তরুণদের উদ্যোগে টাঙ্গাইল শহরের দেয়ালগুলো নতুন রূপ পেয়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে দেয়ালগুলো সাজানো হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, সমতা, ধর্মীয় সহনশীলতা, স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে পানি বিতরণের সময় নিহত মুগ্ধর স্মৃতি ধরে রাখতে টাঙ্গাইলের সদর উপজেলা ভূমি অফিসের দেয়ালে তার ছবি আঁকা হয়েছে। দেখে মনে হবে যেন জীবন্ত মুগ্ধ ডেকে উঠছে, ‘পানি লাগবে পানি?’
রংতুলির ছোঁয়ায় তারুণ্যের দীপ্তি ছড়াচ্ছে টাঙ্গাইল শহরে বিভিন্ন সড়ক আর অলিগলি। শিক্ষার্থীরা নোংরা দেয়াল ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে আঁকছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন চিত্র। এসব দেয়ালচিত্র দেখলে মনে হবে, মুগ্ধ মারা যাননি। এই বুঝি ডেকে বলবেন, ‘পানি লাগবে কারও, পানি’। আবার ভাববেন আবু সাঈদের কথা।
ক্ষণিকের জন্য মনে হবে এখনো আবু সাঈদ বুক পেতে দাঁড়িয়ে বলছেন, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’
শুধু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চিত্রই নই, দেয়ালে শোভা পাচ্ছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চিত্রও। এ ছাড়া এবার স্বাধীনতা রক্ষা করার পালা, স্বাধীন বাংলার স্বাধীন গান, দিয়েছি রক্ত-দিয়েছি প্রাণ, বল বীর বল উন্নত মম শির, ৫২ তো ভুলি নাই-২৪ কে ভুলব কেন, উই আর ওয়ান, রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে এনেছি বিজয়, এমন নানা প্রতিবাদী স্লোগান শোভা পাচ্ছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ দেয়ালে দেয়ালে।
অথচ কিছুদিন আগেও এসব দেয়ালে আঁকা ছিল বিভিন্ন পণ্যের বাহারি বিজ্ঞাপন। তার পরিবর্তে এখন সেখানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের রংতুলির ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্লোগানসহ দেশের বিভিন্ন চিত্র আর সমাজ সংস্কারমূলক উক্তি।
গতকাল ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ, শিকড়, উই, শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন ও কেয়ার ক্লাবসহ বিভিন্ন গ্রুপ ও ব্যক্তি উদ্যোগে শহরের বিন্দুবাসিনী বালিকা বিদ্যালয় রোড, বিন্দুবাসিনী বালক বিদ্যালয়, জেলা সদর রোড, থানার দেয়ালসহ বিভিন্ন স্থাপনায় শিক্ষার্থীদের এমন চিত্র আঁকতে দেখা গেছে।
এ সময় সরকারি সা’দত কলেজের শিক্ষার্থী সিনহা তাসনিম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন স্থাপনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, কোটা আন্দোলনসহ নানা উক্তি দিয়ে সাধারণ মানুষকে বার্তা দিচ্ছি। আমরা চাই সারা দেশের মতো টাঙ্গাইলকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতে। টাঙ্গাইলকে সুন্দরভাবে সাজাতে আমাদের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।’
শিক্ষার্থীরা যখন রংতুলির আঁচড়ে তাদের চিন্তা দেয়ালে ফুটিয়ে তুলছিলেন তখন পাশেই দাঁড়িয়ে থেকে তা দেখছিলেন আল সোহাইল বিরাজ। তিনি খবরের কাগজের প্রতিবেদককে বলেন, ‘দেয়ালে দেয়ালে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পোস্টার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল। এসব পোস্টার, ফেস্টুন অপসারণ করে সৌন্দর্য বাড়াতে দেয়ালে দেয়ালে অঙ্কন চলছে। বিভিন্ন উক্তি, স্লোগান দেখতে সুন্দর লাগছে।’
পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়ক গৌতম চন্দ্র বলেন, ‘টাঙ্গাইল শহর অপরিচ্ছন্ন ছিল। শিক্ষার্থীরা এই শহরের বিলবোর্ড, বিভিন্ন পোস্টার ও আবর্জনা পরিষ্কার করে একটি বাসযোগ্য শহরে পরিণত করেছেন। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দেয়ালে রংতুলিতে দেয়াললিখন করছেন। সেই সঙ্গে দেয়ালগুলোতে বিভিন্ন চিত্র, উক্তি, ছবি আঁকা হচ্ছে। এটি শহর সৌন্দর্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’