ঢাকা ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

নৌকাডুবি টেকনাফ উপকূলে আরও ১১ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
টেকনাফ উপকূলে আরও ১১ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার
ছবি: খবরের কাগজ

কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদ ও সাগর তীরে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাডুবিতে আরও ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বাহারছড়ায় দুটি ও সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ৯টি লাশ ভেসে আসে। এ নিয়ে গত তিন দিনে নৌকাডুবির ঘটনায় ৪৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। এসব সাগর তীরে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাডুবিতে লাশ বিজিবির তত্ত্বাবধানে দাফন করা হয়েছে।

সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ সালমান বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) শাহপরীর দ্বীপের তিনটি পয়েন্টে ৯ জনের লাশ ভেসে আসে। এর মধ্যে পাঁচজন পুরুষ, দুজন নারী ও দুজন শিশু। বিজিবির উপস্থিতিতে আমরা কয়েকজন যুবক মিলে লাশগুলো উদ্ধার করে ধর্মীয় রীতি মেনে দাফন করেছি। 

বাহারছড়া ৭ নম্বর ইউনিয়নের সদস্য ফরিদ উল্লাহ বলেন, আমার এলাকার মারিশবনিয়া ও বড়ডেইল থেকে একজন পুরুষ ও দুজন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। 

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাডুবির ঘটনায় গত তিন দিনে যে লাশগুলো ভেসে আসছে স্থানীয়দের মাধ্যমে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সীমান্তে মিয়ানমার পরিস্থিতিতে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত কয়েক দিন ধরে জান্তা সমর্থিত বাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘাত চলছে। এতে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। গত তিন দিনে রোহিঙ্গাদের নৌকাডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতি অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ
ছবি : খবরের কাগজ

গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলার বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে। তারা শহরের ডিবি রোড গানাসাস মার্কেটের সামনে সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আমিনুল ইসলাম গোলাপের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতা মনজুর আলম মিঠু, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি প্রণব চৌধুরী খোকন, বাসদ জেলা আহ্বায়ক গোলাম রাব্বানী, সিপিবির জেলা সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের জেলা সভাপতি মোস্তফা মনিরুজ্জামান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের জেলা সম্পাদক রেবতী বর্মণ, সাম্যবাদী আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক নওশাদুজ্জামান নওশাদ, জাতীয় কৃষক সমিতির জেলা সভাপতি আশরাফ আলী, বাসদ জেলা সদস্যসচিব সুকুমার মোদক, সিপিবির জেলা সদস্য এমদাদুল হক মিলন, বাসদ মার্কসবাদীর জেলা সদস্য রাহেলা সিদ্দিকা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জেলা সংগঠক কনক রায়, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের জেলা সদস্য জুয়েল মিয়া, সাম্যবাদী আন্দোলন জেলা সদস্য সবুজ মিয়া, তাপস রায় প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভূমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদনে অতিরিক্ত টাকা আদায়, জাল দলিল, টাকার বিনিময়ে ভলিয়ম ও বালাম বই ছিঁড়ে ফেলা, একই পে-অর্ডার দাখিল করে একাধিক দলিল সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবিলম্বে অনিয়ম-দুর্নীতি বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। 

তারা ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতাদের ক্ষতিপূরণ এবং জাল দলিল হওয়া জমির আসল দলিল ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। সমিতির নামে অতীতে উত্তোলন করা সব টাকা ফিরিয়ে দেওয়াসহ অবৈধভাবে টাকা আদায়কারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এ সময় রেজিস্ট্রেশন বাবদ সরকার নির্ধারিত ফি অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ করাসহ অতিরিক্ত টাকা আদায়কারীদের শাস্তির দাবি করা হয়।

ময়মনসিংহে চিরকুট আতঙ্ক!

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩১ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৩ এএম
ময়মনসিংহে চিরকুট আতঙ্ক!
বাড়ির গেটে ঝুলিয়ে রাখা একটি চিরকুট। ছবি : খবরের কাগজ

বাড়ির গেটে ঝুলিয়ে রাখা একটি চিরকুটে লেখা ছিল ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। এই টাকা না দেওয়ায় এক দিন পর আরেকটি চিরকুট দিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। এতেও কাজ না হলে আবারও চিরকুটের মাধ্যমে হত্যার হুমকিসহ স্ত্রী-সন্তানদের ক্ষতি করার কথা বলা হয়। ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নাথপাড়া মহল্লায় ঘটেছে এমন ঘটনা। একের পর এক হুমকির চিরকুট পেয়ে মহল্লার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। যদিও পুলিশ বলছে, অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

স্থানীয়রা জানান, নরসুন্দা নদীর কারণে উপজেলার অন্য এলাকা থেকে এই জায়গাটি প্রায় বিচ্ছিন্ন। গত ১ অক্টোবর একই মহল্লার সুনীল চন্দ্র বর্মণের বাসার ফটকে ৫০ হাজার টাকা চেয়ে কে বা কারা চিরকুট ফেলে রেখে যায়। টাকা না দেওয়ায় এক দিন পর এক লাখ টাকা দাবি করে আরেকটি চিরকুট রেখে যায়। এতেও কোনো সাড়া না পেয়ে তৃতীয় চিরকুটে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।

গত রবিবার একই মহল্লায় বসবাস করা বন কর্মকর্তা মো. আল-আমিনের বাসায় ৫০ হাজার টাকা দাবি করে চিরকুট ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। চিরকুটে দুই দিনের মধ্যে টাকা না দিলে শিক্ষিকা স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে ওই দিন রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। 

চিরকুট পাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ভয়ে অনেকেই কথা বলতে রাজি হননি। তবে ওই মহল্লার আচারগাঁও উত্তরপাড়ার মোজ্জাম্মেল হক জানান, তার ভগ্নিপতি বন কর্মকর্তা মো. আল-আমিন কর্মস্থল ঢাকায় থাকেন। নান্দাইলের ওই মহল্লার বাড়িতে মোজ্জাম্মেল হকের বোন সালমা বেগম, আড়াই বছরের এক ভাগ্নে ও বোনের শাশুড়ি বসবাস করেন। বোন কাছাকাছি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।

নৌকা ব্যবহার করে সালমা বেগম প্রতিদিন নদী পার হয়ে মাদ্রাসায় যান। গত রবিবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ির ফটক লাগানোর সময় সেখানে পলিথিন মোড়ানো একটি কাগজ ঝুলতে দেখতে পান। কৌতূহলবশত পলিথিন খুলে ভেতরের হুমকির চিরকুট পাওয়া যায়। কাগজটিতে লেখা ছিল, ‘চাহিদামতো টাকা না পেলে বাড়িতে আগুন জ্বলবে এবং স্ত্রী-সন্তানের ক্ষতি হবে।’ টাকাগুলো বাড়ির কাছে বাঁধা নৌকায় রেখে দিতে বলা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘চিরকুট দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। অনেকে ভয়ে রাতে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।’ আসাদ মিয়া নামে আরেকজন বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যেই একাধিক চিঠি পেয়েছি। এটি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের। ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ এই কাজটি যারা করছে, দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, যারা চিরকুট দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।

বাঁধ ভেঙে প্লাবিত পাটকেলঘাটার অর্ধশত গ্রামের মানুষ দিশেহারা

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৪ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৫ এএম
পাটকেলঘাটার অর্ধশত গ্রামের মানুষ দিশেহারা
নিজ বসতবাড়ির ধ্বংসস্তূপের ওপরে দাঁড়িয়ে প্রতিবন্ধী হাফিজুল-শেফালী দম্পতির একমাত্র সন্তান সাব্বির সরদার। সাব্বির নিজেও একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার নগরঘাটা থেকে তোলা। খবরের কাগজ

হাফিজুল হোসেন ও শেফালী খাতুন দম্পতি সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানা এলাকার নগরঘাটায় বসবাস করেন। দুই শতক জমির ওপর নির্মিত মাটির একটি ঘরই ছিল তাদের শেষ সম্বল। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাত ও বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তাদের এলাকা প্লাবিত হয়। এতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এই দম্পতিকে আশ্রয়স্থল হারাতে হয়।

স্বামী-সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় ভাতার টাকায় কোনো রকমে সংসার চলত শেফালীর। একই সঙ্গে ইট ভাটায় কাজ করে শ্রমে-ঘামে মাটির ঘরে তৈরি করেন প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। তবে এর কোনটাই রক্ষা করতে পারেননি শেফালী। এক কাপড়ে স্বামী, সন্তান নিয়ে তাকে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসতে হয়।

সরেজমিনে হাফিজুল-শেফালীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের ঘর ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে ধ্বংসস্তূপের ক্ষত। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় পানি নেমে গেলেও এখনো প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রিত অবস্থায় দিন পার করছেন তারা। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে মেলেনি কোনো সহায়তা। টাকা না থাকায় নতুন করে ঘর বানাতে পারছেন না। এতে ঘরবাড়ি হারিয়ে এই দম্পতি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

শেফালী খাতুন জানান, একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে বেতনার বাঁধ ভেঙে তাদের এলাকা প্লাবিত হয়। এতে প্রচণ্ড পানির তোড়ে ঘটনার দিন দুপুরে বসতবাড়ি ভেঙে যায়। সে দিন তারা ঘর থেকে যে কাপড় নিয়ে বের হয়েছিলেন, সেগুলোই এখন একমাত্র সম্বল। কোনো রকমে স্বামী-সন্তান নিয়ে প্রাণে বাঁচলেও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি গৃহস্থালির আসবাবপত্র।

ক্ষোভ প্রকাশ করে শেফালী বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ সহায়তার হাত বাড়ায়নি। বাঁচলাম কী মরলাম কেউ খোঁজ রাখেনি। গত কয়েক দিন ধরে মানুষের দেওয়া খাবার খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। স্বামী-সন্তানের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আর নিজের পরিশ্রমের অর্থ দিয়েও যেখানে পেটের খাবার জোগানো দায়, সেখানে সহায়তা ছাড়া নতুন করে ঘর বানানো আমার পক্ষে সম্ভব না।

শুধু হাফিজুল-শেফালি দম্পতির বসতবাড়ি নয়। একদিকে বৃষ্টি অপরদিকে বেতনার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার ফলে নগরঘাটা এলাকাসহ ৫০টি গ্রামের অধিকাংশ মাটির ঘরের একই দশা। বেতনা নদীর নিকটবর্তী হওয়ায় নগরঘাটা এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা বেশি। এখানকার মাটির ঘর বলতে শুধু ধ্বংসস্তূপের চিহ্ন। ঘরবাড়ি, গাছপালা, শৌচাগার, হাঁস-মুরগির খোয়াড় সব ভেঙে পড়ে আছে। ঘর ভেঙে মিশে গেছে মাটির সঙ্গে।

এমনই একজন নগরঘাটা এলাকার ভ্যানচালক আব্দুর রহমান। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বসতবাড়ি হারানোর পর থেকে গোয়ালঘরে বসবাস করতে হচ্ছে তাকে। আব্দুর রহমান বলেন, ঘর বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর কিছুদিন অন্যের জমিতে থাকতে হয়েছে। পরে প্রতিবেশীদের নানান সমস্যা হওয়ায় সেখানে আর থাকা হয়নি। নতুন করে ঘর নির্মাণ কিংবা সংস্কার করার অর্থ আমার ছিল না। এ জন্য উপায়ন্তর না পেয়ে ভ্যানের ব্যাটারি বিক্রি করে গোয়ালঘরে থাকার পরিবেশ তৈরি করি। এখন স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে থাকতে পারলেও অনাহারে দিন কাটছে। তার ওপর ভ্যানের ব্যাটারি বিক্রি করায় আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

একই এলাকার নাসিরউদ্দিন বলেন, এলাকার সবার মতো তার মাটির ঘরটিও ভেঙে গেছে। বর্তমানে অন্যের আশ্রয়ে রয়েছেন। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কোনো সহায়তা না পাওয়াতে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন তিনি।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাই তার বক্তব্য জানা যায়নি।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ভারী বর্ষণের কারণে ১৭ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। চার দিন পর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করেন। তবে ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সংস্কার করা বাঁধ আবারও ভেঙে যায়। পরে ২৯ সেপ্টেম্বর বাঁধটি মেরামত করা সম্ভব হলেও ততক্ষণে বেতনার পানিতে প্লাবিত হয় কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম। এ সময় পানির তোড়ে পড়ে অধিকাংশ মাটির ঘর ভেঙে মাটিতে মিশে যায়।

রাজবাড়ীতে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৪ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৬ এএম
রাজবাড়ীতে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর
সজ্জনকান্দা মধ্যপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে। ছবি : খবরের কাগজ

রাজবাড়ী শহরের বাস মালিক সমিতির পাশে অবস্থিত সজ্জনকান্দা মধ্যপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বেলা ১০টা থেকে ১১ টার মধ্যে এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে জানান মন্ডপ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ। ওই সময় মন্দিরে কোনো লোক ছিল না।

পুলিশ ও মন্দির কমিটির সাথে কথা বলে জানা যায়, অস্থায়ী মন্ডপ তৈরি করে রাজবাড়ী-ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মন্দিরের পেছনে বাস মালিক সমিতির কার্যালয়। রাতে মন্দিরে পাহারার ব্যবস্থা ছিল। সকালে পাহারাদার চলে যায়। বেলা ১১টার দিকে ডেকোরেটরের লোকজন মন্দিরে সিসি ক্যামেরা লাগানো ও সাজসজ্জার কাজ করতে আসেন। এ সময় মন্দিরের সামনে থাকা কাপড় সরালে প্রতিমা ভাঙার বিষয়টি চোখে পড়ে।

মন্ডপে থাকা দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মীর চোখ, নাক, মুখ ভেঙে ফেলেছে। এছাড়া কার্তিক ও গনেশের ঘার থেকে ভাঙা দেখা গেছে।

ডেকোরেটরের শ্রমিক বিষয়টি মন্ডপ কমিটিকে জানালে তারা প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। সন্ধার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয় নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। অনেকেই ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করে দোষীদের বিচার চান। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত হন।

অনেক বছর ধরে রাজবাড়ী বাস মালিক সমিতির আয়োজনে বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে সামনে মন্ডপ করে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। এ বছর বাস মালিক সমিতির আয়োজনে ওই পূজা হচ্ছে না। এ কারনে স্থানীয়দের আয়োজনে সজ্জনকান্দা মধ্যপাড়া সর্বজনীন মন্ডপে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

সজ্জনকান্দা সর্বজনীন দু্র্গা মন্ডপের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাধন চন্দ্র দাস বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলেনি।

তবে এই পুজা মন্ডপের উদ্যোক্তা কুঞ্জন সরকার জানান, কারা ঘটনা ঘটেয়েছে বিষয়টি আমরা জানি না। এজন্য কারও প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আর এই কারনেই আমরা ঘটনা কাউকে জানাইনি। রাতের মধ্যেই প্রতিমা আমরা ঠিক করে ফেলব। এজন্য প্রতিমাশিল্পীদেরও নিয়ে এসেছি।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছা. শামীমা পারভীন জানান, ধারণা করা হচ্ছে  প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঘটেছে। বিষয়টি মন্দির কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়নি। আমাদের সোর্সের মাধ্যমে জেনে দ্রুত মন্দিরে এসেছি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আমরা শহরের প্রতিটি মন্দিরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে মন্দির কর্তৃপক্ষকে অনেকবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু এই মন্দিরে আজকে ঘটনা ঘটার পর সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুমন বিশ্বাস/অমিয়/

ময়মনসিংহ-নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৫ এএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৬ পিএম
ময়মনসিংহ-নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি। ছবি : খবরের কাগজ

ভারী বৃষ্টি না থাকা ও রোদ উঠায় শেরপুরে ধীরে ধীরে কমছে বন্যার পানি। উজান থেকে নামা এই পানির কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আর কিছু স্থানে পানি কমতে শুরু করায় ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট। অনেক জায়গাতেই পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। তবে জেলার বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে নেত্রকোনায় অতিবৃষ্টির কারণে আবার বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। আর বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন ইউনিয়নে। শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ প্রতিনিধির পাঠানো খবর। 

শেরপুরে বন্যায় নিহতরা হলেন নালিতাবাড়ীর খলিসাকুড়া এলাকার খলিলুর রহমান (৬৫), আন্ধারুপাড়া এলাকার ইদ্রিস আলী (৬৩), নিশ্চিন্তপুর কুতুবাকুড়া গ্রামের দুই ভাই আলম (১৭) ও হাতেম (৩০), বাঘবেড় বালুরচরের ওমেজা বেওয়া (৫৫), চিকনা এলাকার উজ্জ্বল (৫০), ঘোনাপাড়া এলাকার জিমি আক্তার (৮) ও নকলার গজারিয়া এলাকার আ. রাজ্জাক (৫০) ও টালকি ইউনিয়নের রাহিম (৫) পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন এক নারী।

এদিকে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলাতে পানি কমছে। কিন্তু এখনো ঘরে পানি রয়েছে শেরপুর সদরের গাজীরখামার, বাজিতখিলা ও ধলা ইউনিয়নে এবং নকলা উপজেলার নায়ারণখোলা, উরফা ইউনিয়নে। স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও বিভিন্ন দপ্তর থেকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে দুর্গম এলাকায়। তবে সব জায়গায় নৌকা না থাকায়, ত্রাণ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

শেরপুর জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টি না হলেও কোনো কোনো উপজেলায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে সকালে। এতে কোনো প্রভাব পড়েনি নদীগুলোতে। সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চলতি বন্যার কারণে জেলার ২৪২টি প্রাথমিক ও ৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন। এসব প্রতিষ্ঠানে পানিবন্দিদের উদ্ধার করে রাখা হচ্ছে এবং তাদের মাঝে ত্রাণ ও রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলার ভোগাই নদীর পানি ১৬৯ সেন্টিমিটার, চেল্লাখালী নদীর ৮৭ সেন্টিমিটার ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৫২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, এবারের বন্যায় পৌনে দুই লাখ কৃষকের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে, এতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি নানা প্রণোদনাসহ পরবর্তীতে সহযোগিতা করা হবে।

জেলা মৎস্য বিভাগে মৎস্য কর্মকর্তা প্রনব কুমার কর্মকার বলেন, ‘এবারের বন্যায় জেলার ৭ হাজার ৩০০ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে করে খামারিরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৭০ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যা যা করণীয় মৎস্য বিভাগ তা করবে।’

নেত্রকোনায় থামেনি বৃষ্টি, আবারও বাড়ছে পানি 

নেত্রকোনায় দুই দিন বৃষ্টি কমার ফলে কমতে শুরু করেছিল নদ-নদীর পানি। সোমবার রাত থেকে আবারও শুরু হয়েছে বৃষ্টি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে একটানা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে কখনো হচ্ছে বজ্রপাত। একটানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতির দিকে এগোচ্ছে। অনেক স্থানে বাড়িতে পানি উঠায় চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যার্তদের।

এ সময় সাধারণভাবে বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও তা স্থায়ী হয় না। এবার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০০-এর বেশি মৎস্য খামার ও পুকুরের মাছ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

ময়মনসিংহে পানি বাড়ায় আতঙ্কিত মানুষ

গত কয়েক দিনের বৃষ্টি আর ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট উপজেলায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা দেখা দিয়েছে পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফুলপুরেও। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। তবে সোমবার কোথাও পানি কম ছিল আবার কোথাও স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার বন্যা পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে। এদিন ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হওয়ায় এই তিন উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বৃষ্টি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

ফুলপুরের ইউএনও এ বি এম আরিফুল ইসলাম জানান, নতুন করে ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নতুন একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিনটি উপজেলায় ৩৪ হাজার পরিবারের দেড় লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ৬৩ মেট্রিক টন চাল, ৭ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হবে।’