গাইবান্ধার বিভিন্ন হাট-বাজারে অস্বাভাবিক হারে চালসহ সবজির দাম বেড়েছে। প্রতি কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও সবজির দাম। পাশাপাশি আদা, পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও কারফিউ আতঙ্কে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে জিনিসপত্রের দাম আরও বেশি। ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, আগের থেকে গত এক সপ্তাহে বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নানা দামে চালসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বেচাকেনার চিত্র। প্রতি কেজি মোটা চাল ৪০ থেকে ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা ও দেশি মুরগি ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি আলু ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, আদা ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা ও পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, রসুন ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, মসুর ডাল ১০৪ থেকে ১৫০ টাকা, সোয়াবিন তেল ১৬৭ থেকে ১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
শহরের হকার্স মার্কেটে যান রতন মিয়া (৫০)। তার বাড়ি সদর উপজেলার ফলিয়া গ্রামে। তিনি একটি বিদ্যালয়ে পিয়ন পদে চাকরি করেন। রতন মিয়া বলেন, ‘অল্প বেতনের চাকরি। যা বেতন পাই তা দিয়ে কোনো একরকম সংসার চলে। বেতনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে খরচ করি। কিন্তু চাল কিনতে এসে অবাক হলাম। প্রতি কেজি চালে ৩-৫ টাকা বেড়েছে। কারফিউর কারণে এ মাসে অতিরিক্ত টাকা খরচ হবে। এ জন্য ঋণ করতে হবে।’
একই মার্কেটে আসা শহরের সুখনগর এলাকার চাকরিজীবী হোসেন আলী বলেন, ‘আমরা চাকরিজীবী। সারা বছর চাল, ডাল, সবজি কিনে খেতে হয়। যে টাকা নিয়ে বাজারে কেনাকাটা করতে এলাম, এসে দেখি দাম বেশি। বাধ্য হয়ে কয়েক কেজি চাল কম কিনলাম। সবজিও কম নিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
এই বাজারের চাল ব্যবসায়ী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চালের দাম বাড়াইনি। বেশি দামে চাল কিনতে হয়েছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
কাঁচা সবজি বিক্রেতার একই ভাষ্য। এই বাজার থেকে শহরের পুরাতন বাজারে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেল। পুরাতন বাজারে আসা সদর উপজেলার খোলাহাটি গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, ‘পাইকারি বাজারে এলাম। ভাবলাম দাম একটু কম পাব। কিন্তু ব্রয়লার মুরগি, মসুর ডাল, আলু, রসুন, সোয়াবিন তেল বেশি দামে কিনতে হলো। প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে দেখলাম।’
বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সাজু মিয়া বললেন, ‘এখন কারফিউ চলছে। ব্রয়লার মুরগি ও সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। আমরা বেশি দামে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করছি। বিক্রিও অনেক কম।’
গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর রহমান বলেন, ‘কোনো জিনিসের দাম বৃদ্ধির কারণ নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মালবাহী পরিবহন চলছে। দাম বাড়ানোর প্রশ্নই উঠে না। কারফিউ দোহাই দিয়ে যাতে কেউ দাম বাড়াতে না পারে, সে জন্য প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার।’
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন বলেন, ‘প্রতিদিনই বাজার মনিটর এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীদের পণ্য বেচাকেনা করতে বলা হচ্ছে।’