টানা দুদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০টি স্থানে ভেঙে অন্তত ৫৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, টানা বর্ষণের কারণে পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পরশুরামের শালধর এলাকায় মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। একই দিন বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে কহুয়া নদীর বাঁধের দুই জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ভাঙে মির্জানগর ইউনিয়নে সিলোনীয় ও মুহুরী নদীর ২টি জায়গায়। চিথলীয়া ইউনিয়নের মুহুরী নদীর বাঁধের ৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এতে উপজেলার ৩১টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তাদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁঞা জানান, ফুলগাজী উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোনো অংশে ভাঙন সৃষ্টি না হলেও পরশুরামের ভাঙনের পানি ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঢুকে ২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ফেনী পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কে পানি থাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মির্জানগর এলাকার বাসিন্দা মো. নোমান বলেন, ‘এত প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করতে এর আগে কখনো দেখিনি। দ্রুত সময়ে বাড়িতে পানি উঠে গেছে। খুব কষ্টে রাত-দিন পার করছি আমরা।’
ইব্রাহিম নামে আরেকজন বলেন, ‘কিছু এলাকা উঁচু হওয়ায় সাধারণত বন্যার পানি প্রবেশ করে না। কিন্তু এবার ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে আমাদের।’
ফুলগাজী উপজেলার ফজলুল হক মনছুর বলেন, ‘১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০১৮ সালের বন্যা নিজ চোখে দেখেছি। কখনো বাড়িতে পানি ওঠেনি। এবারই প্রথম আমার বাড়িতে পানি উঠল। পুরো এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। নদীর পানি না কমলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
কৃষক আবুল হাসেম বলেন, ‘গত মাসে বন্যায় বোরো ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে যায়। নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করে কয়েক দিন আগেই রোপণ করেছি। আবারও নদীর বাঁধ ভেঙে এখন জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ক্ষতির কারণে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, ‘টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে মুহুরী, কহুয়া সিলোনিয়া নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর ১০টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন এলাকা থেকে পানি নামলে বাঁধগুলো সংস্কার করা হবে।’