সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকায় শুক্রবার বিকেলে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রাবার বুলেটে আহত হয় ১১ বছর বয়সী শিশু শফিক আলী। তাকে পুলিশ কোলে করে এনে আখালিয়ায় মাউন্ড এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু তাকে ঘিরে ছড়িয়ে পড়ে গুজব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ে পুলিশের গুলিতে এক শিশু নিহত। যে ছবিটি ছড়িয়ে গুজব ছড়ানো হয়, সেখানে শিশুটি হাসপাতালের একটি ট্রলিতে শোয়া অবস্থায় ছিল।
শুক্রবার (২ আগস্ট) রাত আটটার দিকে মাউন্ড এডোরা হাসপাতালে গিয়ে শিশু শফিককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখা গেছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটি সম্পূর্ণ শঙ্কামুক্ত। প্রয়োজনে বাড়ি যেতেও পারবে। শিশু শফিক জানায়, তাকে উদ্ধার করে এক পুলিশ সদস্য কোলে করে এনে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। শয্যা পাশে থাকা শফিকের বাবা আমীর আলী জানান, চিকিৎসক বললে ছেলেকে নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরবেন। তাদের বাড়ি আখালিয়া পাশের বড়গুল গ্রামে। শিশু শফিক উৎসুক্য হয়ে সংঘর্ষস্থলে গিয়ে রাবার বুলেটবিদ্ধ হয়েছে। তার বাঁ হাতে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসায় সে সুস্থবোধ করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে শিশু শফিকের মৃত্যুর গুজবটি ছড়ানোর সূত্রপাত পাওয়া যায়নি। তবে বিকেল পাঁচটা থেকে শিশু মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোরনের কয়েকটি গ্রুপে নজরদারি করে দেখা গেছে, সেখানে শিশুটির আহত অবস্থায় ছবি ও হাসপাতালে ভর্তির একটি ভিডিও রয়েছে। তবে মৃত্যুর বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবুও গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
সিলেট মেট্রোপলিট পুলিশের (এসএমপি) পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের গ্রুপে সন্ধ্যা সাতটা ২৯ মিনিটে ‘সিলেটে সংঘর্ষে কেউ মৃত্যুবরণ করেনি’ বলে সংক্ষিপ্ত বার্তা দেওয়ার পর গুজবের বিপরীতে সত্য বিষয়টি প্রচার পায়। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুটিকে পুলিশ কোলে করে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও পরবর্তীতে হাপসাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিডিওচিত্র প্রকাশ হয়। এরপর থেকে শিশু মৃত্যুর বিষয়টি নিছক গুজব বলে প্রকাশ হয়।
এদিকে, শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে শিক্ষার্থীদের গণমিছিল কর্মসূচিটি শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ফটক এলাকা থেকে আখালিয়া এলাকার দিয়ে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তখন থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। থেমে থেমে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন। আহত হওয়ার তালিকায় পুলিশ সদস্যও আছেন জানিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ খবরের কাগজকে বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাশাপাশি পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে। আমাদের অন্তত ৭-৮ জন পুলিশ আহত হয়েছে। নাক ফেটে রক্ত পড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শটগানের গুলি, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে। আমরা ৮ জনকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়েছি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ গালিব দাবি করছেন সংঘর্ষে কেবল শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ছুঁড়ছে। পাড়া-মহল্লায় ঢুকে গুলি কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এতে আন্দোলনকারী শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।