ঢাকা ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

মুন্সীগঞ্জে গায়েবানা জানাজা থেকে ঈমাম ও বিএনপি নেতা আটক

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪, ০১:০৪ পিএম
আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪, ০১:১২ পিএম
মুন্সীগঞ্জে গায়েবানা জানাজা থেকে ঈমাম ও বিএনপি নেতা আটক
ঈমাম ও বিএনপি নেতাকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ। ছবি: খবরের কাগজ

মুন্সীগঞ্জে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের গায়েবানা জানাজার সময় ঈমাম ও বিএনপি নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার (১৭ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে শহরের থানারপুল এলাকার জেলা বিএনপির কার্যালয়ের নিচে দলটি গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে। 

এ সময় দলটির নেতাকর্মীরা জানাজায় দাঁড়ান। জানাজা শেষ না হতেই পুলিশ ঈমাম আব্দুর রহমান হিরন ও শহর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাহবুব-উল-আলম স্বপনকে ধরে নিয়ে যায়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সড়ক বন্ধ করে জানাজায় দাঁড়িয়েছিলেন তারা। এতে অরাজকতার সৃষ্টি হচ্ছিল। তাই দুইজনকে আটক ও অন্য নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘পুলিশ আমাদের নামাজ পর্যন্ত পড়তে দেয়নি। উল্টো আমাদের দুই নেতাকে ধরে নিয়ে গেছে। আটকদের মুক্তি দাবি করছি।’

মঈনউদ্দিন/ইসরাত চৈতী/অমিয়/

চলতি অর্থবছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেমিট্যান্স এল ৭৮ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৬ এএম
রেমিট্যান্স এল ৭৮ হাজার কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো এক প্রকার বন্ধ রেখেছিলেন প্রবাসীরা। এতে হঠাৎ কমে যায় রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ। আগস্টের ৫ তারিখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর পর থেকে বৈধ পথে তথা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়ে যায়। 

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৭৮ হাজার ২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাইয়ে প্রবাসী আয়ে বড় ধাক্কা লাগে, এ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। পরে আগস্ট থেকে রেমিট্যান্সে সুবাতাস বইতে শুরু করে, এ মাসে এসেছে ২৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা ও সেপ্টেম্বরে ২৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। তার মানে প্রতিদিন ৯৬১ কোটি টাকার প্রবাসী আয় এসেছে সেপ্টেম্বরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত তিন মাসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুলাই মাসে ১৯০ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। এর আগের মাস জুনে এসেছিল ২৫৪১ মিলিয়ন বা ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমেছে ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ৭ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা।

আগস্ট মাসের পুরো সময়ে দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি (২ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলার, যা তার আগের বছরের (আগস্ট-২০২৩) একই সময়ের চেয়ে ৬২ কোটি ডলার বেশি। গত বছরের আগস্ট মাসে এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।

প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে আগস্টের ধারাবাহিকতা রয়েছে সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসেও। সেপ্টেম্বরের পুরো সময়ে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার (২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন) পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) ২৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, রেমিট্যান্স পাঠানোয় প্রধান দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসী আয় আসে ১০৩ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার ডলারের। এর মধ্যে জুলাই মাসে এসেছিল ৩৩ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। পরের মাস আগস্টে আসে ৩৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আসে ৩৬ কোটি ১৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়।

রেমিট্যান্সের দ্বিতীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসী আয় এসেছে ৯২ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার ডলারে। এর মধ্যে জুলাই মাসে আসে ২৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। পরের মাস আগস্টে আসে ২৯ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজারের ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আসে ৩৮ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

একইভাবে সরকারের পতনের পর রেমিট্যান্স বেড়ে যায় সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া থেকে। সৌদি আরব থেকে জুলাই মাসে ২৪ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসে। আগস্ট মাসে আসে ২৬ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারের প্রবাসী আয়। পরের মাসে সেপ্টেম্বরে আরও বেড়ে আসে ৩৪ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স।

অন্যদিকে মালয়েশিয়া থেকে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৩ কোটি ৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। পরের মাস আগস্টে এসেছিল ২৫ কোটি ১৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসেছ। সেপ্টেম্বর মাসে আসে ২৩ কোটি ৭২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়।

এ ছাড়া চলতি মাস অক্টোবরেও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের গতি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। অক্টোবরের প্রথম ৫ দিনে ৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ কোটি ডলার বেশি। গত বছরের অক্টোবরের প্রথম ৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি মাস অক্টোবরের শুরুতেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এভাবে রেমিট্যান্স আসার ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে আড়াই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে প্রবাসী আয়।

সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসের পুরো সময়ে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার (২.৪০ বিলিয়ন) পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) ২৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার বেশি।

দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। বছরওয়ারি হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে মোটি রেমিট্যান্স আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এ ছাড়া জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। তার আগে মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এ ছাড়া এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার পাঠান প্রবাসীরা।

কটিয়াদীতে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৩ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫০ এএম
কটিয়াদীতে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পৌর সদরে পুরোনো বাজারে বসছে ঐতিহাসিক ঢাকের হাট। ছবি : খবরের কাগজ

প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে বসছে ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক ঢাকের হাট। দিনভর এই হাটে ঢাকিরা বাদ্যযন্ত্র বাজান। বিভিন্ন জেলা থেকে পূজারিরা ছুটে আসেন এখান থেকে ঢাকিদের বায়না করতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৩০০ ঢাকি হাটে এসেছেন। তাদের থাকার জন্য বাজারে একটি বিশ্রামাগার তৈরি করা হয়েছে। তবে শৌচাগারের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বাজার শুরুর পর থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে টহল দিচ্ছে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা। 

জনশ্রুতি রয়েছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় রাজা নবরঙ্গ রায় তার প্রসাদে সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। কটিয়াদী উপজেলার চারিপাড়া গ্রামে ছিল তার অট্টলিকা। 

প্রাসাদে আয়োজিত দুর্গাপূজার জন্য দেশসেরা ঢাকিদের সন্ধান করতে বিভিন্ন জায়গায় তিনি ডাকযোগে চিঠিপত্র পাঠিয়ে আমন্ত্রণ জানাতেন। রাজার আমন্ত্রণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঢাকিরা জড়ো হতেন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে। রাজা সশরীরে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের থেকে বাছাই করে ঢাকিদের নিয়ে যেতেন প্রাসাদে এবং উপযুক্ত সম্মানী দিতেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাটটি স্থানান্তরিত হয়ে বর্তমানে সেটি কটিয়াদী পৌর সদরের পুরাতন বাজারে বসছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাড়াও অন্য ধর্মের মানুষের কাছেও এই হাটটি ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দূর-দূরান্ত থেকে বাদকদের বাজনা শুনতে উন্মুখ হয়ে থাকেন স্থানীয়রা।

হাটে আসা ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার চুড়াইন গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল মনি দাস বলেন, ‘ঠাকুরদা গোরা চাঁদমনি দাসের আমল থেকে ঢাকঢোল বাজিয়ে আসছি। সঙ্গে আমার ছেলেরাও হাটে এসেছে। ভালো বায়না পেলে কারো বাড়িতে যাব।’

মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার বলমন্তচরের বাসিন্দা সুশীল মনি দাস বলেন, ‘আমি টানা ১২ বছর ধরে এই হাটে ঢাকঢোল নিয়ে আসি। ৬০ বছর বয়স হয়েছে, তবুও ঢাক না বাজালে ভালো লাগে না।’ 

পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জনি কুমার সাহা বলেন, ‘কটিয়াদীতে প্রতিবছর পূজার তিন দিন আগে এখানে ঢাকঢোলের হাট বসে। হাটটি ইতিহাসের দিক থেকে অনেক পুরোনো। আমরা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঢাকিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিই।’ কটিয়াদী পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবুজিৎ সাহা বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পূজারিরা এসে ঢাকিদের বায়না করে নিয়ে যান।’

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ধ্রুবরঞ্জন দাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘হাটটিতে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শৌচাগারের প্রয়োজন। একটি বিশ্রামাগার তাদের জন্য তৈরি করা হলেও সেটির কাজ অসমাপ্ত থেকে গেছে। আমরা এলাকাবাসী হিসেবে চাই, এখানে আগত ঢাকিদের জন্য প্রশাসন থেকে সার্বিক সুবিধা দেওয়া হোক।’ 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘হাটে যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেজন্য ঢাক বাজার কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখা হচ্ছে। আশা করছি, প্রতিবারের মতো এবারও সুশৃঙ্খলভাবে হাটের সব কার্যক্রম শেষ হবে।’

ঢাক বাজার সমিতির সভাপতি শীতল সাহা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা এখানে পূজারিদের ঠিকানা ও ঢাকিদের ঠিকানা লিখে রাখি। কোনো পক্ষের সঙ্গে কোনো সমস্যা বা ঝামেলার সৃষ্টি হলে সেই বিষয়গুলো আমরা দেখি। মূলত একেকটি দল ৫০ হাজার থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকায় বায়না হয়। প্রতিটি দলে ১০ থেকে ১২ জন অথবা ১৫ জন থাকে।’

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতি অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ
ছবি : খবরের কাগজ

গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলার বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে। তারা শহরের ডিবি রোড গানাসাস মার্কেটের সামনে সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আমিনুল ইসলাম গোলাপের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতা মনজুর আলম মিঠু, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি প্রণব চৌধুরী খোকন, বাসদ জেলা আহ্বায়ক গোলাম রাব্বানী, সিপিবির জেলা সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের জেলা সভাপতি মোস্তফা মনিরুজ্জামান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের জেলা সম্পাদক রেবতী বর্মণ, সাম্যবাদী আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক নওশাদুজ্জামান নওশাদ, জাতীয় কৃষক সমিতির জেলা সভাপতি আশরাফ আলী, বাসদ জেলা সদস্যসচিব সুকুমার মোদক, সিপিবির জেলা সদস্য এমদাদুল হক মিলন, বাসদ মার্কসবাদীর জেলা সদস্য রাহেলা সিদ্দিকা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জেলা সংগঠক কনক রায়, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের জেলা সদস্য জুয়েল মিয়া, সাম্যবাদী আন্দোলন জেলা সদস্য সবুজ মিয়া, তাপস রায় প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভূমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদনে অতিরিক্ত টাকা আদায়, জাল দলিল, টাকার বিনিময়ে ভলিয়ম ও বালাম বই ছিঁড়ে ফেলা, একই পে-অর্ডার দাখিল করে একাধিক দলিল সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবিলম্বে অনিয়ম-দুর্নীতি বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। 

তারা ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতাদের ক্ষতিপূরণ এবং জাল দলিল হওয়া জমির আসল দলিল ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। সমিতির নামে অতীতে উত্তোলন করা সব টাকা ফিরিয়ে দেওয়াসহ অবৈধভাবে টাকা আদায়কারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এ সময় রেজিস্ট্রেশন বাবদ সরকার নির্ধারিত ফি অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ করাসহ অতিরিক্ত টাকা আদায়কারীদের শাস্তির দাবি করা হয়।

ময়মনসিংহে চিরকুট আতঙ্ক!

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩১ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৩ এএম
ময়মনসিংহে চিরকুট আতঙ্ক!
বাড়ির গেটে ঝুলিয়ে রাখা একটি চিরকুট। ছবি : খবরের কাগজ

বাড়ির গেটে ঝুলিয়ে রাখা একটি চিরকুটে লেখা ছিল ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। এই টাকা না দেওয়ায় এক দিন পর আরেকটি চিরকুট দিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। এতেও কাজ না হলে আবারও চিরকুটের মাধ্যমে হত্যার হুমকিসহ স্ত্রী-সন্তানদের ক্ষতি করার কথা বলা হয়। ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নাথপাড়া মহল্লায় ঘটেছে এমন ঘটনা। একের পর এক হুমকির চিরকুট পেয়ে মহল্লার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। যদিও পুলিশ বলছে, অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

স্থানীয়রা জানান, নরসুন্দা নদীর কারণে উপজেলার অন্য এলাকা থেকে এই জায়গাটি প্রায় বিচ্ছিন্ন। গত ১ অক্টোবর একই মহল্লার সুনীল চন্দ্র বর্মণের বাসার ফটকে ৫০ হাজার টাকা চেয়ে কে বা কারা চিরকুট ফেলে রেখে যায়। টাকা না দেওয়ায় এক দিন পর এক লাখ টাকা দাবি করে আরেকটি চিরকুট রেখে যায়। এতেও কোনো সাড়া না পেয়ে তৃতীয় চিরকুটে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।

গত রবিবার একই মহল্লায় বসবাস করা বন কর্মকর্তা মো. আল-আমিনের বাসায় ৫০ হাজার টাকা দাবি করে চিরকুট ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। চিরকুটে দুই দিনের মধ্যে টাকা না দিলে শিক্ষিকা স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে ওই দিন রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। 

চিরকুট পাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ভয়ে অনেকেই কথা বলতে রাজি হননি। তবে ওই মহল্লার আচারগাঁও উত্তরপাড়ার মোজ্জাম্মেল হক জানান, তার ভগ্নিপতি বন কর্মকর্তা মো. আল-আমিন কর্মস্থল ঢাকায় থাকেন। নান্দাইলের ওই মহল্লার বাড়িতে মোজ্জাম্মেল হকের বোন সালমা বেগম, আড়াই বছরের এক ভাগ্নে ও বোনের শাশুড়ি বসবাস করেন। বোন কাছাকাছি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।

নৌকা ব্যবহার করে সালমা বেগম প্রতিদিন নদী পার হয়ে মাদ্রাসায় যান। গত রবিবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ির ফটক লাগানোর সময় সেখানে পলিথিন মোড়ানো একটি কাগজ ঝুলতে দেখতে পান। কৌতূহলবশত পলিথিন খুলে ভেতরের হুমকির চিরকুট পাওয়া যায়। কাগজটিতে লেখা ছিল, ‘চাহিদামতো টাকা না পেলে বাড়িতে আগুন জ্বলবে এবং স্ত্রী-সন্তানের ক্ষতি হবে।’ টাকাগুলো বাড়ির কাছে বাঁধা নৌকায় রেখে দিতে বলা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘চিরকুট দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। অনেকে ভয়ে রাতে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।’ আসাদ মিয়া নামে আরেকজন বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যেই একাধিক চিঠি পেয়েছি। এটি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের। ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ এই কাজটি যারা করছে, দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, যারা চিরকুট দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।

বাঁধ ভেঙে প্লাবিত পাটকেলঘাটার অর্ধশত গ্রামের মানুষ দিশেহারা

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৪ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৫ এএম
পাটকেলঘাটার অর্ধশত গ্রামের মানুষ দিশেহারা
নিজ বসতবাড়ির ধ্বংসস্তূপের ওপরে দাঁড়িয়ে প্রতিবন্ধী হাফিজুল-শেফালী দম্পতির একমাত্র সন্তান সাব্বির সরদার। সাব্বির নিজেও একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার নগরঘাটা থেকে তোলা। খবরের কাগজ

হাফিজুল হোসেন ও শেফালী খাতুন দম্পতি সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানা এলাকার নগরঘাটায় বসবাস করেন। দুই শতক জমির ওপর নির্মিত মাটির একটি ঘরই ছিল তাদের শেষ সম্বল। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাত ও বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তাদের এলাকা প্লাবিত হয়। এতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এই দম্পতিকে আশ্রয়স্থল হারাতে হয়।

স্বামী-সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় ভাতার টাকায় কোনো রকমে সংসার চলত শেফালীর। একই সঙ্গে ইট ভাটায় কাজ করে শ্রমে-ঘামে মাটির ঘরে তৈরি করেন প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। তবে এর কোনটাই রক্ষা করতে পারেননি শেফালী। এক কাপড়ে স্বামী, সন্তান নিয়ে তাকে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসতে হয়।

সরেজমিনে হাফিজুল-শেফালীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের ঘর ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে ধ্বংসস্তূপের ক্ষত। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় পানি নেমে গেলেও এখনো প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রিত অবস্থায় দিন পার করছেন তারা। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে মেলেনি কোনো সহায়তা। টাকা না থাকায় নতুন করে ঘর বানাতে পারছেন না। এতে ঘরবাড়ি হারিয়ে এই দম্পতি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

শেফালী খাতুন জানান, একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে বেতনার বাঁধ ভেঙে তাদের এলাকা প্লাবিত হয়। এতে প্রচণ্ড পানির তোড়ে ঘটনার দিন দুপুরে বসতবাড়ি ভেঙে যায়। সে দিন তারা ঘর থেকে যে কাপড় নিয়ে বের হয়েছিলেন, সেগুলোই এখন একমাত্র সম্বল। কোনো রকমে স্বামী-সন্তান নিয়ে প্রাণে বাঁচলেও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি গৃহস্থালির আসবাবপত্র।

ক্ষোভ প্রকাশ করে শেফালী বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ সহায়তার হাত বাড়ায়নি। বাঁচলাম কী মরলাম কেউ খোঁজ রাখেনি। গত কয়েক দিন ধরে মানুষের দেওয়া খাবার খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। স্বামী-সন্তানের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আর নিজের পরিশ্রমের অর্থ দিয়েও যেখানে পেটের খাবার জোগানো দায়, সেখানে সহায়তা ছাড়া নতুন করে ঘর বানানো আমার পক্ষে সম্ভব না।

শুধু হাফিজুল-শেফালি দম্পতির বসতবাড়ি নয়। একদিকে বৃষ্টি অপরদিকে বেতনার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার ফলে নগরঘাটা এলাকাসহ ৫০টি গ্রামের অধিকাংশ মাটির ঘরের একই দশা। বেতনা নদীর নিকটবর্তী হওয়ায় নগরঘাটা এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা বেশি। এখানকার মাটির ঘর বলতে শুধু ধ্বংসস্তূপের চিহ্ন। ঘরবাড়ি, গাছপালা, শৌচাগার, হাঁস-মুরগির খোয়াড় সব ভেঙে পড়ে আছে। ঘর ভেঙে মিশে গেছে মাটির সঙ্গে।

এমনই একজন নগরঘাটা এলাকার ভ্যানচালক আব্দুর রহমান। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বসতবাড়ি হারানোর পর থেকে গোয়ালঘরে বসবাস করতে হচ্ছে তাকে। আব্দুর রহমান বলেন, ঘর বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর কিছুদিন অন্যের জমিতে থাকতে হয়েছে। পরে প্রতিবেশীদের নানান সমস্যা হওয়ায় সেখানে আর থাকা হয়নি। নতুন করে ঘর নির্মাণ কিংবা সংস্কার করার অর্থ আমার ছিল না। এ জন্য উপায়ন্তর না পেয়ে ভ্যানের ব্যাটারি বিক্রি করে গোয়ালঘরে থাকার পরিবেশ তৈরি করি। এখন স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে থাকতে পারলেও অনাহারে দিন কাটছে। তার ওপর ভ্যানের ব্যাটারি বিক্রি করায় আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

একই এলাকার নাসিরউদ্দিন বলেন, এলাকার সবার মতো তার মাটির ঘরটিও ভেঙে গেছে। বর্তমানে অন্যের আশ্রয়ে রয়েছেন। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কোনো সহায়তা না পাওয়াতে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন তিনি।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাই তার বক্তব্য জানা যায়নি।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ভারী বর্ষণের কারণে ১৭ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। চার দিন পর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করেন। তবে ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সংস্কার করা বাঁধ আবারও ভেঙে যায়। পরে ২৯ সেপ্টেম্বর বাঁধটি মেরামত করা সম্ভব হলেও ততক্ষণে বেতনার পানিতে প্লাবিত হয় কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম। এ সময় পানির তোড়ে পড়ে অধিকাংশ মাটির ঘর ভেঙে মাটিতে মিশে যায়।