ধুতাঙ্গ বিমুক্তি বৌদ্ধ বিহারের ধর্মগুরু অধ্যক্ষ ড. এফ দীপঙ্কর মহাথেরো আত্মহত্যা করেছেন নাকি হত্যা করা হয়েছে সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে। ঘটনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন পরিদর্শন করেছেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেটি তদন্তের শেষে বলা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বান্দরবান পুলিশ সুপার।
রবিবার (১৪ জুলাই) বিকাল ৫টায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন।
সংবাদ সম্মেলনে সৈকত শাহীন বলেন, ‘ভান্তের আত্মহত্যাকে একটি বিশেষ মহল পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড বলে প্রচার চালাচ্ছে। তবে প্রাথমিক ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও ছায়া তদন্তে আত্মহত্যার আলামত পাওয়া গেছে। কিন্তু এখনো হত্যা বা আত্মহত্যা, কোনোটাই বলা যাচ্ছে না। কেননা ময়নাতদন্তের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা চিরকুটে লেখা ও আগের লেখাগুলো সঙ্গে মিল আছে কিনা, সেটি সিআইডির কাছে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘লোকমুখে শুনেছি ভান্তে সৎ ও অসম্প্রদায়িক মানবিক লোক ছিলেন। তার এমন মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। প্রাথমিক তদন্তের শেষে তার গ্রামে বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে পাঠানো হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মো. রায়হান কাজেমীসহ বান্দরবানে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে আর্যগুহা ধুতাঙ্গ বিমুক্তি বৌদ্ধ বিহার থেকে ধর্মগুরু ড. এফ দীপঙ্কর মহাথেরোর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মতো রাতে ধ্যান সাধনা শেষে ঘুমাতে যান বৌদ্ধ ভিক্ষু। সকাল থেকে দুপুরে গড়িয়ে এলে বিহারটি বন্ধ দেখতে পেয়ে অন্য ভিক্ষুরা ছুটে গেলে বিহারের ভেতর ঝুলন্ত অবস্থায় বৌদ্ধ ভিক্ষুর লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে এসে বৌদ্ধ ভিক্ষুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে বৌদ্ধ ভিক্ষুর এই মৃত্যুর বিষয়টি রহস্যজনক বলে ধারণা করছেন ভিক্ষুর অনুসারীরা।
বৌদ্ধ বিহারে ভিক্ষুর শিষ্য ভুটান বড়ুয়া বলেন, ‘বৌদ্ধ ভিক্ষু ওই বিহারে একটি গুহার মধ্যে একাই থাকতেন। কিন্তু গেল বেশ কয়েক দিন ধরে আর্যগুহা ধুতাঙ্গ বৌদ্ধ বিহারের বৌদ্ধ ভিক্ষু ড. এফ দীপঙ্কর (৫৩) মহাথেরোকে একটি মহল নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। তবে কে বা কারা এই হুমকি দিয়েছে সেটি জানেন না অন্য ভিক্ষুরা। তবে গলায় দড়ি দেওয়া থাকলেও পা মাটিতে লাগানো অবস্থায় থাকায় তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।’
এদিকে বৌদ্ধ ভিক্ষুর লাশ উদ্ধারের পর টেবিলে ওপর একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমার অনেক ইচ্ছা ছিল বুদ্ধের সদ্ধর্ম প্রচার-প্রসার করার এবং ট্রেনিং দিয়ে আপনাদের দক্ষ করে তুলব। আমি বহুজনের সুখের কারণ হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারলাম না। আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমার কী কী স্বপ্ন ছিল, তা আপনারা সবাই জানেন। আমার এই স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্য নিম্ন লিখিত ভিক্ষুদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে গেলাম। আপনারা একতাবদ্ধ হয়ে থাকবেন অপ্রমত্ত হয়ে মেয়েদের কাছ থেকে দূরে অবস্থান করে প্রব্রজ্যা জীবনকে সুরক্ষা করবেন এবং বহুজনের হিত সাধন করবেন। এটাই আপনাদের উদ্দেশে আমার শেষ উপদেশ।’
এ ব্যাপারে রোয়াংছড়ি থানার ওসি পারভেজ আলী জানান, বৌদ্ধ বিহার থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় বৌদ্ধ ভিক্ষুর লাশ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।