বছর ঘুরে চলে আসে বর্ষা। বর্ষায় নদী, খাল-বিল, হাওর বাঁওড়ে বাড়ছে পানি। আর এই বর্ষা মৌসুমে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চলের মানুষের একমাত্র বাহন নৌকা। তাই নৌকা তৈরির কাজে কারিগররা পার করছেন ব্যস্ত সময়।
বর্ষা মৌসুমে জেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষের বাহন হিসেবে নৌকার ব্যবহার আবহমান কালের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত। বর্ষাকালে নিচু এলাকার মানুষের চলাচলে একমাত্র বাহন নৌকা ও মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার কাজেও নৌকার ব্যবহার করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, দিনরাত হাতুড়ি-বাটালের ঠুকঠুকানিতে মুখর বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার নালুয়া বাজার। এ বাজারে অনেকেই নৌকা তৈরির কাজ করে তাদের সংসার চলে।
নৌকা তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘বর্ষাকাল এলেই আমরা নৌকা তৈরি করে বিক্রি করি। নৌকা তৈরি ও বিক্রিও ভালো হচ্ছে।’
নৌকা তৈরির কারিগর হাফিজুল শেখ বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে আমরা ৩০টি নৌকা তৈরি করি। দৈনন্দিন যে মজুরি পাই, তাতে আমাদের পরিবার স্বচ্ছন্দে চলতে পারে। বর্ষা মৌসুমেই নৌকা তৈরির কাজে দিন-রাত ব্যস্ত থাকি।’
নৌকা তৈরির কারিগর মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমি আট থেকে দশ বছর ধরে নৌকা তৈরির কাজ করি। প্রতি বছর বর্ষাকাল এলেই আমরা নৌকার কাজ করি। আমরা সাত-আটজনে মিলে প্রতি দিন ৮ থেকে ৯টি নৌকা তৈরি করি। নৌকা তৈরি করে আমাদের সংসার ভালোই চলে।’
তিনি আরও জানান, আকার ভেদে ছোট ডিঙি নৌকা তৈরির মজুরি হিসেবে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা নিই। কাঠসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নৌকার মালিক দেন। কাঠের গুণগত মান ও আকৃতি বুঝে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা করে প্রতিটি নৌকার খরচ পড়ে। কাঠ, লোহাসহ অন্যান্য সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের চেয়ে খরচ বেশি লাগছে।
নৌকা কিনতে আসা রাসেল হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের গ্রামে প্রায় মানুষই বর্ষাকালে নৌকা ব্যবহার করে। সামান্য বর্ষাতেই ছোট ছোট রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। বর্ষার সময় একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা। তাই নৌকা কিনতে এসেছি। তবে এ বছর নৌকার দাম একটু বেশি।’
নৌকার এক ব্যাপারী বলেন, ‘আমি ১০ থেকে ১৫ বছর এই নৌকার ব্যবসা করি। বর্তমানে আমি এখান থেকে নৌকা নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিক্রি করি। এই নৌকা বিক্রি করে আমি পরিবার নিয়ে অনেক ভালো আছি।’
নালুয়া বাজারের নৌকার ব্যবসায়ী রমজান শেখ বলেন, ‘আমরা অর্ডার নিয়ে নৌকা তৈরি করছি। আমার কারখানায় কারিগরসহ আট-দশজন কাজ করে। ‘শিরীষ, কড়ই, হিজল ও মেহগনির কাঠ দিয়ে বেশির ভাগ নৌকা তৈরি করি। এ ছাড়া আলকাতরা, বাঁশ, তারকাঁটাসহ বিভিন্ন উপকরণ লাগে। এর মধ্যে বেশির ভাগই ছোট ডিঙি নৌকা, যার অধিকাংশই মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করা হয়। অনেকে আবার মাছের ঘেরের কাজেও নৌকা নেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দূরদূরান্তের হাট বাজারের ব্যাপারীরা চিতলমারী নালুয়া বাজার থেকে পাইকারি দামে নৌকা কিনে নিয়ে যান। আট থেকে দশ হাত দৈর্ঘ্যের নৌকা চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। নৌকা বড় হলে দামও বাড়ে। সেগুলোর মূল্য চুক্তি মোতাবেক ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে তৈরি করে দেওয়া হয়। এখান থেকে পাইকারি এবং খুচরা হিসেবে নৌকাগুলো বিক্রি করা হয়।’