সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যার ১৪ দিন পর সুরমা নদী পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। সোমবার (১৫ জুলাই) সকাল ৬টার পর থেকে সিলেটের সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে গত ৫ জুলাই বিকাল ৬টায় সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার নিচে নামে। সোমবার সারাদিনই সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি প্রতিদিন ঘন্টায় ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত নামে। বর্তমানে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্ট ছাড়া সিলেটের সব নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচে আছে।
সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। সিলেটে ও ভারতে চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় গত তিন চারদিন থেকে সিলেটে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। সোমবার (১৫ জুলাই) কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্ট বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সিলেটের সব নদনদীর পানি কমছে।
জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখনও সিলেটের ৮৮টি পৌরসভা ও ইউনিয়নের ৯৯৪ গ্রামের ৫ লাখ ২১ হাজার ৯৭ জন এই বন্যায় আক্রান্ত রয়েছেন। ৬৫১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত থাকলেও ২০৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ৮ হাজার ৯৬৫ জন মানুষ আছেন।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৩ মিলিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের সোমবার দুপুরের তথ্য মতে, সিলেটের সারি নদী, সারিগোয়াইন, পিয়াইন (ডাউকি) নদী, ধলাইসহ সব নদনদীর পানিই কমছে। তবে এখনো কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবারের তথ্যমতে, দুপুর ৩টায় কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস খবরের কাগজকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে সামান্য পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলেও রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া। পাশাপাশি ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে সিলেটের সবকটি নদ নদীর পানি কমছে। তবে যেহেতু বর্ষাকাল তাই বৃষ্টিপাত বেড়ে ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে যেকোনো সময় নদনদীর পানি বাড়তে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ বন্যা আক্রান্ত হন। এরপর গত ১৭ জুন ঈদুল আজহার দিন থেকে আবারও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন সিলেটর ১৩টি উপজেলার ১০ লাখের উপরে মানুষ বন্যা আক্রান্ত হন। এই রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১ জুলাই থেকে আবারও সিলেট ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে চলমান বৃষ্টিপাতের কারণে সব নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ১ জুলাই রাতে সিলেট নগরী ও জেলার প্রায় ৬টি উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। অতি বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢল বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজন ওইদিন বিকাল থেকেই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেন।
শাকিলা ববি/এমএ/