রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টিপাতে আবারও পাহাড়ধসের আশঙ্কায় সতর্কতা জানিয়ে মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসন। রাঙামাটি শহরসহ জেলার ১০ উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করা প্রায় ২০ হাজার মানুষের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৬৭টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া এক হাজার টন চাল ও ২৫ লাখ টাকা মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গত বুধবার বিকেল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্য দিয়ে জেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। চলতে থাকে একটানা। থেমে থেমে চলতে থাকে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত। এতে উজানের ঢলের সঙ্গে নদী-ছড়ার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে আবারও জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ির বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। অবশ্য এর আগে গত জুনের শেষে ও জুলাইয়ের শুরুতে হওয়া সপ্তাহব্যাপী টানা বর্ষণে জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু ও বরকল উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হয় বহু মানুষ।
এদিকে টানা বৃষ্টিপাতে মাইনী ও চেঙ্গী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা-বাঘাইহাট-সাজেক সড়কের কবাখালী ও বাঘাইহাট বাজারের সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ। ফলে সাজেকে তিন শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েন। এ ছাড়া শনিবার সকাল থেকে বাঘাইছড়ির সঙ্গে অন্য জেলা-উপজেলায় ছোট-বড় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় শহরের ৩১টি এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের জন্য ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য খোলা হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম। তবে আগ্রহ নেই ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের। তাদের অনেকে বলছেন, ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, মূল্যবান সম্পদ ও গবাদি পশু চুরির ভয়ে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইছেন না।
তবে দুর্যোগকালীন ক্ষয়ক্ষতি কমাতে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন আর জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর বাইরে জেলার আরও ৯টি উপজেলায় পাহাড়ধসের আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন নজরদারি, মাইকিং ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করে পরিস্থিতিকে নজরে রাখছে। সব মিলিয়ে জেলায় ২৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এদিকে অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলে কাসালং ও মাইনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দীঘিনালা-সাজেক সড়কের কবাখালী, গঙ্গারাম, মাসালং ও বাঘাইহাটে সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সাজেকের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে ফিরতে না পারায় সাজেকে আটকা পড়েছেন তিন শতাধিক পর্যটক। এ ছাড়া বাঘাইছড়ির বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা বাঘাইছড়িতে বন্যার আশঙ্কা করছেন। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শহরের রূপনগরের তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে বাচ্চাদের রাখা অনেক কষ্টের। তাই সেখানে যেতে চাই না।’ রাবেয়া বেগম বলেন, ‘ঘরের আসবাবপত্র আছে, সেগুলো চুরির ভয় আছে।‘ নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ঘরে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল আছে, আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে সেগুলো চুরি হতে পারে। মানুষ এসব কারণে যেতে চাইছে না।’
গত শুক্রবার বিকেলে শহরের শিমুলতলী, রূপনগর এলাকা পরিদর্শনে যায় সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিব শংকর বসাকের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের মনিটরিং টিম। এ সময় তারা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে খোঁজখবর নেন। ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পরামর্শ দেন।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান জানান, জেলায় ২৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার টন চাল ও ২৫ লাখ টাকাসহ পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি রয়েছে। পাহাড়ধসসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা দেখা দিলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগসহ জেলা-উপজেলার সব বিভাগ ও সংস্থাকে প্রস্তুত থাকতে বলে দেওয়া আছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।