সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হচ্ছে। প্রতিদিনই নদনদীর পানি কমা পাশাপাশি মানুষের বাসা- বাড়ি থেকেও পানি নামছে। তবে এখনো সিলেটের ৯টি উপজেলার ৮৭৫ গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্ট ছাড়া সিলেটের সব নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। প্রতিদিনই কিছুটা বৃষ্টিপাত হলেও রোদ্রউজ্জ্বল আবহাওয়ার কারণে মানুষের বন্যা আতঙ্ক অনেকটাই কমেছে।
জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সিলেট সিটি করপোরেশন ও সিলেটর ১৩টি উপজেলার মধ্যে বর্তমানে ৯টি উপজেলার মানুষজন বন্যা আক্রান্ত রয়েছেন। এখনও সিলেটের ৬৩টি পৌরসভা ও ইউনিয়নের ৮৭৫ গ্রামের ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬৭ জন এই বন্যায় আক্রান্ত রয়েছেন। ৯টি উপজেলার মধ্যে বিশ্বনাথে ৪ হাজার ৮৬৭ জন, ওসমানীনগরে ১ লাখ ৮২ হাজার জন, ফেঞ্চুগঞ্জে ৭ হাজার ২৬৫ জন, দক্ষিণ সুরমায় ২০ জাজার ৫ জন, বালাগঞ্জে ৩৩ হাজার ৪৫৬ জন, কানাইঘাটে ৪ হাজার ৫০ জন, জকিগঞ্জে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৪ জন, বিয়ানীবাজারে ৪৫ হাজার ৯০০ জন, গোলাপগঞ্জে ৩৭ হাজার ৭৩০ জন বন্যা আক্রান্ত।
১৩টি উপজেলার মধ্যে ৬৫১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। এরমধ্যে ১৮৪টি আশ্রয়কেন্দ্র এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ৮ হাজার ৫৮৫ জন মানুষ আছেন। এছাড়াও সিলেটের ১৩টি উপজেলায় ১১৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
এদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩২.৭ মিলিমিটার। সিলেটে আজকে সব্বোর্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের মঙ্গলবার বিকালের তথ্য মতে, সিলেটের সারি নদী, সারিগোয়াইন, পিয়াইন (ডাউকি) নদী, ধলাইসহ সব নদনদীর পানিই কমছে। তবে এখনো কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. ওমর সানী আকন জানান, সিলেট জেলার অভ্যান্তরীণ নদনদীরগুলোর মধ্যে একটি পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে আছে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম ও অন্যান্য তৎপরতা অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ বন্যা আক্রান্ত হন। এরপর গত ১৭ জুন ঈদুল আজহার দিন থেকে আবারও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন সিলেটর ১৩টি উপজেলার ১০ লাখের উপরে মানুষ বন্যা আক্রান্ত হন। এই রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১ জুলাই থেকে আবারও সিলেট ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে চলমান বৃষ্টিপাতের কারণে সব নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ১ জুলাই রাতে সিলেট নগরী ও জেলার প্রায় ৬টি উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। অতি বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢল বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজন ওইদিন বিকাল থেকেই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেন।
শাকিলা ববি/এমএ/