‘আর্থিক দীনতার কাছে হার না মেনে তিন ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশের বুলেট আমার এক ছেলেকে কেড়ে নিল। আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় ছেলে হত্যার বিচার চাই।’ গত রবিবার সকালে বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর চানখাঁরপুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে নিহত ইশমামুল হকের মা শাহেদা বেগম।
দুই সন্তানকে নিয়ে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার দর্জিপাড়ায় বসবাস করেন শাহেদা। স্বামী মারা গেছেন আরও আট বছর আগে। তখন থেকেই সংসারে নেমে আসে অভাব। তিন সন্তানের মধ্যে ইশমামুল ছিল মেজো। বড় ছেলে মুহিবুল হক লোহাগাড়ার বারো আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এ ছাড়া ছোট ছেলে স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।
শাহেদা বেগম বলেন, ‘বছর দেড়েক আগে পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে ইশমামুল ঢাকায় যায়। চকবাজারে একটি দোকানে চাকরির পাশাপাশি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেওয়ায় নিজের জীবন দিয়ে তাকে মাশুল দিতে হলো। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আমার ছেলেটাকে হত্যা করল।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সমন্বয়ক ফরহাদ সাকিব বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হওয়ার দিনই ইশমাম গুলিবিদ্ধ হয়। দুই দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে সে হার মানে। পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করেছে। স্বৈরাচারমুক্ত আগামীর বাংলাদেশ সে দেখে যেতে পারল না। ইশমামের হত্যাকাণ্ডের মতো ছাত্র আন্দোলনের সব নিয়মবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার অবশ্যই এ বাংলার মাটিতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীরা সব সময় ইশমামের পরিবারের পাশে থাকব।’
৫ আগস্ট সোমবার রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির মিছিলে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় ইশমামুল। আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। পরদিন মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় লোহাগাড়া শাহপীর পাইলট হাইস্কুল মাঠে ইশমামের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে গ্রামের বাড়ি দর্জিপাড়ায় তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।