এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে ময়মনসিংহে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। নগরীজুড়ে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করলেও যাত্রী-চালকসহ সবাই ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
রবিবার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নগরীর টাউন হল মোড়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন।
এ সময় অনেকের হাতে ছিল লাঠি। একই সময়ে শহরের জামিয়া ফয়জুর রহমান মাদ্রাসা বড় মসজিদ চত্বরে হেফাজত ইসলামের উদ্যোগে মাদ্রাসা ছাত্রবন্ধনের ব্যানারে মাদ্রাসার শিক্ষক ও সাধারণ ছাত্ররা আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে। এতে জামিয়া ফয়জুর রহমান মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সারোয়ার হোসেন, শিক্ষক আবদুল আওয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এতে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় বক্তব্যে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ জানান তারা। সমাবেশ শেষে বড় মসজিদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে স্টেশন মোড় হয়ে আবার জামিয়া ফয়জুর রহমান মাদ্রাসা বড় মসজিদে গিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে শেষ করা হয়।
বেলা পৌনে ১২টার দিকে নগরীর চরপাড়া মোড় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে জামিয়া ইসলামিয়াসহ বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, মাদ্রাসাশিক্ষার্থী আবু সাঈদ, রাশেদুল ইসলাম প্রমুখ। তারা বলেন, ‘ন্যায্য দাবির আন্দোলনে আমাদের ছাত্র ভাইদের বুকে গুলি চালিয়েছে সরকার। তাদের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই। আমার টাকায় কেনা বুলেট, আমার ভাইয়ের বুকে বিদ্ধ হবে। এটা মেনে নেওয়া হবে না।’
বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজির গেট ভাঙচুর করেন। এ সময় কাচারিঘাট জিরো পয়েন্ট মোড়ে একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ডিজিটাল সেন্টার। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন জানান বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
সারা দিন শহর আন্দোলনকারীদের দখলে থাকলেও বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মিলে মিছিল বের করে। সবার হাতে হাতে ছিল লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র। তখন এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সড়কে থাকা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি।
এর কিছুক্ষণ আগে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল আইনজীবী সমিতির সামনের সড়কে মিছিল বের করে।
অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে নগরীর কোনো সড়কেই পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। সর্বত্রই বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা।