দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য মোতায়েন হওয়া সামরিক বাহিনীকে সেনা ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকটকে সামরিক রূপায়ণের অপচেষ্টার বিরোধিতা করেছেন এসব সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
রবিবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, দেশের নীতিনির্ধারকরা যদি বিবেক, বুদ্ধি ও হৃদয়হীন হয়ে না পড়তেন, তাহলে গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড়, করুণ, মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটত না।
তিনি বলেন, এসব হামলা, আক্রমণ ও পাল্টা প্রতিরোধে অঙ্গহানি ঘটেছে অগণিত মানুষের। অন্ধ হয়ে গেছে বহুসংখ্যক কিশোর ও তরুণ। অসহায় নাগরিকরা প্রয়োজনীয় এবং জরুরি চিকিৎসাও পাচ্ছেন না। তার ওপরে চলছে ব্লক রেড করে, সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে বাড়িঘর, মেস চিনিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো ভয়ংকর ঘটনা। মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন অথবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হাজার হাজার নিরপরাধ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্য, ভেদাভেদ ও জুলুমের অবসান করা ছিল মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার। তা না ঘটে উল্টো এটা আজ দেশের সব পর্যায়ে ভয়াবহভাবে বিস্তার লাভ করেছে। সমাজের নিচের স্তরে পড়ে থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সহ্যের সীমার বাইরে চলে গেছে। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও এর ব্যবস্থাপনা খুব নাজুক, যার প্রতিকার ঘটাতে জনগণ আজ আত্মোৎসর্গ করতে পিছপা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এমন কষ্টকর পরিস্থিতির ভেতর দেশবাসীকে ঠেলে দেওয়ার জন্য যারা দায়ী, বিচারের মাধ্যমে তাদের সাজা নিশ্চিত করে পুরো ব্যবস্থার মধ্যে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে না।
সাবেক সেনাপ্রধান আরও বলেন, সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে দেশের এমন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমরা নিজেরা নিজেদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারি না। সমগ্র দেশটা, প্রিয় রাজধানী ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন জেলা শহরগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে দিতে পারি না। আজ এখানে দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি, তা আমরা করতে দেবো না। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকবো।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যানের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খানসহ ছয়জন সাবেক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নুরুদ্দীন খান।