শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে চারআলী সেতু। সেতুর নিচ থেকে বালু তোলায় পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে পিলারের পাইলিংয়ের রড বেরিয়ে এসেছে। এ ছাড়া ভেঙে গেছে সেতুর আশপাশের ব্লকও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার অভিযান চালিয়েও বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও সিলেটে যেতে হলে ভোগাই নদী পার হতে হয়। ওই নদীর ওপর ২০১১ সালে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। তখন থেকে স্থানীয়দের যাতায়াতে ভোগান্তি দূর হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভোগাই নদীর বিভিন্ন অংশ বালুমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়। বালু তোলার ক্ষেত্রে তাদের কিছু শর্ত মানতে হয়। তবে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নদী থেকে বালু তুলে যাচ্ছেন।
আরও জানা গেছে, ইজারার সুযোগ নিয়ে বালু ব্যবসায়ীরা দিন-রাত সমানতালে নির্দিষ্ট করে দেওয়া অংশের বাইরেও বালু তুলছেন। বাদ যাচ্ছে না সেতুর পিলারের কাছের অংশও। এ ছাড়া ড্রেজার মেশিনের বিকট শব্দে স্থানীয়রা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না।
স্থানীয়রা জানান, সেতুর কাছে ৪০ ফুট গভীর করে প্রতিদিন ১০-১৫টি ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদীতে বড় গর্ত তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে সেতুর গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে পিলারের রড বেরিয়ে এসেছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বালু তোলায় সেতুর পাশের ব্লকও ভেঙে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বালু তোলা বন্ধ না হলে বড় ক্ষতির শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা আকবর মিয়া বলেন, ‘ব্রিজের চারপাশ থেকে যদি এভাবে বালু তোলা হয়, তাহলে ব্রিজ কীভাবে টিকে থাকবে? এটা ব্রিজের জন্য ক্ষতিকর। ব্রিজের যদি একটা কিছু হয়ে যায়, তাহলে আমরা যারা এর ওপর দিয়ে চলাচল করি তাদের কী হবে। কারও কিছু না হলেও আমাদের চলাচলের জন্য বিরাট সমস্যা হবে। আমরা চাই, ব্রিজের নিচ থেকে বালু তোলা বন্ধ হোক।’
ফকির আলী নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘বালুটালু তুইল্লা এহেবারে বিনাস কইরা হেলাইছে। আমরা আর কী কমু। কিছু কইলেই তো আমগর ওপরে চাপ আহে। এহন বালু যদি তুলানি নাগে, তাহলে ব্রিজ থনে এল্লা দূরে তুললেই তো হয়। ব্রিজটা ভাঙি গেলেগা কত্ত বড় বিপদ হোব আমগর, জানেন আপনেরা। কষ্ট ভোগ করা নাগবো আঙ্গরেই, আনহেরা তো আর এই ব্রিজ দিয়ে যাবেন না। আমরা ব্রিজটা বাঁচানোর ব্যবস্থা কইরি দেন।’
শিক্ষার্থী শুকুর আলী বলেন, ‘কিছু বালু ব্যবসায়ী সব সময় ব্রিজের নিচ থেকে বালু তোলেন। দিনের বেলায় ড্রেজার মেশিন কম চললেও রাতের বেলায় বিকট শব্দে ঘুমাতে পারি না। তাহলে চিন্তা করেন একসঙ্গে কতগুলো মেশিন চলে। মাঝেমধ্যে ইউএনও এসে অভিযান চালান। কিছুদিন গেলে আবার আগের মতো বালু তোলা শুরু হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে বালু তোলার কারণে আমাদের ব্রিজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ব্রিজের গোড়া থেকে মাটি সরে গেছে। এখন তো পিলারের রড দেখা যাচ্ছে। পাশে থাকা ব্রিজের ব্লকও ভেঙে গেছে। এখনই বালু তোলা বন্ধ না হলে ব্রিজের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।’
নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জনউদ্যোগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এভাবে সেতুর নিচ থেকে বালু তোলা ঠিক না। কারণ একটি সেতু কিন্তু হুট করে বললেই বানানো যায় না। জেনে-বুঝে যদি কোনো ব্যবসায়ী এভাবে বালু তুলে সেতুর ক্ষতি করেন, তাহলে তো মুশকিল। আমি বলব, প্রশাসন যেন আরও কঠোর ভূমিকা পালন করে। প্রয়োজনে সব নদী থেকে বালুমহালের ইজারা বন্ধ করতে হবে।’
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা খবরের কাগজকে বলেন, চারআলী ব্রিজের এলাকাটি ইজারাবহির্ভূত জায়গা। এখান থেকে বালু তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিষয়টি বালু ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমরা ওই এলাকায় নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। আমি এখানে যোগ দেওয়ার পর থেকে ৩০ লাখ ঘনফুট বালু জব্দ করেছি। জব্দ করা বালু যেন কেউ সরাতে না পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু অনেকেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের সহায়তার চেষ্টা করছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই। যারা এই কাজগুলো করছেন, আমি তাদের বারবার নিষেধ করেছি। যারা পরবর্তী সময়ে নির্দেশনা উপেক্ষা করবেন, তারা যে-ই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনি ব্যবস্থা নেব। এই ইস্যুতে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’