মেহেরপুর ও ফরিদপুরের ভাঙ্গায় হিন্দুদের বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়েছে। মেহেরপুরে হিন্দু ধর্ম প্রচার প্রতিষ্ঠান ইসকনে ভাঙচুরসহ ৭ হিন্দু বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে হামলা ও আগুন দিয়েছেন ক্ষুব্ধ লোকেরা।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি এ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
এর মধ্যে দুই দফায় শহরের হোটেল বাজারে অবস্থিত মেহেরপুর জেলা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পল্লব ভট্টাচার্যের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বড় বাজারে চিত্ত সাহার গার্মেন্টপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালান ক্ষুব্ধদের একটি দল।
চিত্ত সাহার পুত্র দেবু সাহা বলেন, সন্ধ্যার পরে হঠাৎ পাশের দোকানে কিছু ছেলে লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ চালায়। আমার দোকানেও হামলা করে তারা। এখন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছি। আতঙ্কে আছেন বলে জানান দেবু।
পল্লব ভট্টাচার্যের ভাই অঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমার ভাই সপরিবারে বড়কন্যার কাছে জাপানে বেড়াতে গিয়েছেন। এ সময় বাড়িতে কেউ ছিল না বলে জানে বেঁচে গেছে। গত সোমবার সন্ধ্যার পরে ৫০-৬০ জন এসে বাড়িতে হামলা চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও রাত ১১টার দিকে আবারও হামলা চালান ক্ষুব্ধরা। বাড়ির অধিকাংশ জিনিস পুড়ে গেছে।
মেহেরপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী মিনা পাল বলেন, রাত একটার পরে হঠাৎ বাড়িতে ঢুকে পড়ে হামলাকারীদের একটি দল। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আসবাবপত্রে আগুন দেয় তারা। এ সময় টাকাসহ গয়না লুট করে তারা। এর আগেও তারা একবার এসে ইটপাটকেল ছুড়েছে বলে জানান সনাতন ধর্মাবলম্বী এই আইনজীবী।
শহরের মালোপাড়ায় ৪-৫টি বাড়িতে হামলা করা হয়। এ সময় একটি বাড়িতে আগুন দিলেও স্থানীয় বাসিন্দারা তা নিয়ন্ত্রণে আনেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা থেকেই কিছু যুবককে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল ও লোহার রড নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন তারা। এ সময় বিভিন্ন দোকান বাড়ি এবং সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। শহরের বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পাওয়া যায়।
হামলার সময় বিভিন্ন মানুষকে মারধরও করেন তারা। আহত হয়েছেন অনেকে। যুবলীগ নেতা মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ির সব পুড়িয়ে দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসকে বারবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। বাড়ি থেকে একটু দূরে অবস্থান করার কারণে প্রাণে বেঁচে গেছি।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশকে জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ অনেকের। এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় প্রবীণের ওপর হামলা
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ভাঙ্গা উপজেলার পৌরসদরের নওপাড়া গ্রামে সংখ্যালঘু এক পরিবারের সদস্যের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল ওই গ্রামের সংখ্যালঘু অমরেন্দ্র কুমার ঘোষ পলান (৭৫)-এর ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালান ক্ষুব্ধরা। আহত পলানকে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অমরেন্দ্র কুমার বলেন, ‘সকালে আমার বাড়ির কাছে নির্মল ঠাকুরের দোকানে বসেছিলাম। নিকটপ্রতিবেশী বাবুল মিয়া, মিনহাজ মিয়া, হাসান মিয়াসহ ৬-৭ জন সংঘবদ্ধ হয়ে পূর্বশত্রুতার জের ধরে আমার ওপর হামলা চালান। আমার হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত জখম করা হয়। এ সময় তারা অকথ্য গালিগালাজ করার পাশাপাশি বলে যে, দেবোত্তর সম্পত্তি নিতে চাস। এখন কি তোর পুলিশ আছে? কার কাছে যাবি? হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অমরেন্দ্র কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সংঘবদ্ধভাবে তারা আমাকে হামলার পর মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে যায়। তারা বলে, এখন আমাদের বিজয়। তোদের বাড়িছাড়া করব। হামলার সময় স্থানীয় রাজ্জাক ফকিরসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঠেকানোর চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হয়নি।’